সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে ভুক্তভোগীরা

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ও প্রত্যাশায় ফারাক অনেক : ক্লিন সিটি খ্যাত রাজশাহীর মানুষ অনেক সেবা পান না

পরের সংবাদ

ভোলায় মেঘনার তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম : বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের আশঙ্কা

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম নাহিদ, ভোলা থেকে : ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের দালাল বাজার সংলগ্ন ভাংতির খালের মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের মিহি ধুলার মতো বালু আর অর্ধেক মাটিভর্তি করা জিও ব্যাগ সেলাই করে গণনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নদীতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, জুন মাসকে পুঁজি করে বরাদ্দকৃত জিও ব্যাগ না ফেলে কাজ সম্পন্ন করার পাঁয়তারা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর মেঘনার ভাঙনে ভোলা সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ভাঙনে অনেকে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মুছে গেছে উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানচিত্র। ভাঙন রোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের নকশা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠায়। বার্ষিক জরুরি ভাঙনরোধ প্রকল্পের আওতায় ভোলার মেঘনা নদীর জরুরি ভাঙন রোধে পূর্ব ইলিশার ২নং ওয়ার্ডের দালাল বাজার সংলগ্ন ভাংতির খাল এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ দিয়ে ৪০০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণের জন্য চট্টগ্রামের ঠিকাদার মেসার্স গরীবে নেওয়াজ এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রায় ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪২ হাজার ৩০০ জিও ব্যাগে ২৫০ কেজি প্রকৃত মোটা বালি ফেলে ডাম্পিং করার কথা। এসব ব্যাগে ৬:১ অনুুপাতে বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হবে। এখন চলছে জিও ব্যাগে বালু ভরার কাজ। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। এই কাজটি মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে চুক্তিতে নিয়েছেন ভোলার ঠিকাদার ইকবাল সর্দার নামে এক ব্যক্তি।
অবিযোগ রয়েছে, পাউবো কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে ‘জরুরি কাজের’ সুযোগে জিও ব্যাগে প্রকৃত বালুর পরিবর্তে নিম্নমানের ধুলার মতো মিহি বালুমাটি মিশ্রিত আবর্জনা ভরে পরিমাণের চেয়ে অর্ধেক করে জিও ব্যাগ ভর্তি বস্তা সেলাইয়ের কাজ করছেন ঠিকাদার।
সূত্র বলছে, এই জিও ব্যাগ সম্পূর্ণ না ফেলে কোনো রকম দায়সারাভাবে কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বুঝিয়ে দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এই কাজে সহযোগিতা করছেন ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এতে চলমান কাজটি অত্যন্ত নিম্নমান হচ্ছে বলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এলাকার বসতি রক্ষার জন্যে অনেক দেন দরবারের পর এই তীর রক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। এটি সঠিকভাবে করা না হলে দুর্ভোগে পড়বে এলাকাবাসী। আর আমরা প্রকাশ্যে এই অনিয়মের কথা বলতে পারি না। বললে এলাকায় বসবাস করা যাবে না। তাই সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করি।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একদল শ্রমিক জিও ব্যাগ ভরছেন আর একদল শ্রমিক হাফ ব্যাগ বালু ভরে বস্তার মুখ সেলাই করছেন। এ সময় ধুলার মতো মাটি মিশ্রিত বালু ভরা হচ্ছে বস্তায়।
কাজের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী মো. হুমায়ুন বলেন, বস্তার ওজন ঠিক আছে তবে বস্তায় যা ভরছে তার কিছু উল্টাপাল্টা আছে। আমি এ বিষয়ে অফিসকে জানাব।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গরীবে নেওয়াজ এন্টারপ্রাইজের ভোলার প্রতিনিধি ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কাজের কোনো সমস্যা নেই। ঠিকমতো হচ্ছে। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের কাজে সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। জিও ব্যাগ ভরার জন্য বালুর কোনো গ্রেড নেই। আর জিও ব্যাগের বস্তা সঠিক ওজন দিয়ে এবং গণনা করে নদীর পার সংরক্ষণের কাজে ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া ভোলা পাউবোর এ কাজে তেমন দায়-দায়িত্ব নেই। আমরা শুধু রুটিন মাফিক কাজ করছি।
এ ব্যাপারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। টাস্কফোর্স এসে যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাজ সঠিক পেলে ঠিকাদার বিল পাবেন।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ম. হাসানুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, দালাল বাজার সংলগ্ন কাজে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। যে অভিযোগগুলো উঠেছে তা সঠিক নয়। আমরা শত ভাগ কাজ বুঝে ডাম্পিং করি। তাছাড়া ঢাকা থেকে টাস্কফোর্স সদস্যরা এসে কাজের দেখভাল করছেন।
এ প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, আবার যখন টাস্কফোর্স সদস্যরা আসবেন তখন আপনাকে ফোন করে কাজের তদারকি দেখার জন্য বলব।
এ সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পাউবোর ওয়ার্ক এসিস্টেন্টের অগচোরে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেন। বলেন, আশা করছি যথাসময়ে কাজটি শেষ করতে পারলে ভাঙনের হাত থেকে মেঘনার দালালবাজার সংলগ্ন বানবাসী মানুষ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়