ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

দালাল ছাড়া মেলে না কোনো সেবা : হয়রানির অপর নাম মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ থেকে : কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নীরব ইশারায় মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দীর্ঘদিন ধরে দালালচক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে দিলে কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায় নির্ধারিত তারিখের আগেও। আর সরাসরি অফিসে পাসপোর্ট করতে গেলে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় ভোগান্তি আর হয়রানি কাকে বলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই দালাল চক্র। পাসপোর্ট অফিসের সামনে থেকে শুরু করে বেউথা খাদ্যগুদাম পর্যন্ত রয়েছে অনেকগুলো ফটোকপির দোকান। এই দোকানগুলোকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে অফিসের ইন্ধনে দালালচক্র তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। পত্রিকায় কিংবা ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় এ বিষয়ে মাঝেমধ্যে সংবাদ প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষ একটু সজাগ হন। দালালচক্র দু-একদিন একটু নিরব থাকেন। কয়েকদিন পরই তারা ফিরে যান তাদের আগের কর্মকাণ্ডে।
সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফটোকপির দোকানদার আবু রায়হান জামান, সোহেল রানা, সুমন আহমেদ, রনি, আরিফ, জনি, সুজন, শুভ, শাহজাহান, রাসেল, আশিক, মিঠু, সবুজ, কাজল এবং সরকারি দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি সানোয়ার ও শরীফসহ অসংখ্য দালাল অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের পাসপোর্ট বানিয়ে দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন জানান, পাসপোর্ট অফিসের উচ্চমান সহকারী ফজলেন্দার টুকটুকি, অফিস সহায়ক মো.কাউসারসহ একাধিক ব্যক্তি দালালদের সঙ্গে গোপনে লেনদেন করে থাকেন। আর এই টাকার হিসাব রাখেন সহকারী হিসাব রক্ষক তরিকুল ইসলাম।
পাসপোর্ট অফিসের দালাল আবু রায়হান বলেন, আমার এখানে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আসলে আমি কাজ করে দেই। কিন্তু আমি কারো কাছ থেকে জোর করে কোনো কাজ নেই না। ১০ বছর মেয়াদের পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও অফিসের ঘুষের টাকাসহ আমি সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেই। আমাকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিলে সব দায়দায়িত্ব আমার। সেবা গ্রহীতা শুধু ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে যাবে এবং তারিখ অনুযায়ী এসে আমার কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে যাবে।
অপর দালাল সোহেল রানা বলেন, সরাসরি পাসপোর্ট করতে গেলে বই পেতে দেরি হবে। আর আমাদের মাধ্যমে করালে তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। অফিসের ঘুষ আর পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ আমাকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিলে আমি কাজ করে দিতে পারব। পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং পাসপোর্ট অফিসে নাকি বাড়তি কোনো টাকা লাগে না এমন প্রশ্নে তিনি নাক ছিটকিয়ে বলেন, আপনি পাগল হইছেন? অফিসে চ্যানেলে না গেলে আপনাকে হয়রানি করবেই। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে গেলে আপনাকে ঘুরাবে। আর আমাদের মাধ্যমে অফিসে টাকা দিলে নগদেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
সিংগাইর থেকে আগত দুই সেবা গ্রহীতা বলেন, আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য আজ তিনদিন ধরে ঘুরছি। আজকেও নাকি অফিসের বড় স্যার নাই। আমাদের দুদিন পর আসতে বললেন। এরা সরাসরি না বললেও এদের ব্যবহারে বোঝা যায়, আমরা যেন অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট বানাই। দৌলতপুর থেকে আগত মো. হৃদয় মিয়া ও সহিম মিয়া বলেন, আজ ৪ দিন ধরে এই অফিসে ঘুরছি। আজ এখান থেকে আমাদের বলছে, কম্পিউটারে নাকি ড্যাটা পাওয়া যাচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে আজও ঘুরে যাচ্ছি।
বেউথা এলাকার সেবা গ্রহিতা মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, আজ আমার পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার কথা। অফিসের কম্পিউটারে চেক করে আমাকে বলা হয়, আমার পাসপোর্ট নাকি এখনো ঢাকায় পাঠানো হয়নি।
মানিকগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাহিদ নেওয়াজ দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, কেউ যদি অফিসের বাইরে দালালের সঙ্গে লেনদেন করে থাকেন সেটা তাদের বিষয়। কোনো সেবা গ্রহীতা যদি আমাদের অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ করে থাকেন, তবে তাদের আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। আমার অফিস সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মোবাইলে এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়