প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

এক দফা আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা অনিশ্চিত

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : সভা-সমাবেশে বিএনপি নেতারা জোর গলায় বলছেন, সরকার হটানোর এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা শিগগিরই আসছে। তবে ‘এক দফার’ এই আন্দোলন আরো পোক্ত করতে বিএনপি এবং শরিক দলগুলোর জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আন্দোলনের যে ‘যৌথ ঘোষণা’ দেয়ার কথা বলে হচ্ছিল- তার কী হবে? সূত্র বলছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, পররাষ্ট্র নীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ শরিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি। ফলে ভিন্ন ফরমেটে ৩১ দফার ঘোষণা পত্র চূড়ান্ত করেছে দুই পক্ষই। ভিন্ন মঞ্চে শিগগিরই এর ঘোষণা আসছে।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরব বিএনপি। তাদের সঙ্গে যুগপৎভাবে আন্দোলন করে আসছে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি জোট। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এই যৌথ আন্দোলন। গত ৬ মাসে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা একাধিকবার বৈঠক করেও সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করতে পারেননি। এটাকে বিএনপির নেতৃত্বের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তাদের অভিযোগ- হঠাৎ করেই সুর পাল্টিয়েছে বিএনপি। যৌথ ঘোষণার বদলে তারা এখন এক দফার যৌথ ঘোষণা দেয়ার কথা বলছে। অথচ বিএনপি পক্ষ থেকে প্রথমে তাগিদ ছিল- যৌথ ঘোষণায় যত বিলম্ব হবে, আন্দোলনের তত ক্ষতি হবে।
সূত্র জানায়, প্রথমে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ে গঠিত ৪ সদস্যের একটি কমিটি যৌথ ঘোষণার ৭ দফার একটি খসড়া তৈরি করে। কিন্তু ওই খসড়ার বেশ কিছু দফা নিয়ে আপত্তি তোলেন বিএনপির নেতারা। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফার একটি যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটি মেনে নেয়নি মঞ্চ। ফলে দুই পক্ষই দাবি-দাওয়া নিয়ে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না বিরোধী জোটের আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা। তা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা শরিকদের সঙ্গে আলাপ করছি। যৌথ ঘোষণার কাজ চলছে। আর এটা দেয়ারও তো একটা সময় আছে। সঠিক সময়ে এটা দিতে হবে। তা ছাড়াও একসঙ্গেই যে ঘোষণা হবে তার কি নিশ্চয়তা রয়েছে।
শরিকদের সঙ্গে দফা নিয়ে কোনো মতবিরোধ আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবার সঙ্গে মতবিনিময় হচ্ছে, তা শেষ হোক আগে। সব যে মিলতে হবে এমন কিছু নয়। তা ছাড়া আমরা ১০ দফা সামনে রেখে আন্দোলন করছি। ১০ দফায় উল্লেখযোগ্য সব দাবিই রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্য- মূলকথা হলো, আমরা ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের জায়গায় একমত আছি এবং থাকব। জানতে চাইলে গণতন্ত্র

মঞ্চের সঙ্গে আন্দোলন সমন্বয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা সবাই সরকার পতন আন্দোলনে ব্যস্ত সময় পার করছি। যেভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জোটবদ্ধভাবে একটি রূপরেখা দেয়া হয়েছিল, সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। ঘোষণাপত্র নিয়ে কাজ হচ্ছে।
দফা নিয়ে রফা হয়নি : গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, আমাদের চাওয়া ছিল- কিসের ওপর ভিত্তি করে বিরোধী দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাল, আন্দোলনের ভিত্তি কী, নির্বাচনে জয়ী হলে সরকারে গিয়ে কী কী পরিবর্তন আনা হবে, সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, মানবাধিকার এবং অধিকার হরণকারী আইনগুলোর বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হবে, তার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রæতি যৌথ ঘোষণায় থাকবে, যেন মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়। কিন্তু বিএনপির ৩১ দফার যৌথ ঘোষণাপত্রে এসব বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে।
৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে জটিলতা : বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নেতারা বলছেন, বিএনপির নিজেদের মতো তৈরি করা ৩১ দফা ঘোষণাপত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন ও মঞ্চের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ নানা বিষয়ে যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল, সেগুলো নেই। মঞ্চের নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে এখনি কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চায় না। তারা এখন লোক দেখানো কিছু কমিটমেন্ট করতে চায়। ক্ষমতায় যাওয়ার পরে তা মানলেও যেন কিছু না যায়-আসে। তাছাড়া ৩১ দফার যৌথ ইশতেহারে ‘রেইনবো নেশন’ বা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কথা বলছেন। এটা নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আমরা চাই অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ।
হঠাৎ সুর পাল্টাচ্ছে বিএনপি! : বিএনপির শরিকদের মধ্যে এখন জোর আলোচনা- বিএনপি হঠাৎ করেই একলা চলো নীতিতে চলছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তারা সুর পাল্টাতে শুরু করেছে। এখন আন্দোলন সঙ্গীদের চেয়ে বিদেশির প্রতি তাদের মনেযোগ বেশি। জোট নেতারা বলছেন, এখন আন্দোলনে জোট শরিকদের খুব একটা পাত্তা দিতে চায় না বিএনপি। এমনকী এতদিন তারা যৌথ ঘোষণা দেয়ার কথা বলে আসছিল। এখন উল্টো যৌথ ঘোষণার বদলে এক দফার যৌথ ঘোষণা দেয়ার কথা বলছে। এটি সুস্পষ্ট প্রতারণা। এ কারণে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
৩১ দফার ভিন্ন ইশতেহার! : জোট নেতারা বলছেন, যুগপৎ আন্দোলনের এত দূরে এসে পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই আমরা ‘সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ এই তিন দাবিতে তাদের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাব। বিএনপি যৌথ ইশতেহার না দিলে মঞ্চের পক্ষ থেকে ৩১ দফা সংবলিত একটি আন্দোলনের ইশতেহার দেয়া হবে। একই দিন কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিএনপি তাদের আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দেবে। দুই পক্ষের এই যৌথ ঘোষণার মধ্যে বেশকিছু দফায় মিল থাকবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যৌথ ইশতেহার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনা শেষ হয়নি। তবে, আন্দোলনের একটি যৌথ ঘোষণা আসবে। সেখানে বিএনপি তাদের ৩১ দফা দেবে। আমরা আমাদের ৩১ দফা দেব। এই দফাগুলোর মধ্যে বেশকিছু মিল থাকবে। ভিন্ন মঞ্চে এই ইশতেহার ঘোষণা দেয়া হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা সাইফুল হক বলেন, এত দিন পরেও আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দিতে না পারাটা দুঃখজনক। এটা চলমান আন্দোলনের একটা দুর্বল দিক। এখানে সংকটটা বিএনপির, অন্য কারো নয়। তাদের উচিত ছিল নিজ দলের অভ্যন্তরে আলোচনা করে অবস্থানটা পরিষ্কার করা। বিষয়টি এখন অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়