প্রিপেইড মিটার স্থাপনে আর্থিক লেনদেন না করার আহ্বান

আগের সংবাদ

হাটে পর্যাপ্ত গরু, দাম চড়া : কেনাবেচা আজ থেকে > শর্ত মানছেন না ইজারাদার > ট্রাক নিয়ে টানাটানি

পরের সংবাদ

নোয়াখালীতে প্রস্তুত ১৬ লাখ গবাদিপশু : পছন্দের পশু কিনতে খামারমুখী ক্রেতারা

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন নোয়াখালীর খামারি ও পশু পোষা কৃষকরা। জেলার নয়টি উপজেলার কৃষক পর্যায়ে পালন করা হচ্ছে গবাদিপশু। বিগত সময়ে কৃষক পর্যায়ের গবাদিপশু দিয়ে জেলায় কুরবানি পশুর চাহিদা না মেটায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য খামার। এবারের কুরবানিতে ক্রেতাদের সুষ্ঠু গবাদিপশু উপহার দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছেন, এবার কোরবানীর জন্য জেলায় ১৪ লাখ ৯ হাজার ৭৭০টি গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে। যার বিপরীতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৬ লাখ ৫ হাজার ৩৭৮টি গবাদিপশু। কুরবানির পশু নির্বিঘেœ করতে জেলা প্রশাসন, ব্যাপারি, ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের বৃহৎ মাংস উৎপাদনকারী গবাদিপশুর খামার সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের ‘মানফাত মিট ক্যাটেল এন্ড ডেইরি ফার্ম। খামারটি গড়ে তোলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন। তার এই খামারটি অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে জেলার বেকার যুবক ও উদ্যোক্তাদের কাছে। এই খামার থেকে দীক্ষা নিয়ে আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় খামার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উন্নত জাতের গরুর বাচ্চা এনে খামারগুলোতে স্বাস্থ্য-সম্মতভাবে মোটাতাজাকরণ করা হয়। সম্পন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে খামারে উৎপাদিত পশু চাহিদা পূরণ করছে ক্রেতাদের। শুধু মানফাত মিট ক্যাটেল এন্ড ডেইরি ফার্ম নয়, নোয়াখালী অঞলের খামার এবং কৃষক পর্যায়ে যে গবাদি পশু আছে, তাতে ভারতীয় গরুর কোন প্রয়োজন নাই। এখানকার গবাদি পশু দিয়েই কোরবানীর চাহিদা পূরণ হবে বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।
সদর উপজেলার চর উরিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, মানফাত মিট ক্যাটেল এন্ড ডেইরি ফার্মটি এই অঞ্চলের সবচে বড় গরুর খামার। এই খামার দেখে আশপাশে ছোট-বড় আরো অসংখ্য খামার গড়ে ওঠেছে। এই খামারের পরিবেশ ভালো, গরুগুলোও দেখতে অনেক সুন্দর। তাই ক্রেতাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও খামারটি দেখতে আসেন নিয়মিত। খামারের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীরা বলেছেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহিন সাহেব পাঁচ বছর আগে সাত একর পতিত জমিতে একটি শেড বানিয়ে ৫০টি গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেন। এরপর আর উনাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতি বছর দুই শতাধিক গরু বিক্রি করেন তিনি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে কুরবানির জন্য এবারো প্রস্তুত করা হয়েছে সুস্থ-সবল দুই শতাধিক পশু। কর্মচারীরা আরো বলেন, মানফাত মিট ক্যাটেল এন্ড ডেইরি ফার্ম নামের খামারটি এখন বৃহত্তর নোয়াখালীর বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে। এই খামারের সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নতুন খামারিরা।
ক্রেতারা বলেছেন, বাজারের গরুগুলো সুষ্ঠু কিনা তা বুঝা যায় না এবং বর্ষায় কাঁদা মাটিতে ঘুরে গরু দেখা খুবই কষ্টের ও ঝক্কি থাকে বেশি। আর খামারে নিরিবিলি পরিবেশে ভালোভাবে দেখে গরু কেনা যায়। এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
খামারের মালিক এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, স্বাধীনতার আগ থেকেই আমাদের পরিবার কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। আমাদের আগে বাথান ছিল, যা এখানো আছে। বর্তমানে বাথানে দেশীয় গরু, মহিষ ও ভেড়া রয়েছে। দীর্ঘদিন আমাদের দুধের গাভি ছিল। আমি সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমাদের পতিত জায়গায় বছরে একবার ধান চাষ হতো আর সারা বছর পড়ে থাকত। এর বহুমুখী ব্যবহার করার জন্য আমি খামার শুরু করেছি। গরুর পাশাপাশি মাছ ও পোল্ট্রির খামার রয়েছে এখানে। ঈদুল আজহাসহ সারা বছরে এ অঞ্চলের মানুষকে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত গরুর মাংস দিতে খামারটি করেছি।
তিনি আরো বলেন, খামারের বয়স পাঁচ বছর চলছে। যদি ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষকে সুস্থ, সবল ও সুঠাম দেহের গরু দিতে পারি, তাহলে তাদের মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি আমিও সওয়াবের অধিকারী হবো। আমি খুব লাভের চিন্তা করি না। কেননা আমিও এই সমাজের একজন। মানুষ যদি কুরবানির সময় প্রতারিত না হয়ে ভালো গরু পায়, তাহলে সবাই কমবেশি উপকৃত হবে। আমার দেখাদেখি জেলায় অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী রফিকুজ্জামান বলেন, নোয়াখালী অঞ্চল উপকূলীয় এলাকা হওয়াতে গরুর পাশাপাশি এখানে মহিষও পালন করা হয়। এতে এখানে কুরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে পশু অন্য জেলার চাহিদা মেটানো যাবে। অন্যদিকে পশুর মাংস প্রসেসিং করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী প্রস্তুত করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়