যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে নজীরবিহীন নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ : ছয় হাজার ছাত্রের জন্য ৪২ আসনের জরাজীর্ণ ছাত্রাবাস!

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুভ সরকার, নড়াইল থেকে : দেশে প্রথম যে ৭টি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যে পঞ্চম নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ। হিসাব অনুযায়ী ১৩৭ বছরের প্রাচীন কলেজ এটি। এ কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ১১ হাজার। যার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা অন্তত ছয় হাজার। আর এই ৬ হাজার ছাত্রের জন্য বরাদ্দ আছে মাত্র ৪২ আসনের (সিট) জরাজীর্ণ একটি দোতলা ছাত্রাবাস। প্রাচীন এই কলেজের ভবনসহ অবকাঠামোর কিছু উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ছাত্রাবাসে। জরাজীর্ণ এ ছাত্রাবাসটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্র। বাকিরা উপায় না পেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছে। অনেকে আবার বাসা ভাড়ার খচর যোগাতে না পেরে প্রতিদিন ২৫-৩০ কিলোমিটার দূর থেকে বাসে অথবা সাইকেলে এসে কলেজ করছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কলেজের লাগোয়া পশ্চিম পাশে কুড়ির ডোপ মাঠের উত্তর পাশে জরাজীর্ণ দোতলা বিশিষ্ট এ ছাত্রাবাসের অবস্থান। সেখানে গিয়ে দেখা গেল ছাত্রাবাসের বাইরে খোলা জায়গায় একটি ট্যাপে (লাইনের পানি) সিরিয়াল দিয়ে গোসল করছেন কয়েক জন ছাত্র। কথা হলে তারা জানান, ছাত্রাবাসে যে ওয়াশ রুম আছে সেখানে পানির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে কয়েক বছর ধরে এভাবেই খোলা আকাশের নিচে তারা গোসল করে আসছেন। অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল আলম জানান, ছাত্রাবাসের বাইরে যে টিন সেডের ডাইনিং রুম আছে সেখানে বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। তখন সেখানে রান্না করা যায়না। হোটেল থেকে খাবার না আনলে খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আরেক ছাত্র রহমান হোসেন বলেন, এখানে যে বাথরুম আছে সেই বাথরুমে কোনো সুস্থ মানুষ যেতে পারেনা। বেশির ভাগ সময় তারা পাশের বিভিন্ন মেসে গিয়ে বাথরুম সেরে আসেন।
দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আসলাম বলেন, ডাইনিং রুমের জানালা দরজা ভাঙা, অবাধে কুকুর ঘোরাফেরা করে সেখানে।
ছাত্রাবাসের ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, নিচ তলার বারান্দার বেশির ভাগ গ্রিল ভেঙে গেছে, ভবনের বেশির ভাগ রুমের ইটবালি ভেঙে পড়ছে। ২য় বর্ষের ছাত্র মো. রিপন বলেন, রাতে যখন বেডে যান আতঙ্কে ঘুম আসেনা। প্রতিনিয়ত দেয়াল এবং ছাদের টুকরা ঝরে পড়ে। ১ম বর্ষের ছাত্র আজিম মোল্ল্যা বলেন, এখানে যারা থাকে তারা সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকে। মো. আশিক জানায়, এমন অসাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা খুবই কষ্টকর। এখানে ডাইনিং এর সমস্যা, বাথরুম এর সমস্যা, পানির সমস্যা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এত কষ্ট করে থেকে পড়ালেখায় মন দেয়া খুবই কষ্টকর।
ছাত্ররা জানান, এই ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ধরেছে অন্তত ১৫ বছর আগে, টয়লেটগুলো নোংরা, ভবনের বাইরে একটি ছোট রান্না করার ঘর থাকলেও বৃষ্টি হলে সেই ঘরে রান্না করা যায় না। অযতœ আর অবহেলায় এখানে ছাত্ররা থাকলেও তার সমাধানে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। ছাত্রদের নিজ উদ্যোগেই বড় কোনো মেসের মতো চলছে একমাত্র ছাত্রাবাসটি। সিটের অভাবে দূরদূরান্ত থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের মেসেই (ব্যক্তিগত বাসাভাড়া করে) থাকতে হয়।
কলেজের শিক্ষার্থী রতন বোস বলেন, ভবনের দেয়ালের রং খসে পড়েছে অনেক আগেই, পরিচ্ছন্ন কর্মীর অভাবে বাথরুম নোংরা, চারদিক অপরিষ্কার ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসের। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এখানকার ডাইনিং রুমের। এখানে বসে খাবার খাওয়ার কোনো পরিবেশই নাই, ছোট্ট একটি রুমের টিনের চাল দিয়ে বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে পানি পড়ে, জ্বালানি কাঠ ভিজে গেলে সেদিন আর রান্না হয় না, না খেয়েই কাটাতে হয় শিক্ষার্থীদের।
ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সায়েম আলী ছাত্রাবাসে থাকার মতো অবস্থা নেই স্বীকার করে বলেন, ছাত্রদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রবিউল ইসলাম ছাত্রদের আবাসন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, এখানে অন্তত ১৫০০ ছাত্রের আবাসিকের জন্য একাধিক ভবন নির্মাণ করা জরুরি। নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ করার জন্য ওপর মহলে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়