তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো তিন ব্যাংকারের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

বিপাকে রোহিঙ্গারা, বিপাকে বাংলাদেশ : ভূ-রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে কমল খাদ্য সহায়তা > এক বেলা খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ কমে ৯ টাকা

পরের সংবাদ

বর্জ্যরে দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত নষ্ট হচ্ছে ফসল, মরছে মাছ : অসহায় পরিবেশ অধিদপ্তর

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় মিলের বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খাল। আর দুর্গন্ধযুক্ত এসব খালের কালচে পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করায় নষ্ট হচ্ছে ফসল। মারাত্মক দূষণের কারণে এলাকার পুকুর-জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। পাশাপাশি বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এলাকার মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার খাজানগর, কবুরহাট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার খাজানগরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধান-চালের মোকাম। বটতৈল ইউনিয়ন থেকে শুরু করে খাজানগর, কবুরহাট হয়ে আইলচারা পর্যন্ত বড় আকারের অর্থাৎ ভারী অটোমেটিক রাইসমিল রয়েছে ৫৫টি। আর হাসকিং এবং প্রসেসিং মিলিয়ে মিলের সংখ্যা প্রায় ৪৫০টি। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিনশর মতো মিল চালু রয়েছে। এসব রাইসমিলের কোনোটিরই নিজস্ব বর্জ্য পরিশোধনাগার নেই। মিলের দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত পানি পাইপের মাধ্যমে সরাসরি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের খালে। যা চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। আবার পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠছে। দূষিত পানির সঙ্গে ধানের চিটা, কুঁড়া ও ছাই থাকায় মুহূর্তের মধ্যেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালগুলো। দূরের রাইসমিলগুলোও পাইপলাইনের মাধ্যমে বর্জ্যরে সংযোগ রেখেছে খালের সঙ্গে। রাইসমিলের এসব বর্জ্য খালের পানিতে মিশে একদিকে যেমন পানিকে দূষিত করছে, অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ছে এই এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এখানকার মাত্র ৩০টি চালকলের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি সবগুলোই ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটালেও চালকল মালিকরা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারছে না।
এদিকে রাইসমিলের কারণে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ওই এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকার মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। খালের পানিতে রাইসমিলের বর্জ্য এসে মেশায় দুর্গন্ধে গোটা এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। খাজানগর এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, রাইচ মিলগুলোর বর্জ্যরে কারণে এ এলাকার কোনো ফসল ভালো হয় না। মাঠের পানিতে নামলেই হাত-পা চুলকায়। এ কারণে শ্রমিকরা এখানে কাজ করতে চায় না।
স্থানীয় চা দোকানি রহমত বলেন, মিলের চিটা, ময়লা সব এই খালের পানিতে গিয়ে মিশে যায়। যার কারণে এই এলাকায় মশা-মাছির অত্যাচার বেশি। বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির বলেন, মিল মালিকদের এ বিষয়ে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কেউই কথা শোনেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছরই এসব খাল পুনঃখনন করে। কিন্তু রাইসমিলের বর্জ্যরে কারণে খাল ভরে যায়।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, খাজানগর এলাকার রাইসমিলগুলোর বর্জ্যরে কারণে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খাল কিছুদিন পরপরই ভরাট হয়ে যায়। যে কারণে বারবার পরিষ্কার করা সত্ত্বেও কোনো কাজে আসে না। আবার মিল মালিকদের অনেকবার খালে বর্জ্য না ফেলার জন্য অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয় না। বাংলাদেশ অটোরাইসমিল ওনার্স এসোসিয়েশন কুষ্টিয়ার সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ আমরা করতে চাই না। তবে সরকার যদি এখানে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে উদ্যোগ নেয়, তাহলেই কেবল এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়