জিএম কাদের : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সাংবাদিকতা অনিরাপদ

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে লিটনকে টেক্কা দেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই

পরের সংবাদ

রাঙ্গামাটিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ : ১০ দিনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীসহ ৪ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নন্দন দেবনাথ, রাঙ্গামাটি থেকে : প্রচণ্ড গরম ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ১০ দিনের ব্যবধানে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকে বেটলিংয়ে আবারো ডায়রিয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে তাদের মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় মেম্বার বন বিহারী চাকমা নিশ্চিত করেন। মৃত স্বামী- স্ত্রীর নাম বাহন ত্রিপুরা (৫৫) ও মেলাতি ত্রিপুরা (৫০)। এ নিয়ে ১০ দিনের ব্যবধানে রাঙ্গামাটির সাজেকের শিয়ালদহ, ব্যাটলিং, রায়না পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মোট ৪ জনের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া এলাকায় আরো অর্ধ শতাধিক আক্রান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বন বিহারী চাকমা জানান, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম লংথিয়ান পাড়াসহ বেশ কয়েকটি পাড়ায় গত ১ মাস ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। গত ৭ জুন দুই জনের মৃত্যু হলে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য বিভাগ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। কিন্তু গত দুদিন ধরে আবারো প্রকোপ দেখা দিলে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মৃত্যু ঘটে। তিনি জানান বাহন ত্রিপুরার বাড়ি সাজেকের বেটলিংয়ে। তারা লংথিয়ান পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মেয়ের জামাইকে দেখতে এসেছিলেন।
এর আগে গত ৭ জুন বুধবার ভোর রাতে গবতি বালা ত্রিপুরা (৫০) ও দরুং ত্রিপুরার (৬০) মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত ১০ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাজেকে ৪ জন মারা যান। লংথিয়ান পাড়া ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে নারী শিশু বৃদ্ধসহ আরো প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রয়েছেন।
সাজেক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার বনবিহারী চাকমা জানান গত এক মাস ধরে সাজেকের লংথিয়ান পাড়া, অরুণ পাড়া, কাইজা পাড়া, রায়না পাড়া ও শিয়ালদহ বেটলিং এলাকাসহ আশপাশের বেশকিছু এলাকায় নতুন করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এলাকায় আশপাশে কোনো হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকায় স্থানীয় তান্ত্রিক দ্বারা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এলাকায় যাতায়াতের কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে এত দূর থেকে মাচালং ও উপজেলা সদর হাসপাতালে রোগী পাঠানো সম্ভব নয়।
গত ৮ জুন বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের ৩টি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে টানা এক সপ্তাহব্যাপী চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে গত বুধবার মেডিকেল টিম ফিরে আসে। এর মধ্যেই নতুন করে আরো দুজন গ্রামবাসীর মৃত্যু হলো। সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার জোপুইথাং ত্রিপুরা জানান, লংথিয়ান পাড়ায় ৪ জন মুমূর্ষু ডায়রিয়া রোগী রয়েছে, তাদের অবস্থাও ভালো নয়। মূলত ছড়ার পানি থেকে এই রোগ ছড়িয়েছে। ২০১৬ সালে এখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মারা যান। পরে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মেডিকেল টিম গিয়ে দীর্ঘ এক মাসের চিকিৎসায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার ডায়রিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে জানান, সাজেকের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করায় বর্ষার শুরুতে এই সমস্যা দেখা দেয়। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় চেষ্টা করছি সাজেকের দুর্গম অঞ্চলে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা দূর করতে। এছাড়া সাজেকে ডায়রিয়া প্রতিরোধে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের সাহায্যে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সম্মিলিত চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়