সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর থেকে : জামালপুরের বকশীগঞ্জে বাংলা নিউজের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে প্রধান অভিযুক্ত সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ থাকার পরও এখনো আটক হয়নি অনেকে। এই বিষয় নিয়ে ক্ষোভ দেখা গেছে জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে।
গত ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয় সাংবাদিক নাদিমকে। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ জুন ভোরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ৩টার দিকে কর্মরত চিকিৎসক সাংবাদিক নাদিমকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের পর ১৫ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের মরদেহ বকশীগঞ্জে নিজ বাড়িতে আনা হয়। গতকাল ১৬ জুন সকালে বাজার এলাকার নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম ও নিলক্ষিয়ার গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, আমরা ১৬ জুন রাত বা ১৭ জুন সকালের মধ্যে মামলা দায়ের করব। এখন আমাদের পরিবারের সবাই শোকাহত। কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা মামলাটি দায়ের করব।
সাংবাদিক নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, আমার বাবাকে চেয়ারম্যান বাবুর নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বাবুর অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আমার বাবা নিউজ করেছিলেন- তাই তারা আমার বাবাকে হত্যা করে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, মাহমুদুল আলম বাবু প্রভাবশালী থাকায় এর আগেও ঘটিয়েছেন অনেক ঘটনা। বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জুম্মান বলেন, বাবু চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই পুলিশ বিভাগের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার জন্য বাবু চেয়ারম্যান খুব প্রভাবশালী। তিনি এর আগেও অনেক অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন। আমরা তার বিচার চাই।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলার সাংবাদিক নেতারা।
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ৩ দিনের মধ্যে সব অভিযুক্তকে আইনের আওতায় না আনা হলে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।
এ ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে নিহত নাদিমের পরিবার।
নিহত নাদিমের বাবা আব্দুল করিম বলেন, আমরা বাবু চেয়ারম্যানের ফাঁসি চাই। সে আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। বাবু চেয়ারম্যানসহ জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৬ জনকে আটক করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকিদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের ৫টি টিম মাঠে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।