সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে ভুক্তভোগীরা

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ও প্রত্যাশায় ফারাক অনেক : ক্লিন সিটি খ্যাত রাজশাহীর মানুষ অনেক সেবা পান না

পরের সংবাদ

বরিশালে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শত কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশালে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় একশ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। বেসরকারি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ বিল আদায়ে কঠোর হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে তেমন ভূমিকা নেই বিদ্যুৎ বিভাগের। ফলে দিনে দিনে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বকেয়া বিলের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
বরিশাল ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) তথ্য মতে, বিভাগের ছয় জেলার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গত এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ছিল ৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৯২ হাজার ৪২৬ টাকা। পরবর্তী সময়ে মে মাসে বিলের পরিমাণ বেড়ে প্রায় শত কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির বরিশাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম তারিকুল হাসান। শুধু বরিশাল সিটি করপোরেশসহগ নগরীর ছয়টি দপ্তরেই বকেয়ার পরিমাণ ৬৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- বরিশাল সিটি করপোরেশন, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ, সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল জেলা পুলিশ এবং বরিশাল সদর হাসপাতাল। বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছর বছর ধরে বিল পরিশোধ না করায় সারচার্জসহ বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে দফায় দফায় নোটিস দেয়া হয়েছে। জেলা এবং বিভাগীয় প্রশাসনের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরপরও বকেয়া পরিশোধে আগ্রহী হচ্ছে না দপ্তরগুলো। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ পেলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে শতভাগ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তারপরও বিল পরিশোধের জন্য স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ওজোপাডিকো বরিশাল পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক এটিএম তরিকুল হাসান জানিয়েছেন, তাদের অধীনে বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর জেলা। এই তিনটি জেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩৭ টাকা। এছাড়া পটুয়াখালী সার্কেলের আওতাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বকেয়া বিলের পরিমাণ ২৩ কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ৭৮৯ টাকা। এরমধ্যে বরিশালের দুটি বিক্রয় ও বিতরণকেন্দ্রের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বকেয়া বিলের পরিমাণ ৭০ কোটি টাকার বেশি। বরিশাল বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-১ ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রুবেল কুমার দে জানান, গত এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল সিটি করপোরেশন বাদে তাদের আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫২ লাখ ৭ হাজার ১৯৪ টাকা। আর বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে বকেয়া বিলের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩৬ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে ৪৮ লাখ টাকা, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের কাছে ৩৬ লাখ টাকা এবং বরিশাল জেলা পুলিশের কাছে বকেয়া বিলের পরিমাণ ৭০ লাখ টাকা। হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজের বকেয়া তিন মাসের হলেও বরিশাল জেলা পুলিশের বকেয়া দেড় বছরের।
অপরদিকে, বরিশাল বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-২ এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন জানান, তাদের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া সিটি করপোরেশনের কাছে। তাদের কাছে ২৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। এর বাইরে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে গত এক বছরে ৫০ লাখ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেনারেল ও টিবি হাসপাতালের কাছে ১২ লাখ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে ৫ লাখ, ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৬ লাখ, ভূমি অফিসের কাছে ২ লাখ এবং কৃষি বিভাগের বকেয়া বিল ২ লাখ টাকা। তবে চলতি জুন এবং জুলাইয়ের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান তাদের বকেয়া পরিশোধের কথা জানিয়েছেন বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী।
এ প্রসঙ্গে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা চাইলেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছি না। কেননা বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ দেয় সরকার। যতোটুকু বরাদ্দ পাই তা দিয়ে বিল পরিশোধের চেষ্টা করি। চলতি জুনে বরাদ্দ পেলে আবারো এক দফা বকেয়া বিল পরিশোধ করা হবে। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তার শতভাগ খরচের অনুমোদন দেয়া হয় না। সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা যায়। যে কারণে ওই ৭৫ শতাংশ বিল দেয়ার পরও বকেয়া থেকে যায়। বকেয়ার সঙ্গে সারচার্জ বাড়তে থাকে। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎবিল পরিশোধের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে বাকি ২৫ শতাংশ দিয়ে বিল পরিশোধ করা হবে। না হলে ২৫ শতাংশ টাকা ফেরত যাবে। পরবর্তী অর্থ বছরে বরাদ্দ পেলে আবার বিল দেয়া হবে। জানা গেছে, ইতোপূর্বে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বকেয়া বিদ্যুত বিল আদায়ে নগরীর সড়ক বাতি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় কমিশনারের মধ্যস্থতায় কিস্তিতে বিল পরিশোধের শর্তে বিদ্যুৎসংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়। এক কিস্তি বিল পরিশোধ করা হলেও পরবর্তী সময়ে আবার বিল দেয়া বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। এ কারণে দ্বিতীয় দফায় আবার সড়ক বাতি এবং পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পরবর্তী সময়ে আর সমঝোতা না হলেও সিটি করপোরেশন নিজস্ব ক্ষমতায় সড়ক বাতির সংযোগ দিয়েছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের। যদিও এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওজোপাডিকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বরিশাল বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-১ এর অধীনে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ কোটি ৯২ লাখ ৩ হাজার ৯৭১ টাকা, কৃষি বিভাগের কাছে এক কোটি ৭৯ লাখ ৭ হাজার ৩৯৮ টাকা, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কাছে ৮ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫৪ টাকা, বাড়ির বিল ৪ কোটি ৪২ লাখ ৭ হাজার ৬৫ টাকা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের কাছে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৫ হাজার ৭৭৮ টাকা। বরিশাল বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-২ এর অধীনে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার মধ্যে শিক্ষা দপ্তরগুলোতে ৫ কোটি ১৫ লাখ ২২৬ টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কাছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭ হাজার ২৪৯ টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে। তবে দুটি বিভাগের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়। বরিশাল সার্কেলের অধীনস্ত পিরোজপুর জেলা সদর কেন্দ্রের আওতায় প্রতিষ্ঠানে বকেয়ার পরিমাণ ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। এর মধ্যে সরকারি বাসার বিদ্যুৎবিল বকেয়া সর্বোচ্চ ১১ লাখ ১৩ হাজার ৮৩১ টাকা। এছাড়া অন্যান্য বিভাগগুলোতে এক থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিল বকেয়া রয়েছে। একই জেলার ভাণ্ডারিয়ায় বাকি ৫৭ লাখ ১ হাজার ১৩ টাকা, ঝালকাঠি জেলা সদরে ৬৬ লাখ ১৩ টাকা, একই জেলার নলছিটি উপজেলায় ১২ লাখ ৭০ হাজার ৮০৫ টাকা এবং কাঁঠালিয়া উপজেলায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৯ লাখ ৫৬ হাজার ১৯০ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়