প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

অর্থ কি সুখ দেয়?

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হাতে ছিল তালপাতার পাখা। মাথার ওপর খড়ের ছাউনি বাংলো ঘর। টিউবওয়েলের পানিতে স্নান রান্নাবান্না সবকিছু। সন্ধ্যা নামার আগেই কাচের চিমনি মুছে ঘরে ঘরে হারিকেনের আলো। কাঠের লাকড়ি অথবা ভূষি, অথবা গোবরের ঘুঁটি দিয়ে রান্না। বগলদাবা করে বই-শ্লেট খড়িমাটি হাতে নিয়ে দলবেঁধে স্কুল যাওয়া। বাড়িতে চটে বসে পড়াশোনা। ব্যাটারি দিয়ে রেডিও চলত। দুর্বার, বিজ্ঞাপন তরঙ্গ, কলিম শরাফী আব্বাসউদ্দীন ওনাদের দরদী গান। কয়েকটা বছর ঘুরতেই মাথার ওপর খড়ের ছাউনি ঠিকই ছিল। রুমে রুমে বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা, বিদ্যুতের/কেরোসিনের চুলায় রান্না। টেপ রেকর্ডারে ফিতার ক্যাসেটে কত পছন্দের গান। উঠোনজুড়ে সব প্রতিবেশী মিলে একটা সাদাকালো টিভি দেখা। আরো কয়েক বছর ঘুরতেই… ঘরে ঘরে চলে এলো রঙিন টিভি, ল্যান্ড ফোন, বিদ্যুতের চুলা, উঠোনে একসঙ্গে ৩০-৪০ জন বসে টিভি দেখার দিন শেষ। ততদিনে রেডিওর কদর প্রায় নেই বললেই চলে। প্রত্যেকের পড়াশোনার আলাদা ডেস্ক পড়ার টেবিল। ক্যাসেট প্লেয়ারের ছোট সেট সরে গিয়ে এলো ডেকসেট। তখনো মানুষের এত এত ব্যাংক ব্যালেন্স বা ঋণ করে এটা ওটা সেটা করবার বিলাসিতা ছিল না। মানুষের মনে আনন্দ ছিল। আন্তরিকতা ছিল। একটু খেয়ে পরে ভালো থাকতে চাইত। আর এখন! কী বিলাসী জীবন আমাদের! এই বিলাসী জীবনের দায় মেটাতে গিয়ে গাছপালা ধ্বংস করে, পাহাড় কেটে, নদী ভরাট করে চারপাশের প্রকৃতির ওপর কেবল তাণ্ডব আর তাণ্ডব। আহা একদিকে সবুজ প্রকৃতির মরুকরণ আর অন্যদিকে বিছানায় বসে সুইচে টিপ দিয়ে লাইট জ্বালানো নেভানো, এসি চালানো, সুইচে টিপ দিয়ে গরম পানি, ঠাণ্ডা পানি একই কল দিয়ে বের করে নিয়ে আসা। সবকিছু এখন হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার।
ঘরে বসেই ব্যাংকিং, ঘরে বসেই ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েনমেন্ট, প্রতিটা বিষয়ের আলাদা আলাদা শিক্ষক, ঘরে বসেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, ঘরে বসেই পরীক্ষার ফলাফল, ঘরে বসেই বাস ট্রেন কিংবা বিমান জাহাজের সিট বুকিং। ঘরে বসেই সভা সেমিনার মিটিং শত শত সমস্যার সমাধান। কী এক চমৎকার! আর বিদ্যুতের বদৌলতে এত সব ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের সেবা সারাদিন চলমান। সাধারণ জনজীবন দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির কারণে হয়ে পড়ছে ওষ্ঠাগত। একদিকে উচ্চবিত্তের ভোগবিলাসী জীবন আর অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত খেয়ে পরে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন গতির জীবনে প্রগতি বা স্বস্তির সাক্ষাৎ মেলে কিনা জানি না। এমন চাই চাই আরো চাইয়ের অব্যবস্থাপনায় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আন্তরিকতা আবেগের যে টানাপড়েন তা তো আমাদের ছেলেবেলায় ছিল না। এত আরাম, এত আয়েশ, এত সুখ, এত স্বাচ্ছন্দ্য ভোগেও কারোর মধ্যে যেন তৃপ্তি নেই। মেরে খাওয়ার প্রবণতা সব জায়গায়। কারো কারো ভেতর অন্যকে ঠকিয়ে অন্যকে পথে বসিয়ে অন্যের জীবনকে বিপর্যস্ত করে স্বার্থান্ধ ও লেফাফাদুরস্তি জীবন যাপনের উন্মাদনা ও ঔদ্ধত্য সাধারণ অসহায় খড়কুটো ধরে বাঁচতে চাওয়া মানুষগুলোকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। এমন পাশবিক অর্থলোলুপতা কাউকেই অমরত্ব এনে দেবে না। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ওই লাভের খাতার বিরাট অংককে বিদায় দিতে হবে। তখন যাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে এত উচ্চভিলাষী জীবন যাপিত হয়েছে তাদের চোখের জল ও মনের কষ্ট হবে প্রত্যেকের অনন্তলোকের সফরসঙ্গী। এখনো সময় আছে। লোভের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার। স্রষ্টার সৃষ্ট নিসর্গের মাঝেই সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের অন্বেষণ করি। নির্লোভ জীবনাচরণে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করি। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আন্তরিকতাকে জীবনের সেরা উপহার হিসেবে গুরুত্ব দিতে শিখি। অহংকারী অর্থলিপ্সু হীনমানসিকতার যারা তাদের দ্বারা প্রলুব্ধ হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলি। মহাজ্ঞানীদের জীবনাচরণ ও আত্মজ্ঞান বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনুধাবনের চেষ্টা করি, ‘পৃথিবীতে, কী দিতে এসেছিলাম আর কতটুকুই বা দিতে পারলাম!’
খাই খাই আর নাই নাই অনেক তো হলো!

বিভা ইন্দু : সহকারী প্রধান শিক্ষক
সিলভার বেলস গার্লস হাইস্কুল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়