কাগজ প্রতিবেদক : কার্যকারিতা হারাচ্ছে এন্টিবায়োটিক। আশঙ্কার বিষয় হলো বর্তমানে রোগীদের শরীরে আইসিইউতে রাখা রিজার্ভ এন্টিবায়োটিক যেমন- মেরোপেনামও কাজ করছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের শতকরা ৫২ শতাংশ রোগীর এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে। হৃদরোগ, কিডনি, শিশু ও নবজাতক বিভাগের রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে বছরে এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স ভোগা রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা ৭ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে ১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিএসএমএমইউয়ে ‘এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। গতকাল রবিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে সেন্ট্রাল সাব কমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম আলাদা আলাদা ৩টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা।
সেমিনারে জানানো হয়, শুধু চিকিৎসকদের একার পক্ষে এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স প্রতিরোধ সম্ভব নয়। কারণ পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত খাদ্যে বিশেষ করে, মুরগির মাংসে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত ৫৫ শতাংশ। মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরনের এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষি খাতও এর আওতামুক্ত নয়। এসব খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে এন্টিবায়োটিক সেবনে রোগ নিরাময় হচ্ছে না। ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্বে রোগীদের বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, ২০৫০ সাল নাগাদ এই ব্যয় ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা বাস্তবায়ন না করা গেলে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার ফলে করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হবে। তাই রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে এন্টিবায়োটিক কেনা বেচা করতে না পারে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তারা বলেন, এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্সের মতো বৈশ্বিক সমস্যা বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত, সুপরিকল্পিত, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর হাসপাতালসমূহে এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। বিএসএমএমইউতেও এই প্রোগামটি অতি দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এটি সফলভাবে চালু করতে পারলে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার, রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময়কাল কমানো সম্ভব হবে এবং এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে। এর জন্য দরকার রোগের জীবাণু শনাক্ত এবং এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নির্ণয় করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা। এর জন্য মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল চিকিৎসক, হাসপাতাল প্রশাসন, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত কার্যক্রম নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।