ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

২১ জেলার ভরসাস্থল খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, কার্যক্রম চলে চার মেডিকেল অফিসারে

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাবুল আকতার, খুলনা থেকে : খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সমস্যার শেষ নেই। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার য²া বা টিবি রোগীদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। নামকরণ বক্ষব্যাধি হলেও হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগে বক্ষ সংক্রান্ত কোনো রোগের চিকিৎসা নেই। শুধুমাত্র আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত য²া বা টিবি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে মাত্র চারজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৫ সালে খুলনা নগরীর মীরেরডাঙ্গায় ৭ একর জায়গার ওপর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল নির্মিত হয়। ৫৮ বছর বয়সি হাসপাতালের ভবনটি বর্তমানে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নামমাত্র কয়েক দফা সংস্কার করা হলেও কার্যকরী বড় ধরনের কোনো সংস্কার করা হয়নি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের জরাজীর্ণ দ্বিতল ভবনের সবগুলো ওয়ার্ড ও রুমের ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। ভবনের ছাদ স্যাঁতসেঁতে হয়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। রোগীদের জন্য টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্লাড, এক্সরে, ইসিজি ছাড়া অন্য কোনো রোগের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নেই। বাকি পরীক্ষাগুলো রোগীদের বাইরে থেকে করাতে হয়। যা গরিব রোগীদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। এসব কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিতে অনীহা বাড়ছে। ফলে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যাও কমছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে মাত্র ৩০ জন য²া রোগী। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও সহকারীদের ১৮৪ মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে জনবল আছে মাত্র ১২২ জন। শূন্য রয়েছে ৬২টি পদ। এর মধ্যে দুজন বিশেষজ্ঞসহ ১১ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়কসহ পাঁচ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। তবে, মাত্র চারজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। হাসপাতালে নার্সের পদ রয়েছে ১১৪টি। সেখানে কর্মরত রয়েছেন ৯৩ জন। ২ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, ২ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ১ জন প্যাথলজিস্ট, ১ জন রেডিওলজিস্ট, ১৬ জন সহকারী সেবক/সেবিকা, ১৬ জন অফিস সহায়ক, ৩ জন কুকার, ১২ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ শূন্য রয়েছে। কুকার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। হাসপাতালটিতে তিন বেলা খাবারের জন্য রোগী প্রতি সরকারি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা; যা একজন রোগীর জন্য পর্যাপ্ত নয়। রোগীরা চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমার সবাই এখানে য²া রোগে আক্রান্ত। ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত আমাদের এই হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। অথচ আমরা ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাই না। ডাক্তাররা ৩ থেকে ৪ দিন পরে একদিন আসে। নার্সদের ডাকলেও আসতে চায় না। তারা বসে বসে গল্প করে সময় পার করে। যে কারণে রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ।
খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে শুধুমাত্র ভর্তিকৃত রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ৬ মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া হয়। আর ভর্তি যোগ্য নয় এমন রোগীদের দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেই। তবে বহির্বিভাগে রোগী দেখার ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ওষুধ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি জানান, জরাজীর্ণ ভবন এবং পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল এবং গণপূর্ত থেকে চলতি বছরের শুরুতে দুটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, ‘বক্ষব্যাধি এই হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেয়ার ক্ষমতাও আমাদের নেই। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিয়ত অবহিত করা হচ্ছে। নতুন করে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বাকি শূন্য পদগুলো পূরণ করা সম্ভব না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়