প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

পরিবেশদূষণের জন্য দায়ী শিল্প-কলকারখানা

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশদূষণের সবচেয়ে বড় কারণ শিল্প-কলকারখানা। প্রতিটি শিল্প-কলকারখানা বিভিন্নভাবে দূষিত করছে মাটি, পানি, বায়ু, নদীসহ ভূগর্ভস্থ পানিও। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণার তথ্যমতে, মোট বায়ুদূষণের ৫০ শতাংশেরও বেশি, নদীদূষণের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং শব্দদূষণের প্রায় ৩০ শতাংশ শিল্প-কারখানা থেকে সৃষ্ট। পরিবেশদূষণে চামড়াশিল্প অন্যতম। চামড়া প্রক্রিয়াকরণের কয়েকটি ধাপে বিভিন্ন ধরনের তরল ও কঠিন বর্জ্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানকে দূষিত করে। এ ক্ষেত্রে সিক্তকরণ প্রক্রিয়ায় নির্গত তরল বর্জ্যে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড, দ্রবীভূত প্রোটিন, জৈব পদার্থ, ধুলাবালি, ময়লা ও গোবর মিশ্রিত থাকে। এগুলো দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে, ফলে বায়ুদূষণ ঘটে। তাছাড়া বর্জ্যে বিদ্যমান সোডিয়াম ক্লোরাইড ও রাসায়নিক দ্রব্য মাটি ও পানির দূষণ ঘটায়। আবার ডিলাইমিং ও ট্যানিং প্রক্রিয়া থেকে অ্যামোনিয়াম ও ক্রোমিয়াম মিশ্রিত তরল বর্জ্য পানিতে ও মাটিতে মিশে যায়, যা ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে এর মানমাত্রা পরিবর্তন করে।
টেক্সটাইল ও ডায়িং শিল্প বিশ্বের অন্যতম পরিবেশ দূষণকারী একটি শিল্প। বাংলাদেশের শিল্প-কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত পানির ১৭-২০ শতাংশই আসে টেক্সটাইল ও ডায়িংশিল্প থেকে। বুয়েটের ‘ইভ্যালুয়েশন অব প্রেজেন্ট এন্ড ফিউচার ওয়েস্ট ওয়াটার ইম্প্যাক্টস অব টেক্সটাইল ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণামতে, পোশাকশিল্প থেকে দেশে বার্ষিক বর্জ্য পানির উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৬ সালে ২১ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার এবং ২০১৭ সালে ২৩ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার এবং ২০২১ সালে তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৪ কোটি ঘনমিটার। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যরে একটি বড় অংশ অপরিশোধিত অবস্থায় নদীসহ সব ধরনের জলাধারে মিশে নষ্ট করছে জলজ পরিবেশ, বিপন্ন হচ্ছে জলজ প্রাণ। প্লাস্টিক বর্জ্যরে রাসায়নিক দূষণের কারণে বিপর্যস্ত সাগর-মহাসাগর। প্লাস্টিক বর্জ্যে আচ্ছন্ন সাগরের বিস্তৃত অঞ্চল ইতোমধ্যে ‘মৃত অঞ্চল’-এ পরিণত হয়েছে, যেখানে পানির অক্সিজেন স্তর জীবনকে সুরক্ষায় যথেষ্ট নয়। ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উচ্চমাত্রায় সামুদ্রিক-জীববৈচিত্র্যকে বিপদাপন্ন করছে।
সিমেন্টশিল্প থেকে পরিবেশদূষণ মূলত বায়ুকেন্দ্রিক কিন্তু পানিদূষণেও এর ভূমিকা কম নয়। সিমেন্ট তৈরিতে ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে তাপ দিয়ে ক্যালসিয়াম অক্সাইডে পরিণত করা হয়। এতে প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। ২০১৭ সালের কুয়েটের এক গবেষণা মতে, প্রতি টন সিমেন্ট উৎপাদনে প্রায় ৫১ গ্রাম ধুলা তৈরি হয় এবং একটি সিমেন্ট কারখানা থেকে এক বছরে প্রায় ৫০ দশমিক ২ টন ধুলা বাতাসে ছড়ায়। যার প্রভাবে কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও আশপাশের লোকজনের ফুসফুস আক্রান্ত হয় ও স্বাস্থ্যহানি ঘটে। স্বাভাবিকভাবে শিল্পাঞ্চলের বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম-১০) প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা। কিন্তু যেসব এলাকায় ইস্পাত কারখানা আছে, সেখানে গড়ে ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে ভাসমান বস্তুকণা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট মাত্রার দুই থেকে সাড়ে চার গুণ পর্যন্ত দূষণ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাগারের তথ্যমতে, ইস্পাত কোম্পানির দূষণের মাত্রা খুব বেশি। সাধারণত বাতাসে ভাসমান পিএম-১০ প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা থাকলেও ইস্পাত কারখানাসংশ্লিষ্ট এলাকায় ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ইস্পাত ও সিমেন্ট কারখানাগুলো সবচেয়ে বেশি পরিবেশদূষণ করছে। ইউরিয়া উৎপাদনের সময় বিভিন্ন ধাপে কারখানা থেকে গ্যাস নির্গত হয়ে বায়ুদূষণ করে। দেশে ৭ হাজারের বেশি ইটভাটা রয়েছে। বছরে প্রায় ২০৫ বিলিয়ন টাকার ইট উৎপাদিত হয়। গবেষণা মতে, বছরে প্রায় ১৫ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইটখোলা থেকে বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে। তথ্যমতে, বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে ইটখোলা থেকে ৫৩ হাজার ৩৩৩ টনের বেশি পার্টিকুলেট ম্যাটার-১০ বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়। অন্যদিকে ১৭ হাজার ৫৫৭ টন পার্টিকুলেট ম্যাটার-২.৫ এবং ৫৯ হাজার ২২১ টনেরও বেশি সালফার অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও দূষণের সৃষ্টি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্যমতে, বছরে প্রায় ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষ বায়ুদূষণের প্রভাবে মারা যায়। এর প্রায় ৫৯ শতাংশই মারা যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয়। বায়ুতে বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতির কারণে প্রায় ২২০ মিলিয়ন শিশু শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানাবিধ অনাকাক্সিক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। কাজেই পরিবেশদূষণের এই ভয়াবহতা থেকে উত্তরণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি প্রণয়ন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শিল্পবর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধকরণ, উন্নত শিল্প-প্রযুক্তির ব্যবহার করা, যার দ্বারা ক্ষতিকারক ধোঁয়া, রাসায়নিক, গ্যাস এবং বায়ু পরিষ্কার করা হয়। সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা।

অমল বড়ুয়া : লেখক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়