সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

পাহাড় ধসের ভয়াল স্মৃতিতে আঁতকে ওঠে রাঙ্গামাটিবাসী : এবারো ভারি বৃষ্টির আগাম সতর্কতায় আতঙ্ক

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটির ভয়াবহ পাহাড় ধসের মর্মান্তিক ঘটনার ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাতে টানা তিন দিনের ভারি বৃষ্টি আর বজ্রপাতে রাঙ্গামাটিতে ঘটে যায় স্মরণকালের পাহাড় ধসের ঘটনা। ভয়াবহ এ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনা সদস্যসহ নারী পুরুষ ও শিশুসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে শহরের মানিকছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্পের নিচে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের উপর ধসেপড়া মাটি অপসারণ করতে গিয়ে পুনরায় পাহাড় ধসের মাটি চাপা পড়ে নিহত হন ওই ক্যাম্পের দুই কর্মকর্তাসহ ৫ সেনা সদস্য।
রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মানিকছড়ি শালবাগান অংশে ১০০ মিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে দীর্ঘ ৯ দিন সারাদেশের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। বছর ঘুরে দিনটি ফিরে এলে রাঙ্গামাটিবাসীর মনে দেখা দেয় আতঙ্কের সেই ভয়াল স্মৃতি। আর এই ঘটনার ছয় বছর পরও এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় ভারিবৃষ্টির আগাম সতর্কতায় সে আশঙ্কা সবাইকে ভাবাচ্ছে।
নিহত সেনা সদস্যরা হলেন-মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, করপোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক, সৈনিক মো. শাহিন আলম ও মো. আজিজুর রহমান।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে রাঙ্গামাটি সদরে ৬৬ জন, জুরাছড়ি উপজেলায় ৬ জন, বিলাইছড়িতে ২ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন এবং কাউখালী উপজেলায় ২১ জন মিলে মোট ১১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে শিশু-৩৩, মহিলা-৩২, পুরুষ ৪৮ জনের মরদেহ পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের ১৩ জুনের পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটিতে ব্যাপক প্রাণহানির সঙ্গে ব্যাপক ভৌত অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়। ঘরবাড়ি আছে এমন পাহাড় যেমন ভেঙেছে, তেমনি ঘরবাড়ি ছিল না এমন অসংখ্য পাহাড়ও ভেঙে পড়ে। আবার ঝোঁপ জঙ্গল গাছপালায় ভরপুর এমন পাহাড়ও ভেঙে পড়ে। এক কথায় সব রকম পাহাড়েই মাটি ধসে পড়ে। এটার ব্যাপ্তি, বিস্মৃতির গভীরতা অনেক বেশি ছিল।
টানা তিন দিনের প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটির এত লোকের প্রাণহানি, ঘরবাড়ি, সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুতের এতবড় ক্ষতি হবে সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি। সেদিন মুহূর্তেই সব দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি।
১৩ জুন রাত থেকেই শুরু হয়েছিল গগণবিদারি আওয়াজে বজ্রপাতসহ ভারি বৃষ্টি। ভয়ে আতঙ্কে সেই রাত কাটাতে হয়েছিল রাঙ্গামাটির মানুষকে। ভোর হওয়ার পর রাঙ্গামাটি শহরের ভেদভেদী, মোনতলা, রাঙ্গাপানি, শিমুলতলি, মুসলিম পাড়া ও লোকনাথ মন্দির এলাকা, সদর উপজেলার মগবান ও সাপছড়ি ইউনিয়নসহ ৫টি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে থাকে। সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে।
পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের শালবন এলাকায় ১০০ মিটার রাস্তা ধসে গিয়ে একেবারে বিলীন হয়ে যায়। দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে রাঙ্গামাটির ৯ দিন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। বিভিন্ন আন্তঃসড়কের ১৪৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। পাহাড় ধসের বিপর্যয়ে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক ছাড়াও রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক, রাঙ্গামাটি-বড়ইছড়ি ও রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে যায়।
এছাড়া রাঙ্গামাটির বৈদ্যুতিক গ্রিড লাইনে পোল ও লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে রাঙ্গামাটি শহরে ৩ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। সেনাবাহিনী ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের প্রচেষ্টায় তিন দিনের মাথায় বিদ্যুৎ ও দশ দিনের মধ্যে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামে সড়ক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়। এদিকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি নৌপথে লঞ্চ দিয়ে পানি, জ্বালানি তেল ও পণ্য পরিবহণসহ লোকজনের চলাচলের ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন।
গৃহহারা হয়ে রাঙ্গামাটির ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নেয়। সেনাবাহিনী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানি ও খাবার সরবরাহ করে।
রাঙ্গামাটির সেই ভয়াল পাহাড় ধসের ঘটনার ছয় বছর পার হলেও এখনো অবস্থার কোনো পরিবর্তন

হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো আজো বাস করছেন পাহাড়ের গায়ে। প্রতি বছরের মতো বর্ষার শুরুতেই এবারো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে ও উপজেলাগুলোতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের বৃষ্টির সময় নিরাপদে সরে যেতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহরের বেশকিছু স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে আবারো অসংখ্য বাড়িঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তারা চায় সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী পুনর্বাসন।
দিনটির কথা স্মরণ করে এ বছরও রাঙ্গামাটি জেলায় প্রাণহানি এড়াতে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানু রহমান। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটি শহরের ৩৩টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৯টির অধিক আশ্রয়কেন্দ্র। তবে ভারি বৃষ্টিপাত হলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চাইলে তারা অনীহা প্রকাশ করে। তখন আমাকে ফোর্স করতে হয়, বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিতে হয়।
তবে পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলকে বলা হয়েছে। সরকারও চাচ্ছে যারা পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাদের তালিকা করে স্থায়ী পুনর্বাসন যাতে করা যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়