পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : সবাই সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখাবে- এই প্রত্যাশা বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি : ‘পরিকল্পিত সিলেটে’ প্রাধান্য

পরের সংবাদ

দুঃসময় পেরিয়ে ফর্মে মুমিনুল : সেঞ্চুরির আক্ষেপ লিটন-জাকিরের

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকা টেস্টে আফগানদের বিপক্ষে টাইগারদের জয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। বৃষ্টি ছাড়া লিটন বাহিনীর জয় কেউ আটকাতে পারবে না। প্রায় ২৬ মাস ধরে যেন হাসছিল না মুমিনুলের ব্যাট। টানা অফ ফর্মের কারণে অধিনায়কত্ব হারানোর পাশাপাশি জায়গাও হারিয়েছিলেন দল থেকে। গত ডিসেম্বরে অবশ্য ৮৪ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এছাড়া সবশেষ ১৭ ইনিংসে একটি ফিফটিও ছিল না তার ব্যাটে। অবশেষে সেসব দুঃস্মৃতি দূরে ঠেলে দিয়ে সুসময়ের দেখা পেয়েছেন মুমিনুল হক। গতকাল হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুমিনুল সেঞ্চুরির দেখা পেলও সেঞ্চুরির আক্ষেপ রয়ে গেছে জাকির হাসান এবং অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের। জাকির হাসান ৯৫ বলে ৭১ রান করার পর রানআউটের ফাঁদে পড়েন। তিনি যেভাবে খেলছিলেন সেঞ্চুরি তার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু রানআউট তার স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছে। মুমিনুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে বেশ সাবলীলভাবে ব্যাট করছিলেন টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস। তার ৮১ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে সেঞ্চুরির আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। টাইগারদের লিড ৬৬১ রান হলে ইনিংস ঘোষণা করা হয়। ইনিংস ঘোষণার ফলে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকতে হয় টাইগার অধিনায়ককে।
টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে মুমিনুল হক যেভাবে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন, তাতে তাকে তুলনা করা হতো কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যান, লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারদের সঙ্গে। ব্যাটিং গড়ের দিক থেকে তো বটেই, বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিকও বনে যান তিনি। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় মুমিনুল হকের। এরপর তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে থাকেন। তার প্রথম ১৪ টেস্টের ১৩টিতেই কোনো না কোনো ইনিংসে ছিল পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। ৪৩ টেস্টেই তিনি করে ফেলেছিলেন ১১ সেঞ্চুরি। গড় ছিল ঈর্ষণীয়- ৬১.৮৫।
এরপর তার পারফরম্যান্সের গ্রাফ নি¤œমুখী হতে থাকে। একসময় অধিনায়কত্ব হারান। দল থেকেও বাদ পড়েন। মুদ্রার অন্য পিঠ দেখে আবার আসেন জাতীয় দলে। ৪৩ টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১১ সেঞ্চুরি করে ফেলা মুমিনুল ৫৭তম টেস্টে এসে দ্বাদশ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন।
গতকাল ঢাকা টেস্টে আফগানিস্তানকে পেয়ে ১৩ টেস্ট পর ১৪তম টেস্টে এসে তিন অঙ্কের দেখা পান টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরির দেখা পান মুমিনুল হকও। ১২৩ বল খেলে সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। সেঞ্চুরির পথে ১২টি বাউন্ডারির মার মারেন মুমিনুল। তার সঙ্গে হাফসেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছে যান অধিনায়ক লিটন কুমার দাসও। ৫৩ বলে ৮টি বাউন্ডারি মেরে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। গতকাল মুমিনুলের ৬৭ বলে করা ফিফটিতে ছিল ৭টি চার। যে গতিতে মুমিনুল ফিফটি করেছেন, সেটি ধরে রেখেছেন পরের ফিফটিতেও। ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি স্পর্শ করতে মুমিনুল খেলেছেন ১২৩ বল, মেরেছেন ১২টি চার। সেঞ্চুরিও করেছেন বাউন্ডারি মেরে। ইয়ামিন আহমেদজাইয়ের বাউন্সারে ব্যাট ছুঁইয়ে কিপারের মাথার উপর দিয়ে বলটি বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে মুমিনুল পৌঁছে যান ১০১ রানে। এটি মুমিনুলের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি (৮০ স্ট্রাইক রেট)। তার দ্রুততম (৮২.২৪) সেঞ্চুরিটি এসেছে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে।
টেস্ট ঘরানার ব্যাটসম্যান মুমিনুল হুট করে দ্রুত রান তুলছেন কেন? মুমিনুলের বেশির ভাগ টেস্ট সেঞ্চুরির স্ট্রাইক রেট ছিল ৬০ এর আশপাশে। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মন্থর টেস্ট সেঞ্চুরিটি এসেছে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাল্লেকেলে টেস্টে তিনি ১২৭ রান করেছেন ৩০৪ বল খেলে, স্ট্রাইক রেট ছিল ৪১.৭৭। মুমিনুলের সর্বশেষ সেঞ্চুরিও এটি।
মুমিনুলও জানেন, তার ব্যাটিংয়ের সহজাত ধরন দ্রুত রান করা। ছন্দে থাকলে মুমিনুল কবজির মোচড়ে সৃষ্টি করেন ‘গ্যাপ’। তার লেট কাট কিংবা ল্যাপ সুইপ খুঁজে নেয় বাউন্ডারি। আর দ্রুতপায়ে সিঙ্গেল নেয়া তো আছেই। তাতে রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে। এক সাক্ষাৎকারে মুমিনুল বলেছিলেন, ‘আমার সেঞ্চুরিগুলোতে দেখবেন স্ট্রাইক রেট ৫০-৫৫ এর বেশি ছিল। যখন রান করিনি, তখন ৩০ এর ঘরে।’
সে দিন নিজের প্রিয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের একটা কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন মুমিনুল, ‘স্যার বলেছিলেন, তুমি যতই রান কর না কেন, তুমি যদি একশও কর, কিন্তু স্ট্রাইক রেট যদি ৩০ হয়, তার মানে তুমি ফর্মে ফেরনি।’
মুমিনুলের গতকালের সেঞ্চুরিকে ফর্মে ফেরার আভাস বলাই যায়। ২০২১ সালে পাল্লেকেলের সেই মন্থরতম সেঞ্চুরির পর মুমিনুলের ফিফটি মাত্র তিনটি। এর মধ্যে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ২০২১ সালেই ৯২ বলে ৭০ রানের ইনিংস আছে একটি। পরের ফিফটি এসেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে। সেখানে ৮৮ রান করতে মুমিনুল খেলেছেন ২৪৪ বল।
দল ম্যাচ জিতলেও সে ইনিংস নিয়ে মুমিনুল সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ, সেদিন মুমিনুল তার চেনা ছন্দে খেলেননি, ‘ওটা তো আমার ন্যাচারের বাইরে। আমি যদি ওভাবে ১০টি ইনিংস খেলি, তাহলে হয়তো ৩টায় সফল হব। আমি যেভাবে খেলে বড় হয়েছি, সেভাবে খেললে আমার সাফল্যের হার বাড়বে। হয়তো ১০টার মধ্যে ৭টায় সফল হব। মাউন্ট মঙ্গানুইতে আমি যেটা খেলেছি, সেটা আমার ন্যাচারাল খেলা না।’
মুমিনুলকে স্বস্তি দিয়েছে গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে খেলা ৮৪ রানের ইনিংসটি। কারণ, সে ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৫৫।
গতকাল অসাধারণ এক জুটি গড়ে তুলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং জাকির হাসান। অথচ, সেই জুটিরই কিনা যবনিকাপাত ঘটল অহেতুক ঝুঁকি নিতে গিয়ে রানআউট হওয়ার মধ্য দিয়ে। ১৭৩ রানের বিশাল জুটি গড়ার পর রানআউটে কাটা পড়ে বিদায় নিলেন জাকির হাসান। ৭১ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন তিনি।
হাশমতউল্লাহ শহীদির করা ৩৫তম ওভারের ৩য় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টা করেন। নাসির জামাল বলটি দারুণ ক্ষিপ্রতায় বাউন্ডারি বাঁচান। বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠান ইবরাহিম জাদরান। এরই মধ্যে তৃতীয় রান নিতে যান শান্ত। কিন্তু জাকির ক্রিজে পৌঁছার আগেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন আফসার জাজাই। ৯৫ বল খেলে ৭১ রান করে আউট হন জাকির।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়