শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান

আগের সংবাদ

ভারত-আমেরিকার বৈচিত্র্যময় অংশীদারত্ব গড়ার প্রত্যয় : হোয়াইট হাউসে মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

পরের সংবাদ

রাজশাহীর বাঘা : ভিন্ন স্বাদ-বর্ণ-ঘ্রাণে ভরপুর দেড়শ প্রজাতির আম

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমের ফলন হয় বাঘায়। আমের স্বর্গরাজ্য হিসেবেই পরিচিত এ উপজেলা। আর বাঘার আম এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সবকিছুকে ছাড়িয়ে বাঘার আমের যেমন আছে নামের বাহার, তেমনি রয়েছে ভিন্ন স্বাদ, বর্ণ ও ঘ্রাণ।
বৃন্দাবনী আম রঙে যেমন, খেতেও সুস্বাদু। রসে ভরা, আঁশ নেই, স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় ক্ষিরের জালি, সন্দেশি, রমু খিরসা, গোপাললাড়–, নুরু মিঞার গুটিসহ পরিচয়হীন অনেক আম রয়েছে। তবে এসব আম বাঘায় এখন খুব কম পাওয়া যায়। সব মিলে বর্তমানে প্রায় দেড়শ জাতের আম উৎপাদন হয়। তবে অনেক আমের নামও শোনেননি এ উপজেলার বাইরের মানুষ। সূর্যডিম বা মিয়াজাকি হলো জাপানিজ আম। বিশ্ববাজারে এটি ‘রেড ম্যাংগো’ নামে পরিচিত। ‘কিং অব চাকাপাত’, থাইল্যান্ডের একটি স্থানের নামে আমের এমন নামকরণ। কলার মতো দেখতে, তাই নাম ‘ম্যাংগো ব্যানানা’। হাতির দুই পায়ের মতো ছড়িয়ে পড়া ‘ম্যাট্রোস তোতা’, আপেলসদৃশ ‘আপেল ম্যাংগো’। এসব আমও এখন চাষ হচ্ছে বাঘা উপজেলায়। আর জাতীয়ভাবে পরিচিত আমের মধ্যে রয়েছে- ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ফজলি, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, মোহনভোগ, লক্ষণভোগ (লখনা), আশ্বিনা, আড়াজাম, মিসরিভোগ, চৌষা ও কাঁচামিঠা ইত্যাদি।
আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন জাতের আরো বাহারি নামের আমের পরিচিতি পাওয়া যায়। বাউসা মিঞাপাড়া গ্রামের মাসুদ রানার বাগানে কেজি ওজনের বালিশগুটি, বাজুবাঘা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের রমু খেরসাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত হচ্ছে- জগৎমোহিনী, বারি আম-৪, বারি আম-১১, আ¤্রপালি, মল্লিকা, হাঁড়িভাঙ্গা, বোম্বাই, কার্টিমন (বারোমাসি), গৌড়মতি ছাড়াও আরো কিছু মজার মজার নামের আম রয়েছে। যেমন- বৌভুলানো, ছাতু ভিজালী, ঝিনুক, কাঁকড়ি, পাগাড়ে, ইঁদুরচাটা, বাবুইঝুঁকি, মধু চুষকা, অনামিকা, কৈদি, ধইসি, গোল্লা, জালিবাস, ঠুটি, ভুরই, খালসি, জামাইভোগ, নাজির ভোগ, দুধ সাগর, আনার কলি, আনারসী, দুধভরা, দুধ কোমর, বাতাসী, ফনিয়া, জহুরা, লাখে এক, খাজা গুটি, চিনিখোরা, চুঙ্গাভোগ, বিবি, চাপড়া, ডুকসা, হাতিম, কৃষাণভোগ, কাদুমা, বেলি, দুধসর, চেংসাই, ডকমাই, ভাদরী, নাকাবাসী, সুমাসি, দিংলি, হাতিঝোলা, কোদালকাটি, সিন্দুরটোকা, জাওনি, স্বপ্নবিভুর, বৈশাখী, কালুয়া, বিশ্বনাথ, বাঘাশাহি, বঙ্গবাসী, আষাঢ়ি, বাতাসী, ধমিয়া, মোহনঠাকুর, মেথা, ফকিন্নী, মিছরিছানা, সালাম ভোগ, মধু খালসি, পেঁপে গুটি পেপসি গুটি, সুগন্ধি গুটি, আবদুলাহ ফজলি, কালিভোগ, মধুমতী, চরুষা, চমন বাহার, সেঁদুরি, কালিভোগ, নাকফজলি, সুরমা ফজলি, জাইন্ট খিরসাপাত, চোষা, নন্দাফ্রাম, বড়গুটি, ছোটগুটি, বোম্বাই ইত্যাদি।
অতীতের ত্রিফলা, কিষান ভোগ, সূর্যপরি, চালকি, কালিভোগ, রাণী পছন্দ, কালুয়া, ধলুয়া, রাজভোগ, বগা ইত্যাদি জাতের আম এখন বিলুপ্ত প্রায়। এসবের মাঝে বিষাদের কিছু আমের নামও শোনা যায়। যেমন- খাটাশি, বিলি পাদুড়ি ইত্যাদি। দেখতে অত্যন্ত বড় হলেও স্বাদে টক হাওয়াই এটাকে খাটাশি ও বিলি পাদুড়ি বলা হয়।
জানা গেছে, নিজেদের স্মরণীয় করে রাখতে গাছ লাগানোর পর অনেকে আমের নামকরণ করতেন। এ বিষয়ে বাজুবাঘার আব্দুল হালিম জানান, তার দাদার বাবা সৈয়দ হোসেন মিঞার লাগানো বিভিন্ন জাতের আমের নাম শুনেছেন তিনি। কলমি লতা জাতের আম গাছটি লতার মতো বিস্তৃত হওয়ায় এটাকে কলমি লতা বলা হয়। দেলসাদের লাগানো গাছটির আম দেলসাদ নামেই পরিচিত। সিঁদুরি নামের আমটি মকছেদ মিঞার সিঁদুরি নামে পরিচিত।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের বাঘা উপজেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা শফিউল্লাহ্ সুলতান বলেন, ১৫২৩-১৫২৪ খিস্টাব্দে (হিজরি-৯৩০) সুলতানি আমলে নির্মিত বাঘা শাহী মসজিদের টেরাকোটায় আমের চিত্রাঙ্কন রয়েছে। তা দেখে বোঝা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই রাজশাহীর বাঘায় আমের খ্যাতি ছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়