পেঁয়াজ-সবজির দামে স্বস্তি, মাছ চড়া

আগের সংবাদ

ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

পরের সংবাদ

আমাজনে বিমান বিধ্বস্ত : ৪০ দিন পর যেভাবে উদ্ধার হলো ৪ শিশু

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার আমাজন অঞ্চলের গহীন জঙ্গল থেকে ৪ শিশুকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল শনিবার কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো উদ্ধারকৃত শিশুদের ছবি টুইট করে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন। ছবির সঙ্গে যুক্ত বার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের জন্য, পুরো দেশের জন্য আনন্দের একটি দিন। এই চার শিশু ৪০ দিন আগে জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিল। তাদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।’ টুইটবার্তায় প্রেসিডেন্ট আরো জানান, কয়েক সপ্তাহ জঙ্গলে বসবাস, খাবার ও পানির অভাবে শিশুরা খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে কোনো কোনো আঘাত বা অসুস্থতায় তারা আক্রান্ত হয়নি।
যে ছবিটি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে টুইট করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সেখানে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গলে খানিকটা ফাঁকা একটি জায়গায় বসে আছে ওই চার শিশু; তাদের ঘিরে পেছনে দাঁড়িয়েছেন কয়েকজন সেনাসদস্য।
পরে কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে শিশুদের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছে।
উদ্ধারকৃত এই শিশুদের মধ্যে ৩ জন মেয়ে এবং একজন ছেলেশিশু। তারা সবাই সহোদর ভাই-বোন; বয়স যথাক্রমে ১৩ বছর, ৯ বছর, ৪ বছর ও ১ বছর। ছেলেশিশুটি বয়সে সবার ছোট।
জঙ্গলের যে অংশ থেকে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এই শিশুদের সেটি কলম্বিয়ার আমাজন অঞ্চলীয় প্রদেশ কাকুয়েতা এন্ড গুয়াভিয়েরের অন্তর্ভুক্ত। স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা এএফপি ও রয়টার্স জানিয়েছে, এই শিশুরা সবাই কলম্বিয়ার হুইতোতো নৃগোষ্ঠীর। তাদের বাড়ি গুয়েভারিয়ে প্রদেশের সান জোসে দেল গুয়েভারিয়ে শহরে। গত ১ মে একটি সেনা-২০৬ উড়োজাহাজে করে তাদের মা এবং এক আত্মীয়ের সঙ্গে কলম্বিয়ার আরারাকুয়ারা প্রদেশে নানার বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিল।

কিন্তু মাঝ আকাশে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্র্যাশল্যান্ডিংয়ে বাধ্য হন বিমানচালক। তার আগে নিকটবর্তী বিমানবন্দরে যোগাযোগ করে সাহায্যের জন্য সংকেত পাঠিয়েছিলেন তিনি।
ক্র্যাশল্যান্ডিংয়ের জেরে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন বিমানটির পাইলট, ওই শিশুদের মা এবং আত্মীয়; কিন্তু বিস্ময়করভাবে বেঁচে গেছে শিশুরা। এমনকি তাদের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়নি।
ক্র্যাশল্যান্ডিংয়ের আগে পাইলট যে সংকেত পাঠিয়েছিলেন, সেই সংকেতকে সূত্র হিসেবে ধরে নিয়েই এই শিশুদের উদ্ধার অভিযান শুরু করে কলম্বিয়া সেনাবাহিনীর একটি দল, যারা জঙ্গলে টিকে থাকার জন্য বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন।
কলম্বিয়ার সরকারি সূত্রে জানা গেছে বিশেষ এই অভিযানে অংশ নেয়া এই সৈন্যদলটির মোট সদস্য ছিল ১৬০ জন। এছাড়া ওই অঞ্চলের জঙ্গল সম্পর্কে অভিজ্ঞ আদিবাসী বিভিন্ন দলের ৭০ জন বেসামরিক মানুষও সেনাদের সহায়তা করেছেন।
সেনাসদস্যরা বলেছেন তাদের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল জঙ্গলে দুর্ঘটনার স্থানটি খুঁজে বের করা। সেটি খুঁজে বের করার পর ওই শিশুদের পায়ের ছাপ, ফেলে দেয়া ডায়াপার, অর্ধভুক্ত ফল- ইত্যাদি চিহ্ন ট্রেক করে দুর্ঘটনাস্থলের ৫ কিলোমিটার দূরে তাদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
জঙ্গলের যে এলাকায় গত ৫ সপ্তাহ ঘুরে বেড়িয়েছে এই শিশুরা- সেটি জাগুয়ার, বিষধর সাপ ও অন্যান্য শিকারি প্রাণীতে পরিপূর্ণ। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের মাদক পাচারকারীরাও তাদের পণ্য চালানের রুট হিসেবে এই এলাকাটি ব্যবহার করে।
শিশুদের নিখোঁজের পর থেকেই তাদের নানা ফিডেনসিও ভ্যালেন্সিয়া নিয়মিত পুলিশ ও সরকারি উদ্ধারকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘হুইতোতো গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের শিশুকাল থেকেই মাছ ধরা, শিকার করা ও জঙ্গলে টিকে থাকার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আমার মেয়ে মারা গেছে, কিন্তু নাতি-নাতনিরা বেঁচে আছে- এটাই বড় সান্ত¡না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়