হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

‘পাঁচ শর্ত মানলেই মিলবে গুপ্তধন স্বর্ণের হাঁড়ি-পুতুল’

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : মাঝরাতে ফোন বেজে ওঠে ইয়াসিন মিয়ার। ফোন রিসিভ করতেই, বিপরীত পাশ থেকে ভেসে আসে গায়েবি আওয়াজ, কুরআনের বিভিন্ন আয়াত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফোন করা ব্যক্তি বলতে থাকেন, ইয়াসিনের জীবনের নানা সমস্যার কথা। এতে তাজ্জব বনে যান ইয়াসিন। আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকেন ওই লোকের কথা। নিজেকে জ¦ীনের বাদশা ও আল্লাহর অলি পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তি সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, পাঁচ শর্ত মানলেই সমস্যা সমাধানের সঙ্গে মিলবে গোপন গুপ্তধন স্বর্ণের ৭টি হাড়ি ও একটি পুতুল। যা কখনো প্রকাশ করা যাবে না। আর এই গোপন গুপ্তধনের লোভে পড়ে জ¦ীনের বাদশা পরিচয় দানকারী ওই ব্যক্তিকে লাখ লাখ টাকা পাঠিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান ইয়াসিন। কিন্তু গুপ্তধনের দেখা আর পাননি।
মূলত প্রতারণার শিকার হন ইয়াসিন মিয়া। বিষয়টি বুঝতে পেরে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মামলা (নম্বর-৬) দায়ের করেন তিনি। পরে জ¦ীনের বাদশা পরিচয়দানকারী প্রতারক মো. উজ্জ্বল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ)। শুধু ইয়াসিন মিয়াই নয়, জ¦ীনের বাদশা পরিচয় দিয়ে অনেকের কাছ থেকেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক। ডিবি বলছে, জ¦ীনের বাদশা পরিচয় দেয়ার পর তাদের কথার ফাঁদে যারা পা দিত, তারাই হয়ে উঠত এদের মূল টার্গেট। যারা বিরক্তি দেখাত তাদের সঙ্গে আর কথা বাড়াত না কথিত এই জ¦ীনের বাদশা।
ডিবি সূত্র জানায়, প্রতারণার কৌশল হিসেবে পাঁচটি শর্তের কথা বলতেন কথিত জ্বীনের বাদশা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা উজ্জ্বল মিয়া। সেগুলো হলো- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, মিথ্যা কথা না বলা, কুরআন তেলাওয়াত করা, গুপ্তধনের কথা গোপন রাখা ও গুপ্তধন পাওয়ার পর কিছু অংশ দান করা। পরে স্বর্ণের পুতুল পাইয়ে দেয়া, ৭টি স্বর্ণের হাড়ির খোঁজ দেয়া, স্বর্ণের হাড়ি ভেঙে গেছে জোড়া দিতে হবে, হাড়ির ভেতরে স্বর্ণ গলে যাওয়ায় স্বর্ণ কিনে দিতে হবেসহ নানা কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। সূত্র আরো জানায়, উজ্জ্বল মিয়ার বড় ভাই ৩ বছর ধরে এই প্রতারণা করে আসছেন। তার মাধ্যমেই জ্বীনের বাদশা সাজার দীক্ষা নিয়ে দেড় বছর আগে প্রতারণা শুরু করেন উজ্জ্বল।
এই চক্রের খপ্পড়ে পড়া ইয়াসিন মিয়া মামলায় উল্লেখ করেছেন, মাঝরাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি (উজ্জ্বল) নিজেকে জ্বীনের বাদশা ও আল্লাহর অলি পরিচয় দিয়ে তার বিশ্বাস অর্জন করে। পরে জায়নামাজ কেনার কথা বলে ৪ হাজার ৭০০ টাকা নেয়। পরে স্বর্ণের পুতুলের লোভ দেখানো হয়। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ব্রিজের নিচে স্বর্ণের পুতুল রাখা আছে জানিয়ে প্রতারক উজ্জ্বলের ভাই রুবেল ৫ লাখ টাকা নেয়। ভুয়া স্বর্ণের পুতুলটি হাতে পাওয়ার পর এই কথা কাউকে বলতে মানা করা হয়। এরপর উজ্জ্বল জানায়, তাকে ৭টি স্বর্ণের হাড়ি দেয়া হবে। যার মধ্যে ৩টি ভেঙে গেছে। ওই হাড়িগুলো মেরামতের জন্যে ৩ ভরি স্বর্ণ কিনে না দিলে তার (ইয়াসিন) পরিবারের সবার ক্ষতি হবে। এ বাবদ নেয় ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। হাড়ির স্বর্ণ জমাট বেধে গেছে জানিয়ে নেয় ২ লাখ

৪০ হাজার টাকা। এভাবে নানা বাহানায় ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।
ডিবি সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জুয়েল রানা ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতারণার শিকার ইয়াসিন মিয়ার দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে গত ৯ জুন গোবিন্দগঞ্জ থেকে উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সে আর কতগুলো প্রতারণা করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়