মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম শুরু আজ

আগের সংবাদ

ভূ-রাজনীতির নতুন ক্ষেত্র ‘ব্রিকস’ : যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা

পরের সংবাদ

ভিসানীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিদেশি বিভিন্ন এজেন্ট এবং দেশীয় রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে বাংলাদেশে অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় তারা এখন বিদেশি বিভিন্ন দূতাবাসে দৌড়ঝাঁপ করছে। এমন সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি ভিসানীতির ঘোষণা করেছে, যাতে বলা আছে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধার সৃষ্টি করবে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য বিবেচিত হবেন না। বিষয়টি সাধারণ নাগরিকদের ভিসার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব না পড়লেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তেমন একটা আমলে নিচ্ছে না, তারা চাইছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন। ফলে এটা নিয়ে বিএনপিও বর্তমানে বেকায়দায় আছে। মূলত মার্কিন ভিসানীতি বা স্যাংশন শুধু বাংলাদেশে নয়, এটা অনেক দেশেই মার্কিনিরা দিয়ে রেখেছে বিভিন্ন কারণে, তার মধ্যে অন্যতম দেশ হচ্ছে আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমার। মিয়ানমারে যুগ যুগ ধরে সেনাশাসনই চলে আসছে এবং তাদের দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের তারা যুগ যুগ ধরে অত্যাচার করে আসছে এবং কয়েক বছর আগে প্রায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এত বছর কেটে যাওয়ার পরও মিয়ানমার তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের এখনো ফিরিয়ে নিচ্ছে না- এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হলেও মিয়ানমারকে কেউ কিছু করতে পারেনি, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, অনেক স্যাংশনও দিয়েছে, যা এখনো চলমান আছে। তাতে মিয়ানমারের কেশাগ্র ছিঁড়তে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুধু মিয়ানমারে নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন স্যাংশন রাশিয়া, তুরস্ক, সিরিয়াসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশে প্রচলিত আছে। এর বাইরে বিশ্বের অন্যতম বহুজাতিক দেশ ভারত কখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাকে পাত্তা দেয়নি। সাম্প্রতিক রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু ভারত তাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেদার তেল আমদানি করে চলেছে তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছুই করার নেই। কারণ কৌশলগত দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দেশ চীনের অবস্থান।
আর চীন বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতিতে এমনভাবে এগিয়ে গেছে যে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ এখন তাদের সমীহ করে চলে। ফলে চীন-ভারত এক হয়ে পথ চলুক এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনই চাইবে না। ফলে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটুক এটা তাদের বিশ্লেষকরা সহজে চাইবে না। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষিত হওয়ার পরপর বিএনপির শিবিরে উচ্ছ¡াস দেখা গেলেও ভিসানীতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে না বোধক অবস্থানের কারণে তারা একটু চুপসে গেছে।
কারণ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলন তা নিয়ে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তেমন আশ্বাস পায়নি। যদিওবা তারা এখনো তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে বর্তমান সরকার এ বিষয়ে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। তবে কয়েক দিন থেকে রাজনীতিতে বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। এমনটি হলে উভয় দল আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের বিষয়টি ঠিক করে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে বিএনপিরই লাভ হবে বেশি কারণ তারা দীর্ঘদিন পর নির্বাচনে তাদের জনপ্রিয়তা দেখাতে পারবে। আর যদি নির্বাচনে কারচুপি হয় তাহলে তা বিশ্বমিডিয়াকে বলতে পারবে। তখন নির্বাচন বিষয়ে কথা বলার অসংখ্য কারণ থাকবে এবং আন্দোলন করারও যথেষ্ট কারণ খুঁজে পাবে। এবার নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির জন্য খুব একটা সুখকর হবে না। আমরা চাই না বিএনপির মতো বড় দল শুধু মার্কিন ভিসানীতির ওপর ভর করে নির্বাচনে না গিয়ে একটি বড় ধরনের ভুল করুক। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনো তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারবে না, কারণ তাদের প্রতিপক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির মাঠে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খুব জাঁদরেল এবং মেধাবি রাজনীতিবিদ। তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অনেক দেশই সমীহ করে চলে শুধু তার মেধাবি সিদ্ধান্তের কারণে। তাই বিএনপিকে এসব বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। বিদেশিদের চাপের মুখে শেখ হাসিনা নতি স্বীকার করার মতো পাত্র নন, ফলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভুল কিছু ভাবলে বিএনপি এবার বেশ ভুল করবে।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়