যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে নজীরবিহীন নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

দুঃসময় পেরিয়ে দুর্দান্ত ফর্মে শান্ত

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই টাইগার ভক্তদের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরই যেন তিনি ডুবে গিয়েছিলেন ছন্দহীনতার অতল সাগরে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট; সব সংস্করণের ক্রিকেটেই শান্ত ধারাবাহিকভাবে খারাপ পারফরম্যান্স চালিয়ে যান। সেই সময়টাকে ধরা যায় তার ক্যারিয়ারের কালো অধ্যায়।
বর্তমানে নাজমুল হোসেন শান্ত বাংলাদেশ দলের অন্যতম এক ভরসার নাম। নিজের নামের পাশে ব্যর্থতার যে ট্যাগ ছিল, সেটা কাটিয়ে তিনি ছুটছেন স্বপ্নের দিকে। সাম্প্রতিক সময়টা দারুণভাবে কাটাচ্ছেন তিনি। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই তিনি রান করে দলের জয়ের পথে বড় ভূমিকা পালন করছেন। গত মে মাসের পর থেকে এখন পর্যন্ত তার নামের পাশে নতুন করে যুক্ত হয়েছে তিনটি শত রান। এর মধ্যে সম্প্রতি শেষ হওয়া আফগান টেস্টেই রয়েছে দুটি সেঞ্চুরি। তাও আবার দুই ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে শান্ত এই কীর্তি গড়েন। এর আগে ২০১৮ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল হক। গত শনিবার শেষ হওয়া আফগান টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন শান্ত।
মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬ রানে এক উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেখান থেকে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেন তিনি। সাদা পোশাকের ম্যাচে সাধারণত ব্যাটাররা রয়েসয়ে ব্যাটিং করেন। এতে দীর্ঘ সময় ধরে ইনিংস টিকলেও রানের সংগ্রহ খুব একটা বড় হয় না। ধারাবাহিকতার বাইরে গিয়ে সেদিন শান্ত শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে দলের রানরেট ঊর্ধ্বমুখী করেন। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই উভয় ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়তে পেরেছিল বাংলাদেশ। শান্তর দুটি ইনিংসের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ আধুনিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় জয় পাওয়ার রেকর্ড গড়তে পেরেছে। তবে টাইগার শিবিরের বোলাদেরও এই রেকর্ড গড়ার পথে বিশেষ অবদান রয়েছে। তারপরও শান্ত যদি বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ এত বড় করার পথে সহায়তা না করতেন, তাহলে বোলারদের কল্যাণে জয় পেলেও রেকর্ড গড়তে পারতেন না লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শান্তর খেলা ১৪৬ রানের প্রথম ইনিংস সাজানো ছিল ২৩টি চার ও ২টি ছক্কার সমন্বয়ে। এই আগ্রাসী ইনিংসও টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরল।
দ্বিতীয় ইনিংসেও শান্ত অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। ১৫১ বলে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ১২৪ রান। ইনিংসে ১৫টি চার হাঁকিয়েছিলেন তিনি। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এ নিয়ে তিনটি ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন শান্ত। তার মধ্যে সবকটিই ২০২৩ সালে। গত মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথমবার ম্যাচসেরা হয়েছিলেন শান্ত। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ১১৭ রান করে হন দ্বিতীয়বার ম্যাচসেরা। আইরিশদের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে শান্তর খেলা এই ইনিংসে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। এর আগে আইরিশদের বিপক্ষেই ঘরের মাঠে নিজের সর্বোচ্চ ৭৩ রানের ইনিংসটি খেলেন শান্ত। সেটিও তিনি খেলেছেন চলতি বছরেই। তাতে বলাই যায়, চলতি বছরে তার কালো অধ্যায় কেটে গেছে। ২০২৩ সাল এখন পর্যন্ত নাজমুল হোসেন শান্তর সফলতম বছর।
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে শান্ত এ বছর বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার। সব সংস্করণের ক্রিকেট মিলিয়ে ১৭ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে মোট ৮৪৩ রান যোগ হয়েছে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে। এর মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি এ বছর করেছেন ৪০৫ রান, টেস্টে ২৭৪ রান এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে করেছেন ১৬৪ রান। চলতি বছরে বাংলাদেশ দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬০৮ রান করেছেন মুশফিকুর রহিম।
এর আগে চলতি বছরে বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগেও শান্ত ব্যাট হাতে আগুন ঝরানো পারফরম্যান্স দেখান। বিপিএলের সর্বশেষ আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন তিনি। সিলেট স্ট্রইকার্সের হয়ে শান্ত প্রথম ম্যাচে ৪১ বলে তিন চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংস গড়েন। পরের ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষেও ৫টি চার এবং ১টি ছক্কা হাঁকিয়ে এই ব্যাটার গড়েন ৪৮ রানের ইনিংস। নবম আসরে দলের চতুর্থ ম্যাচে তিনি বিপিএলে প্রথম ফিফটির দেখা পান। সেই ম্যাচে শান্ত ৩৯ বলে ৫৭ রানের ইনিংস গড়ে সাজঘরে ফিরে যান। ইনিংসটিতে তিনি ৭টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। পরের দুই ম্যাচে ফের খেই হারালেও তিনি দলের সপ্তম ম্যাচে পুনরায় জ¦লে উঠেন। গড়েন ৬৬ বলে ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। ইনিংসটি গড়তে ১১টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। এমন সফলতা ও ব্যর্থতা মিলিয়ে বিপিএলের নবম আসরে মোট ১৫টি ইনিংস আছে তার। অধিকাংশ ম্যাচেই তিনি দলকে ভালো কিছুই উপহার দিয়েছেন। আসর শেষে মোট ৫১৬ রান সংগ্রহ করে রানার্স আপ দলের হয়েও ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শান্তর ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৬ সালে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নিউজিল্যান্ড সফরের পূর্বে দলকে অস্ট্রেলিয়ায় ট্রেনিং ক্যাম্পে নেয়া হয়। সেই ক্যাম্পের জন্য ২২ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াডে স্থান পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি টেস্টে খেলায় তার অভিষেক হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর ২০১৮ সালের আগস্টে তাকে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি নেয়ার লক্ষ্যে গঠিত ৩১ সদস্যের প্রাথমিক দলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই বছরের শেষ দিকেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দলের হয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে এসিসি উদীয়মান বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডেও ছিলেন তিনি। এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ দল থেকে ছিটকে গেলেও ২০১৯-২০ মৌসুমে বাংলাদেশের একটি ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য ফের দলে ডাক পান শান্ত। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।

:: শাহাদাত হোসেন কিফাত

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়