জিএম কাদের : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সাংবাদিকতা অনিরাপদ

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে লিটনকে টেক্কা দেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই

পরের সংবাদ

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রধান লক্ষ্য

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হারে অস্থিরতা, চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে না পারা, জ্বালানি সংকটে ব্যাহত উৎপাদন, বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দাবস্থা, চাপের মুখে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত- এমন নানামুখী সংকটে দেশের অর্থনীতি। সঙ্গে আছে আইএমএফের শর্ত পরিপালনের তাগিদ। এসব বাস্তবতার মধ্যেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতির কাঠামোতে এবার বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন থেকে রিজার্ভ মানির মাধ্যমে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো-কমানোর পরিবর্তে ‘সুদহার করিডোর’ ব্যবস্থায় মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে এখনকার মতো আর ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা থাকবে না। এমন সব বিষয় যুক্ত করে আজ রবিবার বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলেনের মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) ‘মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস)’ প্রকাশ করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এটি হবে তার দ্বিতীয় ঘোষিত মুদ্রানীতি। অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নরসহ বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা, চিফ ইকোনমিস্ট, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া প্রয়োজন। এ জন্য মুদ্রানীতিতে উদ্যোগ থাকা দরকার। সরকারি ঋণের বিষয়েও দিকনির্দেশনা থাকতে হবে মুদ্রানীতিতে। তবে নির্বাচনের বছরে সুদের হার এবং বিনিময় ব্যবস্থা কতটা বাজারভিত্তিক করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।
অর্থনীতিবিদরা জানান, এবারের মুদ্রানীতি প্রণয়ন বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কী পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটিই দেখার বিষয়। যদিও তারা মনে করেন, আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের কিছুটা প্রতিফলন থাকলেও বাকিটা হবে বাজেটকে সহায়তা করা। আইএমএফের শর্ত পূরণে আর্থিক খাতের সংস্কারের পাশাপাশি খেলাপি ঋণ

কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য মুদ্রানীতির চেয়ে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
র?্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ মূল্যস্ফীতির সময় সুদের হার কিছুটা বাড়িয়ে খানিকটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করব। এরপর বাজেট ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিয়ে দেখতে হবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা যায় কিনা। তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কাজেই মনিটারি পলিসিতে কী দিকনির্দেশনা থাকে সেটাও দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক ঋণে বিদ্যমান ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। যার ফলে ব্যাংকের সুদহার বাড়বে। মুদ্রানীতিতে নতুন সুদহার ব্যবস্থার কথা জানানো হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী ৬ মাস ঋণ প্রবাহে সতর্কতার সঙ্গে থাকবে সুদহার বাড়ানোর কৌশল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করা। স¤প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার অথবা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। তবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বাস্তবতায় সুদহার পুরো বাজারভিত্তিক করলে তার সম্ভাব্য চাপ সামাল দেয়া কঠিন, বিষয়টি আইএমএফকে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আবুল বশর বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দেয়া হবে। মুদ্রানীতিতে মুদ্রার একক বিনিময় হার চালুর বিষয় তুলে ধরা হবে। এছাড়া সুদহার নিয়ে নতুন ঘোষণা আসবে, এখন যে ৯ শতাংশের ক্যাব দেয়া আছে তা তুলে দিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নেয়া হবে। তবে এটা কত হবে তা মুদ্রানীতিতে গভর্নর তুলে ধরবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন সুদহার ব্যবস্থা হলো ‘স্মার্ট’ তথা শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট। ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর বা সীমা দেয়া থাকবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মানে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ শতাংশের আশপাশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ২ জুন বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ), প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স), বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি বিষয়ে নতুন মুদ্রানীতিতে পদক্ষেপ থাকবে।
মূলত, বাজারে মুদ্রা সরবরাহবিষয়ক নীতিই মুদ্রানীতি। বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার (যে সুদহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়) কমিয়ে দেয়। এতে টাকা সস্তা হয়, ঋণ বাড়ে, মানুষের হাতে বাড়তি টাকা আসে। আবার বাজারে অর্থের সরবরাহ কমাতে চাইলে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুটি কাজই করা হয় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়লে চাহিদা বাড়ে, এতে পণ্যের দাম বাড়ে, আবার অর্থের প্রবাহ কমলে পণ্যের দাম কমে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ও ডলারের দর ১০৪ টাকায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট- এই দুই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯৪, যা ১১ বছর ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা শুরু হলেও এতে এখন বেশি প্রভাব ফেলছে ডলারের দাম।
গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে এসেছে। এছাড়া দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে।
এদিকে, ডলার সংকট এখন অর্থনীতিতে একটি বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের জন্য কয়লা আনার বিষয়টি ডলারের সঙ্গে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত। নতুন মুদ্রানীতিতে ডলার নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা থাকবে বলে সূত্রে জানা গেছে। আইএমএফ সঙ্গে অন্যতম শর্ত হচ্ছে, সুদহার ও ডলারের দাম বাজারভিত্তিক চালু করতে হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সব ক্ষেত্রে একটি দর চালু করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এছাড়াও আইএমএফের শর্ত ছিল, রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব বেশ কিছু আইটেমের বাইরে থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে- রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণ বাবদ অর্থ বাদ দিতে হবে। যে কারণে নতুন মুদ্রানীতিতে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক রিজার্ভ দেখানো হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়