হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

বিএনপির দুর্গে নৌকার দাপট : রাসিক নির্বাচন

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান ও আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী থেকে : রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এবার বিএনপি-জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকায় তার জয়ের ব্যাপারটি প্রায় নিশ্চিত। যদিও মহান মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী এখানকার পরিসংখ্যান আওয়ামী লীগের পক্ষে নয়। জাতীয় সংসদ ও সিটি নির্বাচনের আগের হিসেব-নিকেশ অনুযায়ী, এ সিটিতে শক্ত অবস্থান রয়েছে বিএনপির।
এবার রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দেন চারজন। আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়াও ফরম জমা দেন জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুরশিদ আলম ফারুকী, জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার। এদের মধ্যে গত সোমবার রাতে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে এসেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো রাসিক নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে ৬৯ হাজার ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মতিন খান পান ২৩ হাজার ভোট। ২০০২ সালে সিটি নির্বাচনে আবারো বিএনপির মিনু জয় পান। তবে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের বর্তমান সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা অভিযোগ তুলেছিলেন, জোর করে তাকে পরাজিত করানো হয়েছে। নাগরিক কমিটির ব্যানারে আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচন বর্জন করে।
সূত্র বলছে, ২০০৮ সালে নাগরিক কমিটির ব্যানারে আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ১৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে বুলবুল অভিযোগ তোলেন, কারসাজি করে তাকে হারানো হয়েছে। বিএনপির দুজন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে প্রায় ২০ হাজার ভোট পান। ২০১৩ সালে ৪৭ হাজার ভোটে আওয়ামী লীগের লিটনকে পরাজিত করে মেয়র হন বিএনপির বুলবুল। আর ২০১৮ সালে আবারো জয় তুলে নেন লিটন।
তথ্যমতে, অতীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকা রাজশাহী সদর আসনের অন্তর্ভুক্ত। স্বাধীনতাপরবর্তী ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ উপনির্বাচনে সদর আসনে (তৎকালীন পবা-বোয়ালিয়া) জাসদ প্রার্থী ময়েন উদ্দিন আহমেদ মানিকের কাছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হাদির ভরাডুবি হয়। জামানত বাজেয়াপ্ত হয় তার। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলু অল্পের জন্য জামানত বাজেয়াপ্ত থেকে রক্ষা পান। ওই নির্বাচনে ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য হন বিএনপির সদ্যপ্রয়াত নেতা এডভোকেট কবির হোসেন। ২৪ হাজার ভোট পেয়ে চতুর্থ হন আওয়ামী লীগের ভুলু। ওয়ার্কার্স পার্টির বাদশা প্রায় ৩৬ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। আর ৪২ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। ১৯৯৬ সালে আবারো বিপুল ভোটে জয় পান বিএনপির কবির হোসেন। দ্বিতীয় হন আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০০১ সালেও এ আসন দখলে থাকে বিএনপির। এবার সাংসদ হন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।
২০০৮ থেকে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তবে এসব সমীকরণ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কথা বললেও নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই বিএনপির। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ভোরের কাগজকে বলেন, এসব ভোট নিয়ে তো জনগণেরই কোনো আগ্রহ নেই। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তবেই আমরা ভোটে যাব।
এদিকে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে সবাই নির্ভার থাকলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ঘটেছে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা। সম্প্রতি রাসিকের ৩, ৭, ১৪, ১৯, ২১, ২৩ ওয়ার্ডে এসব ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হয়। প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও উত্তাপ ছড়ান। কাউন্সিলর পদ ঘিরে নগরীতে বর্তমানে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। অবশ্য প্রচার-প্রচারণায় তৈরি হয়েছে বাড়তি আমেজ। পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগরীর অলিগলি। মোড়ে মোড়ে অব্যাহত রয়েছে মাইকিং ও গণসংযোগ। যদিও একটি অংশের দাবি, নির্বাচনে জনসাধারণের কোনো আগ্রহ নেই। ভোট দিতে যাওয়া নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। একটি সূত্র বলছে, রাসিকের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতেই আশঙ্কা রয়েছে সহিসংতার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়