প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

স্মরণানুষ্ঠানে বক্তারা : সুরের রাজ্যে কমল দাশগুপ্ত ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সংগীত নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় চলছে দেশের বরেণ্য শিল্পী, সুরকার, সংগীতজ্ঞদের স্মরণে সাতদিনব্যাপী ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক স্মরণানুষ্ঠান। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী, প্রসিদ্ধ সুরকার ও সংগীত পরিচালক কমল দাশগুপ্ত এবং সুরকার, যন্ত্রশিল্পী, সংগীত পরিচালক সমর দাস স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে প্রথম পর্বে প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী, প্রসিদ্ধ সুরকার কমল দাশগুপ্ত স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কমল দাশগুপ্ত স্মরণে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রিয়াংকা গোপ। আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী ইয়াসমিন মুশতারি এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. শামীম খান।
ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকে গ্রামোফোন ডিস্কে তার সুরে গাওয়া বহু গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ‘সাঁঝের তারকা আমি’, ‘আমি ভোরের যুথিকা’ প্রভৃতি গান আজো সমাদৃত। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বহু জনপ্রিয় গানে তিনি সুরারোপ করেছেন। প্রায় তিনশো নজরুলগীতির সুর রচয়িতা ছিলেন কমল দাশগুপ্ত। বাংলা চলচ্চিত্রের সুরকার হিসেবেও প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। হিন্দি আধুনিক সঙ্গীত- ‘গীত’ প্রচারেও তার অবদান অপরিসীম।
অনুষ্ঠানে একাডেমির সচিব সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই গুণীজনদের নিয়ে এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে শুদ্ধাচার ও তাদের জীবন অনুসরণের শিক্ষণীয় বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি, যা প্রতিবছরই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি করে থাকে। আগামী বছর আরো বড় পরিসরে এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমরা গুণীজন ও স্মরণীয় ব্যক্তিদের নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চাই।
বক্তারা বলেন, সুরের রাজ্যে কমল দাশগুপ্ত ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দুই দশক ধরে যে সুর ¯্রষ্টা সবাইকে ছাড়িয়ে বাংলা আধুনিক গান ও হিন্দি বা উর্দু গীতকে জনপ্রিয়তার এক চূড়ান্ত শীর্ষে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছিলেন, তিনি হলেন কমল দাশগুপ্ত। তার অবদান অসামান্য।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই কমল দাশগুপ্ত স্মরণে শিল্পী মৃদুলা সমদ্দার গেয়ে শোনান ‘এমনি বরষা ছিল সেদিন’ এবং ‘তুমি এসেছিলে জীবনে আমার পথের ভুলে’ একক সংগীত। শামীমা পারভীন শিমু গেয়ে শোনান ‘পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায়’ ও ‘আমি বনফুল গো ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে’। এছাড়াও ছিল বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী ইয়াসমিন মুশতারির কণ্ঠে গান।
সুরকার, যন্ত্রশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক সমর দাস স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে। সমর দাসের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি সংগীত কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. কমল খালিদ। আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম।
দেশভাগের পরে ঢাকাকেন্দ্রিক নাগরিক সংগীত ঐতিহ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দুজন সংগীত পরিচালক ও সুরকারের অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। সমর দাস তাদের মধ্যে অন্যতম।

১৯৬৬ সালে তিনি কিছুকাল করাচিতে পিআইএ সাংস্কৃতিক দলের সংগীত বিভাগের প্রধান ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে উঠলে তিনি সংগীত পরিচালক হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত হন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রধান সংগীত সংগঠক ও সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা ছিল সমর দাসের সংগীতে বহুমুখী পারদর্শিতা অর্জনের এক উজ্জ্বল ভূমিকা।
শিল্পকলা একাডেমিসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমর দাস যুক্ত ছিলেন। শিল্পীদলের সদস্য ও দলনেতা হিসেবে তিনি নানা দেশ ভ্রমণ করেন। তার সৃষ্ট সুরে বহু গান জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সেসব গান গেয়ে অনেক শিল্পী সঙ্গীত জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
আলোচনায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমর দাসের ভূমিকা, নতুন প্রজন্মের কাছে তাকে তুলে ধরতে এ ধরনের আয়োজনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন আলোচকরা। ‘সমর দাস’ স্মরণে সংগীত পরিবেশন করেন আলম আরা মিনু, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম এবং বিপাশা ইয়াসমিন। খুরশিদ আলম গেয়ে শোনান ‘খোপার বাগান খালি করে ঐ গোলাপটা আমায় দাও’ এবং বিপাশা ইয়াসমিন গেয়ে শোনান ‘তন্দ্রা হারা নয়ন আমার’ ও ‘লাজুক লাজুক চোখ মেলে ঐ’ গান। এছাড়া ছিল আলম আরা মিনুর কণ্ঠে সংগীত পরিবেশনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়