ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

পঞ্চগড়ের সমতলের চা অঞ্চল : দাম না পেয়ে বাগান কেটে অন্য আবাদের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ রায়হান চৌধূরী রকি, পঞ্চগড় থেকে : পঞ্চগড়সহ উত্তরের কয়েকটি জেলা নিয়ে গঠিত সমতলের চা অঞ্চল নতুন করে চা উৎপাদনে রেকর্ড গড়লেও আশা ভঙ্গ হচ্ছে চা চাষিদের। ক্রমাগতভাবে সবুজ চা পাতার দাম কমে যাওয়ায় দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে চা বাগান মালিকদের। কমিটি নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক কম দামে চা কারখানায় সবুজ পাতা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এছাড়া মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ পাতা কর্তন। এতে করে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও উঠাতে পারছেন না তারা। ইতোমধ্যে অনেক চা বাগান মালিক তাদের চা বাগান কেটে অন্য কিছু আবাদ করার পরিকল্পনা করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে উত্তরের সম্ভাবনায় চা শিল্প চিনি শিল্পের অবস্থায় পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা চা চাষিদের। ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাড়তে থাকে চা আবাদি জমির পরিমাণ। এরপর থেকে আশপাশের জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরে ছড়িয়ে পড়ে সমতলের চা চাষ। দেশে চা উৎপাদনে দেখা দেয় নতুন সম্ভাবনা। প্রতি বছরই চা উৎপাদনে রেকর্ড করতে থাকে এই চা অঞ্চল। গত বছর সমতলের এই চা অঞ্চল থেকে রেকর্ড এক কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। যা জাতীয় চা উৎপাদনের ১৯ শতাংশ। চা বোর্ডের হিসাবে এই অঞ্চলে প্রায় ১৩ হাজার একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু পঞ্চগড়েই রয়েছে ১০ হাজার একরেরও বেশি চা বাগান। বড় বাগানের পাশাপাশি এখানে ক্ষুদ্র চা চাষির সংখ্যাও ১০ হাজারের বেশি।
আজ থেকে পাঁচ বছর আগে চা কারখানা কম থাকলেও চা বাগান মালিকরা প্রতিকেজি সবুজ পাতা বিক্রি করতে পারতো ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত। সার, কীটনাশকসহ মজুরি বৃদ্ধির কারণে এবং প্রচণ্ড খড়ায় সেচ দেয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও সবুজ পাতার দাম নি¤œমূখী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবুজ পাতার দাম বৃদ্ধির কথা থাকলেও এখন সেই সবুজ পাতা বিক্রি হচ্ছে সর্বনি¤œ দরে। চা বাগান মালিকদের দাবি, চা কারখানাগুলো কাঁচা চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটির নির্ধারিত ১৮ টাকা কেজি দরে পাতা না নিয়ে বর্তমানে ১৩ থেকে ১৪ টাকা দরে কাঁচা চা পাতা কিনছে। এখানেই শেষ নয়, বড় আকারের চা পাতা আনার অজুহাতে শতকরা ৩০-৪০ শতাংশ কেটে রাখছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ একশ কেজি কাঁচা চা পাতা এনে চা বাগান মালিকরা ছয়শ থেকে সাতশ কেজির দাম পাচ্ছেন। এতে করে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার দাম পড়ে ১০ টাকারও কম। অথচ এক কেজি কাঁচা চা পাতা উত্তোলনসহ উৎপাদন খরচ পড়ে ১৫-১৬ টাকা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন চা বাগান মালিকরা। চা কারখানা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাঁচা চা পাতার মূল্য বাড়ার কথা থাকলেও সিন্ডিকেট করে সব কারখানা একই দামে পাতা কিনছেন-দাবি চা বাগান মালিকদের। এ অবস্থায় অনেক চা বাগান মালিক কেটে ফেলছেন চা গাছ। তবে আগের মতোই খোড়া যুক্তি দেখাচ্ছেন কারখানা মালিকরা। তারা বলছেন কাঁচা চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি বাগান থেকে চার পাতার কচি চা আনার নির্দেশনা দিলেও বাগান মালিকরা তার চেয়েও দ্বিগুন বা তারও বেশি কাণ্ডসহ ভেজা পাতা আনায় চায়ের মান খারাপ হচ্ছে। নিলাম মার্কেটে তারা সর্বনি¤œ দরে চা পাতা বিক্রি করার নির্ধারিত দামে তারা পাতা কিনতে পারছেন না।
তেঁতুলিয়ার চা চাষি ইউসুফ আলী বলেন, প্রতিবছর বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। আগের চেয়ে বেশি করে কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। সারের দামও অনেক বেড়ে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চা বাগানে সেচ দিতে হচ্ছে। এক কেজি কাঁচা চা পাতা তুলতে শ্রমিকদের দিতে হয় ৩ টাকা। ধার- দেনা আর এনজিওর ঋণ নিয়ে চা বাগানে বিনিয়োগ করেছি। সার-কীটনাশকের দোকানে অনেক টাকা বাকি। আর পারছি না। আর কতো লোকসান গুনব। তাই বাধ্য হয়ে চা বাগান কেটে ফেলছি। এই জমিতে অন্য আবাদ করলেও বছরে অনেক টাকা পাব। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন চা চাষিদের হতাশার কথা স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তিনি সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরো বলেন, চায়ের মান বাড়াতে চা বাগান মালিক ও কারখানা মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। চা চাষিরা যেন ছোট আকারের পাতা কারখানায় আনে সে ব্যাপারে আমরা তাদের উদ্ধুদ্ধ করছি।

কারখানা মালিকদের বলেছি ছোট পাতা আনলে নির্ধারিত দামেই যেন তারা পাতা কিনেন। চায়ের মান বাড়াতে পারলে নিলাম মার্কেটে ভালো দাম পেলে কারখানা মালিকরাও বেশি দামে পাতা কিনতে পারবে। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বিষয়টি অবগত রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি পঞ্চগড়ে এসে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক ও কাঁচা চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি জহুরুল হক বলেন, সভা ডেকে চা বাগান মালিকদের সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা হবে। তিনি আরো বলেন, পঞ্চগড়ে চা নিলাম মার্কেট চালু হলে এর সুফল চা চাষিরা পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়