ইসলামী আন্দোলন : নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর দাম বেশি যে কারণে > আফতাবনগর হাট : এখনো জমেনি হাট গরুও উঠেছে কম

পরের সংবাদ

অলংকার রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনা : সঠিক নীতিমালার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : আদিকাল থেকে দেশে জুয়েলারি বা স্বর্ণ ব্যবসা ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে পরিচিত। তবে খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কুটির শিল্প থেকে বৃহৎ শিল্পে রূপান্তর হচ্ছে স্বর্ণ খাত। তাই এখন থেকে এ শিল্পে মনোযোগ দিলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় করা সম্ভব। এজন্য বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে জুয়েলারি খাতে আরোপিত শুল্ককর ও ভ্যাট হার কমানো এবং আর্থিক প্রণোদনার দাবি জানান তারা। এ খাতের দক্ষ জনশক্তিকে সংরক্ষণের পাশাপাশি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানিতে বাজার অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে চায় জুয়েলারি শিল্প। বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জুয়েলারি শিল্পে আনুমানিক ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আগামীতে এ শিল্পে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব। জুয়েলারি শিল্পে ভ্যালু এডিশন করে স্বর্ণালংকার রপ্তানি সম্ভব। দুবাই যেমন স্বর্ণ ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও এ সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনার বাস্তবায়নে জুয়েলারি শিল্পের একটি সঠিক নীতিমালার পাশাপশি জুয়েলারি শিল্পে ৩ শতাংশ ভ্যাট ও করমুক্ত সুবিধা চান সংশ্লিষ্টরা। সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ গড়তে জুয়েলারি শিল্পে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তারা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বিশাল সম্ভাবনাময় স্বর্ণ খাত। কিন্তু বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটে যে স্বর্ণের অলংকার পাওয়া যায় এর ৮০ শতাংশই বাইরের। তিনি বলেন, আমাদের স্বর্ণালংকারের যে বাজার- এটা যেন আলো ঝলমলে একটি ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে; কিন্তু সেটা মেঘে ঢেকে আছে। সেই মেঘে ঢাকা দরজাটা আমরা

খুলতে পারছি না। আমাদের এত সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর, তাকে এগিয়ে নিতে পারছি না আমাদের দেশ উপযোগী, সময় উপযোগী একটি ভালো নীতিমালার অভাবে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশের বাজারে স্বর্ণের তৈরি গহনার বেশির ভাগই বিদেশের। তিনি বলেন, ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে একজন প্যাসেঞ্জার ১০০ গ্রাম বা প্রায় সাড়ে আট ভরি করে বিদেশি অলংকার আনতে পারবেন। কিন্তু বিভিন্ন ফাঁক ফোকর দিয়ে স্বর্ণের প্রচুর গহনা দেশে ঢুকছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত শক্তভাবে মনিটরিং করা। তিনি বলেন, বিদেশে এসব গহনা বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে কিনতে হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। হিসেব অনুযায়ী, প্রতি বছর ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে শুধু ৫৪ টন স্বর্ণ আনতেই ৪৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাইরে থেকে আসা ৫৪ টন স্বর্ণের মধ্যে আমাদের দেশে ২০ থেকে ২৫ টন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে। বাকি স্বর্ণ চলে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। অনেক সময় মাদকের মাধ্যমে এসব স্বর্ণের লেনদেন হয়। তিনি বলেন, বাজুসের প্রাথমিক ধারণা- প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণালংকার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। ৩৬৫ দিন বা এক বছর শেষে এটি দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় ৮০০ কোটি ডলার। স্বর্ণের চোরাচালান বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং চোরাচালান প্রতিরোধ কার্যক্রমে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের ২৫ শতাংশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে বিতরণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)। এ ব্যবসায়ী বলেন, এগুলো নজরদারি করলে এ দেশের স্বর্ণ শিল্প আরো উপরে উঠে যেত। আমরা দেশেই অনেক ভালো অলংকার তৈরি করতে পারতাম। কর্মসংস্থান বাড়ত। ফলে রপ্তানির একটি বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হতো। স্বর্ণ নীতিমালা সম্পর্কে তিনি বলেন, নীতিমালা যারা তৈরি করে, তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে একটি সুষ্ঠু ও সঠিক নীতিমালা তৈরি হতো। ফলে স্বর্ণদুয়ার খুলে যাবে অনায়াসে।
মূলত, অলংকারের প্রতি নারীর সহজাত আকর্ষণ প্রাচীনকাল থেকেই। বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গে স্বর্ণালংকারের নানা বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই স্বর্ণের গহনা মানুষের কাছে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এটা অনেকের আভিজাত্যের এবং মর্যাদার অংশ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে ধনী-গরিব সব শ্রেণির মানুষ কমবেশি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করে। অনেকে ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ হিসেবে যতটা সম্ভব স্বর্ণের গহনা নিজের কাছে রাখতে চান। বাংলাদেশসহ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে স্বর্ণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে।
জানা গেছে, তিন হাজার বছর আগে থেকে স্বর্ণালংকার তৈরি ও ব্যবহার শুরু হয়। এরপর মোগল আমল থেকে স্বর্ণালংকারের সঙ্গে দামি রতেœর ব্যবহার শুরু হয়। ১৮ শতক থেকে গহনার আধুনিক যুগ হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে সব সময় স্বর্ণালংকারের চাহিদা ছিল। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে স্বর্ণের ভরি ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কালের বিবর্তনে স্বর্ণের দাম বেড়েছে বহুগুণ, লাখ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে স্বর্ণালংকারের ডিজাইনেও। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে স্বর্ণের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৭৪০ টন। এর মধ্যে অলংকারের চাহিদা ২ হাজার ১৮৯ দশমিক ৮ টন বা ৪৬ দশমিক ২০ শতাংশ (প্রায়)। বাংলাদেশে এর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪০ টন। বর্তমানে স্বর্ণের বাজার খুবই অস্থিতিশীল। এর ফলে স্বর্ণের দাম বেড়েছে, অপরদিকে বিক্রি কমেছে ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ। এদিকে হাতে তৈরি স্বর্ণের গহনার প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে প্রস্তুত হয়। অথচ স্বর্ণের অলংকার বিদেশে রপ্তানিতে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। প্রতিবেশী দেশ ভারত বিদেশে স্বর্ণের অলংকার রপ্তানির মাধ্যমে বেশ ভালো পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে প্রতি বছর। বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত স্বর্ণের অলংকার বিদেশে রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও সেই সম্ভাবনাকে মোটেও কাজে লাগানো হয়নি। অথচ, আমাদের এখানে যারা স্বর্ণশিল্পী বা কারিগর রয়েছেন তাদের হাতের কাজের সুনাম দুনিয়াজুড়ে। তাদের তৈরি স্বর্ণালংকার বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব। তারা শত শত বছর ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়