শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা) থেকে : চলতি বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম বারের মতো ১ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে। বারি মিষ্টি আলু ৮ এবং ১২ জাতের এ আলু চাষ করে কৃষক অত্যন্ত খুশি।
ডুমুরিয়া উপজেলার খনিয়া গ্রামের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক আবুহানিফ মোড়ল বলেন, কৃষি অফিস থেকে প্রথম বারের মতো লতি ও সার পেয়ে ২০ শতক জমিতে বারি মিষ্টি আলু ১২ জাতের আলু চাষ করি। আগে লবণাক্ততার কারণে যেখানে কেবলমাত্র একটি ফসল হতো এবং আমন পরবর্তী সময়ে পতিত থাকত, সেই জমিতে ৬২ মণ আলু পেয়েছি। উৎপাদন খরচ কম ও ভালো মূল্য পাওয়ায় আগামীতে আমিসহ অনেক কৃষক এটির চাষ করবে এবং আগামীতে এর আবাদ বৃদ্ধি পাবে।
সলুয়া গ্রামের কৃষক রনজিত মণ্ডল বলেন, প্রদর্শনী সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পেয়ে আমি ২০ শতক জমিতে প্রথম বারের মতো বারি মিষ্টি আলু ০৮ জাতের আলুর আবাদ করেছিলাম এবং ৪২ মণ আলু পেয়েছি, বাজার মূল্যও গোল আলুর তুলনায় ভালো এবং ঝুঁকি কম, এজন্য আগামীতে এর আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে। উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর ব্লকে কৃষক অলিয়ার রহমান শেখ, প্রদর্শনী ২০ শতক জমিতে মেটে আলুর চাষ করে ৩০ মণ আলু পেয়েছে। এতে খরচ বাদে ১৮ হাজার টাকা লাভ পেয়েছেন। এছাড়া পরবর্তী সময়ে সে কাটিং সংরক্ষণ করে এবং নিজ উপজেলাসহ তালা উপজেলায় কাটিং বিক্রি করে ২৫ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করেন। তাছাড়া ১৫-২০ জন এলাকার কৃষককে কাটিং স¤প্রসারণ করেছেন। তিনি বলেন কৃষি অফিসের উপসহকারী করুনা মণ্ডলের মাধ্যমে মিষ্টি আলু চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বল্প পরিসরে অল্প জমিতে চাষ করি। স্বল্প খরচে ভালো ফলন ও ভালো দাম পেয়ে আমি খুশি। আমার দেখা দেখি অনেকে মেটে আলু চাষে আগ্রহ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, এটি স্বল্প জীবনকালীন এবং অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ মূল্যের একটি সবজি। ডুমুরিয়ার আবহাওয়া এবং মাটি এটি চাষের জন্য উপযোগী এবং এ ফসলে ঝুঁকিও কম। এটি মাটিকে ঢেকে রাখে বলে মাটিতে অনেক দিন রস থাকে, আগাছা কম হয় এবং এর পাতা পচে উৎকৃষ্ট সার হয়। তিনি আরো বলেন, এটি স¤প্রসারণের জন্য আমরা কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষককে নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রদর্শনী সহায়তা দিচ্ছি এবং এটি স¤প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে এর আবাদ এবং এলাকা বৃদ্ধি পাবে।
কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি কৃষিবিদ মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আগে কন্দাল ফসল অনাদর অবহেলায় বিভিন্ন বাগান বাদাড়ে বিক্ষিপ্তভাবে জন্মাত, কন্দাল ফসল বলতেই নিরাপদ এবং উচ্চ মূল্যের, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা কৃষককে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করে এটি বাণিজ্যিক চাষাবাদ ও উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছি এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির জন্য এটি বাইরে রপ্তানির জন্য ও কাজ করছি। কন্দাল জাতীয় সবজি মিষ্টি আলু তাপ প্রয়োগের ফলে এর স্টার্চ ভেঙে প্রাকৃতিক শর্করা ‘মল্টোজ’য়ে পরিণত হয়।
পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে মিষ্টি আলুর উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়- মিষ্টি আলু উচ্চ আঁশজাতীয় খাবার যা কার্বোহাইড্রোটের জটিল যৌগ। ফলে তা শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
এটা বিটা ক্যারটিনের ভালো উৎস যা মূলত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এতে রূপান্তরিত হয়। এটা কেবল চোখের স্বাস্থ্যই ভালো রাখে না বরং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং বয়সের গতি ধীর করে।
প্রচলিত বিশ্বাস ও পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে অনুযায়ী, মিষ্টি আলু স্টার্চ বা মল্টোজের কারণে রক্তচাপ বাড়ায় না। এটা উচ্চ আঁশজাতীয় হওয়ায় তা ধীরে খরচ হয় যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। টাইপ টু ডায়াবেটিস দূরে রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে মিষ্টি আলু বেশ উপকারী।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।