হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি : অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের সাজা নিশ্চিত হোক

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর বেসিক ব্যাংকের লুটপাট ছিল এ সময়ের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। আর বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে বেশি আলোচিত নাম ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। অনিয়ম-দুর্নীতি করেও দীর্ঘ সময় তিনি বাইরে থেকেছেন। অবশেষে এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চার্জশিটে ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত সোমবার বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ-সংক্রান্ত ৫৯টি মামলার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে শেখ আবদুল হাইকে ৫৮টিতে আসামি করা হয়। শুরু থেকে এই ব্যাংকে অনিয়মের জন্য বাচ্চুকে দায়ী করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বেসিক ব্যাংককে একা ডুবিয়েছেন তিনি। আমরা আশা করব, আর্থিক খাতের এমন ব্যক্তিদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হলে নজির সৃষ্টি হবে। সরকারি খাতের ভালো ব্যাংক হিসেবে একসময় পরিচিত ছিল বেসিক ব্যাংক। এই ব্যাংকে লুটপাট শুরু হয় আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে ধরা পড়ে, ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শেখ আবদুল হাই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংক ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই দেয়া হয় নিয়ম ভেঙে। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। অর্থনীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলার খবর পুরনো। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। যেহেতু ব্যাংকিং খাতের টাকা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের আমানত, তাই এ খাতের দুর্বৃত্তদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই। বর্তমানে ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা সমাধানে আমাদের ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রাজনৈতিকভাবেই পরিবর্তন আসে। এতে ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে কোটি কোটি টাকা লেনদেন ছাড়া এমডি ও সিইও নিয়োগ হয় না। নিয়োগের পেছনে যারা টাকা ব্যয় করে তারা মূলত কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক দলের নেতারা আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকের পরিচালকরা অনেক সময় প্রভাব বিস্তার করে ঋণ অনুমোদন করেন। অনেক সময় যথাযথ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান না করে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করা হয়। এসব ঋণ সময়ের ব্যবধানে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও আমাদের সব উচ্ছ¡াস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে, এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দারুণ অস্বস্তি রয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়াই এর প্রমাণ। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হলে প্রথমেই ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়