পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : সবাই সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখাবে- এই প্রত্যাশা বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি : ‘পরিকল্পিত সিলেটে’ প্রাধান্য

পরের সংবাদ

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন : দুপক্ষের কর্মসূচিতে নাট্যাঙ্গন উত্তপ্ত

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে কামাল বায়জীদের অপসারণ ইস্যুতে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে যে বিভাজন ও দ্ব›দ্ব চলছে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদা ছোড়াছুড়িসহ পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নাট্যাঙ্গন আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার পাশাপাশি দেশের অগ্রজ নাট্যকারদের নিয়ে কুৎসিত মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন বলছে, যে দলগুলো ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের কোনো মন্তব্য বা অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না তারা।
কামাল বায়জীদকে নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নাট্যকর্মীদের মধ্যে যারা তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের এক চিঠিতে তাদের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছে। ওই চিঠিতে ‘কদর্য ভাষা’ প্রয়োগের অভিযোগ এনে ফুঁসে উঠেছেন দেশের অগ্রজ নাট্যকাররা।
গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে অগ্রজ নাট্যজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, আহমেদ ইকবাল হায়দার, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, আজাদ আবুল কালাম, মোহাম্মদ বারী, সামিনা লুৎফা নিত্রা, কাজী রোকসানা রুমা প্রমুখ। এ
আয়োজনে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক দুই চেয়ারম্যান সারা যাকের ও রামেন্দু মজুমদার মুঠোফোনে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
‘সাধারণ নাট্যকর্মী’রা সমাবেশে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র অপরিবর্তিত রাখা, তহবিল তছরুপের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন, হল বরাদ্দে নতুন কমিটি গঠন।
নাট্যকর্মীরা বলেন, ২০১৮ সালের ৫ মের পর গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যে ২৩তম কমিটি গঠিত হয়েছিল, তার মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০২১ সালে। মেয়াদ শেষে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নতুন কমিটির নির্বাচন না দেয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে তারা বলেন, এ কমিটি ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’।
সমাবেশে মামুনুর রশীদ বলেন, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যে বিপুল পরিমাণ বাজেট রয়েছে, তা নিয়ে যে ঝামেলা হয়েছে, তাতে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। জানতে হবে কারা দোষী। ফেডারেশনের সার্বিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনতে হবে।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বলেন, ফেডারেশনের ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার হিসাব নিয়ে যে কথা উঠেছে, তা কীভাবে কোথায় খরচ হলো, তা নিয়ে কথা বলতে হবে। সারাদেশে নাট্য উন্নয়নের নামে যেসব নাটক নির্মাণ করছে, তা কেবল আইওয়াশ। নামকাওয়াস্তে ওয়ার্কশপসহ যা কিছু করা হয়েছে তরুণদের জন্য, তা নিয়ে কথা বলতে হবে। সবার আগে মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির চেয়ারম্যানকে বিদায় নিতে হবে।
সমাবেশে নাট্যকর্মীদের অভিযোগ, শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান একই ব্যক্তি হওয়ায় বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে সংকট শুরু হয়েছে। কামাল বায়জীদকে একপক্ষীয় সিদ্ধান্তে গ্রুপ থিয়েটার থেকে বের করে দিয়ে লিয়াকত আলী লাকী একনায়কতান্ত্রিকভাবে ফেডারেশন পরিচালনা করছেন। ফেডারেশনের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা, প্রশিক্ষণ সম্পাদক অভিজিত সেনগুপ্তসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ধশতাধিক নাট্যকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘সাধারণ নাট্যকর্মী’র ব্যানারে থাকা নাট্যকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমান গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নেতাদের ‘ভুখানাঙা’, ‘হিন্দু রাজাকার’সহ নানা আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
নাট্যকর্মীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ‘আমরা রুচির দুর্ভিক্ষ দূর করার আন্দোলন করছি’ এমন মন্তব্য করে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, করোনাকালীন সবকিছু স্থগিত হয়েছিল। নাট্যকর্মীদের দাবি রয়েছে নির্বাচন আয়োজনের। নিশ্চয়ই নির্বাচন হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। ন্যাশনাল কাউন্সিল হবে, সেখানে কারো কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে তা নিয়ে আলোচনা হবে।
গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকে উদ্দেশ করে যারা ক্রমাগত অভিযোগ উত্থাপন করছেন, লিয়াকত আলী লাকী তাদের সমালোচনার জবাবে বলেন, আমি সমালোচনাকে ভয় পাই না। তবে তারা অধিকাংশ ফেডারেশনের সদস্য নয়। তারা বিভ্রান্ত, সঠিক পথে নেই।
এক ব্যক্তির দুই পদে থাকা নিয়ে লাকী বলেন, আসাদুজ্জামান নূর যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিও ছিলেন। ম হামিদ একই সঙ্গে বিটিভির ডিজি, গ্রুপ থিয়েটারের ডিজি। তখন সমস্যা না হলে এখন কেন হবে?
গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও এ সংগঠনের চেয়ারম্যানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিকৃত মন্তব্যের দায়ে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
‘সাধারণ নাট্যকর্মী’রা যে বিক্ষোভ ও সমালোচনা করছেন, তার প্রতিবাদে ১৭ থেকে ২৩ জুন প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। ‘সাধারণ নাট্যকর্মী’রা শুক্রবারের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়