কনস্টেবল বাদল হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

দুর্ভোগের অবসান চান নগরবাসী : সুপেয় জলের তীব্র সংকট জলজটের খুলনায়

পরের সংবাদ

সিলেটে ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ : হতাহত নির্মাণ শ্রমিকরা যাচ্ছিলেন পিকআপে

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ ও খালেদ আহমদ, সিলেট থেকে : সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এমন মর্মান্তিক খবরে গোটা সিলেটে শোক বিরাজ করছে। নিহত শ্রমিকদের পরিবারে চলছে আহাজারি। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সফররত নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেন।
সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মো. সিজিল মিয়া (৫৫), একলিম মিয়া (৫৫), হারিছ মিয়া (৬৫), সৌরভ মিয়া (২৭), সাজেদুর (৬০), বাদশা মিয়া (৩০), সাধু মিয়া (৫০), রশিদ মিয়া (৫০) ও মেহের (২৫), শান্তিগঞ্জ উপজেলার শাহীন মিয়া (৪০), দুলাল মিয়া (২৬) ও আওলাদ হোসেন (৫০), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের আমিনা বেগম (৪৫) এবং নেত্রকোনা বারহাট্টার আওলাদ মিয়া (৪০)। নিহতদের অধিকাংশের বাড়ি সুনামঞ্জের দিরাই ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, স্বজনদের মাধ্যমে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা গেছে। মরদেহগুলো সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকরা সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তারা সবাই ঢালাই কাজের শ্রমিক। প্রতিদিন সকালে তারা নগরীর আম্বরখানা ও উপশহর এলাকায় এসে জড়ো হন। সেখান থেকে তাদেরকে চুক্তির ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান ঠিকাদাররা। দুর্ঘটনার শিকার এই শ্রমিকরাও সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের ঢালাই কাজের জন্য পিকআপে করে যাচ্ছিলেন।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া পিকআপে প্রায় ৩০ জন শ্রমিক ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার

দিকে পিকআপটি দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুরে পৌঁছলে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আলুবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানাপুলিশ এবং সিলেট ও ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন পল্লব আহমদ (২৫)। বেলা ১১টার দিকে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ঢাকার দিক থেকে আসা ট্রাকটি যখন ডান পাশে এসে আমাদের পিকআপটিকে ধাক্কা দেয়, তখন খুব জোরে শব্দ হয়েছিল। ট্রাকটি দ্রুতবেগে আসছিল। মনে হয়, চালক ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। ধাক্কা খেয়ে আমাদের পিকআপ উল্টে যায়। আমি মাথায় আঘাত পাই। এরপর আর কিছু মনে নেই।’ পল্লব সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়ার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরের সাপ্লাই এলাকায় থাকেন।
হাসপাতালে শোকের মাতম, স্বজনদের আহাজারি : গতকাল বুধবার, সকাল পেরিয়ে দুপুর। ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সময় যত গড়াচ্ছে একে একে লোকজন জড়ো হতে শুরু করছেন হাসপাতালের মর্গের সামনে। তাদের চোখেমুখে কান্নার ছাপ। কেউ বিলাপ করছেন, কেউবা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন। তাদের মধ্যে কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ স্বামী আবার কেউবা হারিয়েছেন ভাই। স্বজন হারানোর বুকফাটা আর্তনাদে এসময় ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।
হাসপাতালে কথা হয় দুর্ঘটনায় আহত ঢালাই ঠিকাদার শের ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বড় ভাই সায়েদ নুর (৬০) মারা গেছেন। আমি আছি অথচ আমার ভাই নেই। আর কোনোদিন ভাইয়ের সঙ্গে কাজে যাওয়া হবে না। ভাই এভাবে হারিয়ে যাবেন আমি কল্পনাই করিনি।
বাবাকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন আহত মিজান। তিনি বলেন, বাবাকে নিয়ে সকালে কাজের জন্য ওসমানীনগরের তাজপুর যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনায় আমাদের গাড়ির লোকজন ছিটকে গিয়ে ট্রাকের নিচে এবং রাস্তার ওপর পড়ে। ঘটনাস্থলে আমার বাবাসহ ১১ জন এবং হাসপাতালে আসার পর ৩ জন মারা যান। কীভাবে কী হয়ে গেল তা বুঝতে পারিনি।
অভিভাবকতুল্য চাচাতো ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মর্তুজ আলী। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই আর নাই। আজ থেকে আমার আর কেউ আপন রইল না।’ কান্নারত রাজিয়া বেগম বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেল। এভাবে চলে যাবেন জানলে ভাইকে কাজে পাঠাতাম না।
হাসপাতালে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সফররত নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বুধবার একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সিলেটে আসেন তিনি। সকালে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সরাসরি চলে যান এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এসময় সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রথম কাজ নিহতদের চিহ্নিত করে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা, তাদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে সরকার থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেন। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলে জানান তিনি। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া।
হতাহতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান : সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হতাহতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। জানা যায়, সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে হতাহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়