সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

পাহাড় কাটা বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিন

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছর বর্ষায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোতে পাহাড় ধসে মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় ধসে পড়ে না। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ের উপরিস্থিত গাছপালা কেটে ফেলা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে প্রায়ই ধসে পড়ছে পাহাড়। গত রবিবার চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড় কাটা বন্ধে এক মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে সম্মিলিত কমিটি গঠন, বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন, হটলাইন প্রতিষ্ঠা, সিডিএ কর্তৃক পাহাড়ি এলাকায় অনুমোদন না দেয়া, পাহাড়ি এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করার দাবি জানান চট্টগ্রামের পরিবেশকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) মতে, হাইকোর্ট এবং সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি হওয়া আদেশ উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে পাহাড় কাটা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক দুই বর্গকিলোমিটারে নেমে আসে। এছাড়া ১৯৮৩ সালে সরকারি আদেশ অনুযায়ী চট্টগ্রামের কোথাও কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেন- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি করা আদেশ এবং উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করেই এই অঞ্চলে পাহাড় কাটা হয়েছে। এটা স্পষ্ট, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে না পারলে পাহাড়ধস রোধ করা সম্ভব নয়। এছাড়া পাহাড় কাটার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। সামনে বর্ষা মৌসুম। বর্ষায় পাহাড় ধসে প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ংকর বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে আমাদের সচেতন হতে হবে। নির্বিচারে পাহাড় কেটে অসংখ্য ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। এমনকি সরকারি উদ্যোগেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড়ধস। মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নি¤œ আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম মহানগর এবং আশপাশের এলাকায় পাহাড় ধসে ২৪৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বর্ষা এলে ঢালের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসনের নানা উদ্যোগের কথা জানা যায়। শুধু বর্ষায় বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড়ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। এসবের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি, পাহাড় রক্ষায় সরকারের শীর্ষ মহলকেই এগিয়ে আসতে হবে। পাহাড় কাটা রোধ ও পাহাড়ের সুরক্ষায় সমন্বয় সেল বা আলাদা এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এর কোনো বিকল্প নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়