জিএম কাদের : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সাংবাদিকতা অনিরাপদ

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে লিটনকে টেক্কা দেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই

পরের সংবাদ

কয়েক হাজার পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : ডিসিএস অর্গানাইজেশন নামে পেস্টিসাইডের (বালাইনাশক) প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা করে আসছিল। আশরাফুজ্জামান ও ফরহাদুল আমিন এই প্রতিষ্ঠানটি খুলে বসেন। ১৫শ’ থেকে ২ হাজার বর্গফুটের বাসা, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কীটপতঙ্গ বিনাশের জন্য গড়ে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিল নেয়া হতো। কীটপতঙ্গ বিনাশের কাজে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেড (গ্যাস ট্যাবলেড) ব্যবহার করা হতো।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শায়ান মোবারত (১৫) ও শাহির মোবারত (১০) নামের দুটি শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার ডিসিএস অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিন পুলিশ রিমান্ডে এমনই তথ্য জানিয়েছেন।
ভাটারা থানার ওসি এবি এম আসাদুজ্জামান জানান, ডিসিএস অর্গানাইজেশনের পেস্ট কন্ট্রোলের বিষয়ে সরকারি দপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। বিনা লাইসেন্সে প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হয়নি। নেই কোনো চিকিৎসক। এমনকি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরেরও কোনো অনুমোদন নেই।
২০১৮ সালের বালাইনাশক আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া বালাইনাশক আমদানি, উৎপাদন, পুনরুৎপাদন, মোড়কজাতকরণ, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি পরিচালনা, বিজ্ঞাপন প্রচারসহ কোনো কাজই করতে পারবে না। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় কীটনাশক প্রয়োগে বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর পর উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা চালাতে শুরু করেছে। অনুমোদনবিহীন পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের খামাবাড়িতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেস্ট কন্ট্রোলের জন্য উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা বালাইনাশক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়ে থাকে। বাসা-বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, ফসলের মাঠ ও শস্যের আড়ত বা খাদ্যগুদামে বালাইনাশক করার জন্য ১১৮টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা। পেস্ট কন্ট্রোলের লাইসেন্স পেতে হলে ১৬টি শর্ত পূরণ করতে হয়। কঠিন এসব শর্ত অনেকেই পালন করতে পারেন না বলে এ পর্যন্ত সাত শতাধিক আবেদনের কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি। উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখার শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ওই প্রতিষ্ঠানে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। থাকতে হবে একজন সার্টিফিকেটধারী টেকনিশিয়ান। প্রতিষ্ঠানটিতে কেমিক্যাল রাখার জন্য ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নিতে হবে। ওই প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করবেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনাপত্তিপত্রও জমা দিতে হবে। কিন্তু ডিসিএস অর্গানাইজেশন নামের পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটির এসব কিছুই ছিল না।
ডিসিএস অর্গানাইজেশন বাসা, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কীটপতঙ্গ সমূলে উৎপাটন করা হয়- এ রকম গ্যারান্টি দিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচারণা চালায়। অনলাইনে তাদের কাছে অর্ডার আসে। এরপর সেখানে তাদের কর্মচারী পরিদর্শন করে কীটপতঙ্গ মুক্ত করার জন্য বিল জানায়। সাধারণত ১৫শ’ থেকে ২ হাজার বর্গফুটের স্পেসের জন্য গড়ে ১৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা বিল হয়। এরপর তাদের কর্মচারীরা অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেড (গ্যাস ট্যাবলেড) দিয়ে কীটপতঙ্গ বিনাশ করে। ডিসিএস

অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিন রিমান্ডে জানিয়েছেন, সারাদেশে এরকম হাজার হাজার পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই নিদিষ্ট ঠিকানা নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় অথবা রাস্তার ধারে সাইনবোর্ড টানিয়ে বা দেয়ালে দেয়ালে মোবাইল নম্বর দিয়ে পেস্ট কন্ট্রোলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ, গত ৪ জুন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের নতুন ফ্ল্যাটে তেলাপোকা নিধনের জন্য গ্যাস ট্যাবলেড ব্যবহার করায় বিষক্রিয়ায় দুই ছেলে শায়ান মোবারত (১৫) ও শাহির মোবারত (১০) মারা যায়। ওই ঘটনায় মোবারক হোসেন বাদী হয়ে ভাটারা থানায় ডিসিএস অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি ও টেকনিশিয়ানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়।
গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ভাটারা থানার ওসি বলেন, গুগল ঘেঁটে পেস্ট কন্ট্রোলিংয়ের তথ্য নিয়ে হাজার হাজার পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই চলছে। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগের খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা গ্যাস ট্যাবলেড বাসাবাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের কোনো নিয়ম নেই। খাদ্য গোডাউন বা ফসলের মাঠে এই গ্যাস ট্যাবলেড ব্যবহার করা হয়। বাসাবাড়িতে বিভিন্ন ধরনের তরল কেমিক্যাল স্প্রে করতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার কেমিক্যাল দিয়ে তরল তৈরি করার নিয়ম রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের অজ্ঞতার কথা স্বীকার করেছেন। এজন্য এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩০৪ এর ক ধারায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ দিয়ে দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়