হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

ভুল ধারণায় যেন থেমে না যায় স্বেচ্ছা রক্তদান

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রক্তদান এমন একটি মহৎ কাজ যার তুলনা আর কোনোকিছুর সঙ্গেই হয় না। কেননা রক্তের বিকল্প শুধুই রক্ত। একজন রক্তের জন্য কাতর মানুষ ও তার ভুক্তভোগী পরিবারই শুধু বোঝেন এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে স্বেচ্ছা রক্তদানকারীদের সংখ্যা বাড়লেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। কারণ এখনো অনেকেরই আছে রক্তদান সম্পর্কিত কিছু ভুল ধারণা। অনেকেই একে দেখেন এক ভীতিকর কাজ হিসেবে। অথচ বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে রক্ত না পেয়ে মারা যাবে কোনো শিশু কিংবা প্রসূতি মা কিংবা দুর্ঘটনায় আহত কেউ- এমনটা মোটেই কাম্য নয়। রক্তদান সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে।
রক্ত দিতে যারা ভয় পান এদের একটা বড় অংশই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন সুঁইয়ের ভয়কে! যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মনোবিজ্ঞানী রক্তদানে ভয়ের মূল কারণ চিহ্নিত করার জন্য একটি জরিপ করেন। ১ হাজার ৮ জন পুরুষ এবং নারীর ওপর করা এই জরিপে উঠে আসে অবাক করা তথ্য। ২৭ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী জানায় যে, রক্তদানের সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এই আতঙ্ক তাদের ভেতর কাজ করে! প্রায় ১২ শতাংশ জানায়, রক্তদানের সময় বা তারপর মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা বা জ্ঞান হারাবার ভয় তাদের রক্তদানের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তদানের আগে জ্ঞান হারানো মানুষের সংখ্যা ৪ শতাংশেরও কম! আর রক্ত দেয়ার সময় বা পরে জ্ঞান হারায় ১ শতাংশেরও কম! তার মানে এক অমূলক ভয় অনেককেই রক্তদানের মতো মহৎ ও পুণ্যময় কাজ থেকে দূরে রাখছে। অথচ একবার ভাবুন, সেই অসহায় মুখগুলোর কথা! আপনার শরীরের উচ্ছিষ্ট রক্তটুকু পেলেই যে কি না প্রাণে বাঁচতে পারত, অকালে ঝরে পড়ত না থ্যালাসেমিয়ায় ভোগা নিষ্পাপ শিশুগুলো! চার মাস পরপর বছরে মাত্র তিনটি দিন রক্তদানের জন্য সময় বের করা মোটেই অসম্ভব কিছু না। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি। বিশ্বখ্যাত স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংস্থা ‘রেডক্রস’-এর তথ্যানুযায়ী একজন পরিপূর্ণ সুস্থ মানুষের রক্তদান করতে সময় লাগে মাত্র ৮-১০ মিনিট। রক্তদানের আগে ও পরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও বিশ্রামসহ সর্বোচ্চ ৪০-৫০ মিনিট সময় ব্যয় হয় স্বেচ্ছা রক্তদানে। কিন্তু গড়িমসি করে অনেকেই নিজেকে বঞ্চিত করেন অত্যন্ত পুণ্যময় এই কাজ থেকে। তাই প্রতি ৪ মাস পরপর ব্যক্তিগত সিডিউলে একটি দিন রক্তদানের জন্য নির্ধারিত রাখুন। রক্তদান সম্পর্কিত সবচেয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, রক্ত দিলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। আসলে বিষয়টি তো তা নয়ই বরং নিয়মিত রক্তদানে শরীর থাকে আরো সুস্থ! নিয়মিত রক্তদানে শরীরের রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া বাধাহীনভাবে হয়। ফলে ধমনীতে ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে অন্তত তিনবার যারা রক্তদান করেন, তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার হার আশ্চর্যজনকভাবে কম! রক্তদানের পরপরই শরীরের অস্থিমজ্জা নতুন কোষ তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদান করার মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে দেয়। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি ৪ মাস পরপর রক্তের রেড সেল বদলে যায়, তাই বছরে ৩ বার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা ও কর্মদক্ষতা আরো বেড়ে যায়। বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ‘ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঃযব ঘধঃরড়হধষ ঈধহপবৎ ওহংঃরঃঁঃব’-এ প্রকাশিত হয়েছে, নিয়মিত রক্তদানে ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে ৩৭ শতাংশ!
এমনকি প্রথমবার রক্তদানের মাত্র ৬ মাসের মাথায় ক্যান্সারের হ্রাসের এই পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। ইংল্যান্ডে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। নিয়মিত রক্তদাতাদের ফুসফুস, লিভার, পাকস্থলি, কোলন ক্যান্সারসহ ১৭টিরও বেশি রোগের ঝুঁকি কম থাকে। নারীদের সম্পর্কে ভুল ধারণা রক্তদানের ক্ষেত্রে এই মহৎ উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে রাখে। যেমন নারীদের শরীরে রক্ত এমনিতেই কম, রক্ত দিলে তো শরীরে কিছুই থাকবে না! ত্বক শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে যাবে! অথচ বাস্তব চিত্র কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। গড়পড়তা নারীর শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ ৮০০ মিলি। অন্যদিকে স্বেচ্ছা রক্তদানে একজন দাতার কাছ থেকে নেয়া হয় মাত্র ৩৫০-৪০০ মিলিলিটার রক্ত। তাই এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার পরও শরীরে থাকে পর্যাপ্ত রক্ত। আর রক্তদানের পরবর্তী কিছুদিন ভিটামিন-সি যুক্ত ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ খেলে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে প্রদত্ত রক্তের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। নিয়মিত রক্তদান ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে; কমিয়ে দেয় শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার প্রবণতা। শরীরে ফ্রি রেডিকেল তৈরি হওয়ার কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, নারীদের ক্ষেত্রে যা বেশি দৃশ্যমান। রক্ত দিলে শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেলগুলো বের হয়ে যায়, যা সাহায্য করে তারুণ্য ধরে রাখতে।

ডা. দীপা সাহা : সহযোগী অধ্যাপক, পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগ, আদ-দ্বীন মহিলা মেডিকেল কলেজ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়