প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

সুলতানার জেগে ওঠা

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শ্রদ্ধাভাজনেষু,

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, আপনাকে খোলা চিঠি লেখার চিন্তাটা মাথায় এসেছে শিবদাস ব্যানার্জির লেখা ‘শরৎ বাবু, খোলা চিঠি দিলাম’ গানটি শোনার পরে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে গানটির সুরে সুরে ভূপেন হাজারিকা জানায় তার মহেশ, গফুর কিংবা আমিনা এখনো তাদের সেই অভাবেই জর্জরিত রয়েছে। আমিও ভূপেন হাজারিকার মতো জানি না, এই চিঠি আপনি পাবেন কি-না।
আপনি প্রায় ১২০ বছর আগে সুলতানার মাধ্যমে আপনার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। সেই স্বপ্ন কতটুকু পূরণ হয়েছে, কতটুকু হয়নি আমি আপনাকে আজ সেই গল্প শোনাব। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনার স্বপ্ন এখন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নারীই ধারণ করে। সুলতানার সেই ‘নারীস্থানে’ যেমন মহারানী শাসন করতেন, তেমনি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। মহারানী যেমন তার রাজ্যের সব মহিলার সুশিক্ষা প্রদানে সচেষ্ট ছিলেন, তেমনি আমাদের দেশের সরকারও সব নারীকে শিক্ষার আওতায় আনয়নের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রি-প্রাইমারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫১ জন শিশু হচ্ছে মেয়ে [সূত্র-DPE(APSC 2020)।
আপনাকে আমরা ভুলিনি। আপনার সম্মানে ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল রংপুর মহানগরীর পার্কের মোড় এলাকায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামে স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।
আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, ভগিনী সারা নারীদের গৃহে আবদ্ধ থাকা নিয়ে কী বলেছিলেন? ‘হ্যাঁ, নিরাপদ নহে ততদিন, যতদিন পুরুষজাতি বাহিরে থাকে! তা কোনো বন্য জন্তু কোনো একটা গ্রামে আসিয়া পড়িলেও ত সে গ্রামখানি নিরাপদ থাকে না।’ আপনাকে অতি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, কতিপয় পুরুষরূপী জন্তুর জন্য এখনো আমাদের দেশের নারীরা ‘নারী স্থানের’ ন্যায় স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে না। অথচ সরকার ১৯৮৪ সালে সিডও সনদ স্বাক্ষর ও অনুমোদন করার কারণে উক্ত সনদ অনুসরণে আমাদের বাধ্যবাধকতা এসেছে। উক্ত সনদের অনুচ্ছেদ ২-এর (ঙ) বলে, কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যাতে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। সিডও সনদের অনুচ্ছেদ ৭-এর (খ) অনুযায়ী ইতোমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সরকারি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নারীদের অংশগ্রহণ এবং সরকারি পদে নারীদের অধিষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় কর্মক্ষেত্রে বর্তমানে নারী কর্মচারীদের পরিমাণগত সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মী কর্তৃক নারী সহকর্মীদের যৌন হয়রানিমূলক আচরণ/কর্মকাণ্ড/চিন্তা-চেতনা পুরোপুরি নির্মুল হয়েছে এ কথা বলা যায় না। তাই হাইকোর্ট বিভাগ গত ১৪ মে, ২০১৯ তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রসহ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির শিকার নারী ও শিশুদের জন্য প্রতিরোধমূলক বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে দিকনির্দেশনামূলক নীতিমালা প্রদান করে। সংবিধানের ১১১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উক্ত নীতিমালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার বাধ্যবাধকতা আছে।
অল্প কিছু পুরুষের যৌন হয়রানিমূলক আচরণের জন্য বাংলাদেশের কর্মযজ্ঞে থাকা সব নারী যদি একযোগে তাদের কাজ ছেড়ে দিয়ে বাসায় আবদ্ধ থাকে, তাহলে আমাদের অর্থনীতির ভিত নড়ে যাবে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আর যৌন হয়রানিমূলক আচরণের জন্য কিন্তু সব পুরুষ দায়ী নন। মাত্র গুটিকয়েক পুরুষের জন্য আমরা নিশ্চয়ই আমাদের অর্থনীতির প্রবাহমান গতি বন্ধ করে দিতে পারি না।

প্রিয় বেগম রোকেয়া,

আপনি জেনে খুশি হবেন যে, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে এখন সব সরকারি অফিসেই এবং বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে। তাই আমরা যারা কর্মজীবী নারী রয়েছি তাদের উচিত এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণের প্রতিবাদ করা। আমরা এখন বিশ্বাস করি, আমাদের এই প্রতিবাদে আমাদের সঙ্গে বিশালসংখ্যক পুরুষ সহকর্মীও একাত্মতা ঘোষণা করবেন। তাই আমাদের সুলতানা এখন আর স্বপ্ন দেখে না, বরং আমাদের সুলতানারা শুভ দাসগুপ্তের সঙ্গে সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলে-

‘হ্যাঁ, আমিই সেই মেয়ে।
একদিন হয়তো
হয়তো একদিন- হয়তো অন্য কোনো একদিন
আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুড়ে ফেলে দিয়ে
আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা!
(আমিই সেই মেয়ে, শুভ দাসগুপ্ত)’

ইতি
কোন এক সুলতানা

আফরোজা ইসলাম শশী : ইনস্ট্রাক্টর (সাধারণ)
প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, মানিকগঞ্জ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়