কনস্টেবল বাদল হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

দুর্ভোগের অবসান চান নগরবাসী : সুপেয় জলের তীব্র সংকট জলজটের খুলনায়

পরের সংবাদ

সম্পূরক বাজেট সমাচার

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ বাজেট বর্ষের সম্পূরক এবং ২০২৩-২৪ বাজেট বর্ষের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপিত হয়েছে। প্রথা অনুযায়ী সম্পূরক বাজেট আগে এবং পরে প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পাস হওয়ার কথা। সম্পূরক বাজেট ব্যবহারিক অর্থে সংশোধিত বাজেট বটে। চলতি অর্থবছরে অনুমোদিত বাজেটের অতিরিক্ত ব্যয়ের এবং অনুমোদিত আয়ের কম আয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থ বিভাগ থেকে একটি সম্পূরক বাজেট বিবৃতি দেয়া হয়ে থাকে। সংসদে এ বিবৃতির ওপর আলোচনা হয়ে থাকে সেখানে সংসদ জবাবদিহি চাইতে পারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে কম আয় এবং সুনির্দিষ্টভাবে বেশি ব্যয় সম্পর্কে। বাজেটীয় নিয়ন্ত্রণ এবং যথা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে এ ধরনের কম আয় কিংবা বেশি ব্যয় সম্পর্কে সংসদই সাংবিধানিকভাবে প্রযোজ্য প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থা। সংবিধানে সম্পূরক ও অতিরিক্ত মঞ্জুরি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৯১-এ নিম্নরূপ বিধান দেয়া হয়েছে।

সম্পূরক ও অতিরিক্ত মঞ্জুরি
৯১। কোন অর্থ-বৎসর প্রসঙ্গে যদি দেখা যায় যে,
(ক) চলতি অর্থ-বৎসরে নির্দিষ্ট কোন কর্মবিভাগের জন্য অনুমোদিত ব্যয় অপর্যাপ্ত হইয়াছে কিংবা ওই বৎসরের বার্ষিক আর্থিক বিবৃতিতে অন্তর্ভুক্ত হয় নাই, এমন কোন নূতন কর্মবিভাগের জন্য ব্যয় নির্বাহের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, অথবা
(খ) কোন অর্থ-বৎসরে কোন কর্মবিভাগের জন্য মঞ্জুরিকৃত অর্থের অধিক অর্থ ওই বৎসরে উক্ত কর্মবিভাগের জন্য ব্যয়িত হইয়াছে, তাহা হইলে এই সংবিধানের দ্বারা বা অধীন সংযুক্ত তহবিলের উপর ইহাকে দায়মুক্ত করা হউক বা না হউক, সংযুক্ত তহবিল হইতে এই ব্যয় নির্বাহের কর্তৃত্ব প্রদান করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং রাষ্ট্রপতি ক্ষেত্রমত এই ব্যয়ের অনুমিত পরিমাণ-সংবলিত একটি সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি কিংবা অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ-সংবলিত একটি অতিরিক্ত আর্থিক বিবৃতি সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করিবেন এবং বার্ষিক আর্থিক বিবৃতির ন্যায় উপরি-উক্ত বিবৃতির ক্ষেত্রে (প্রয়োজনীয় উপযোগীকরণসহ) এই সংবিধানের ৮৭ হইতে ৯০ পর্যন্ত অনুচ্ছেদসমূহ প্রযোজ্য হইবে।
সংযুক্ত তহবিল হতে বাজেটে মঞ্জুরিকৃত অর্থের অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের কর্তৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির, তবে ক্ষেত্রমত এই ব্যয়ের অনুমিত পরিমাণ সংবলিত একটি সম্পূরক বিবৃতি সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে এবং [তা অনুমোদনের ক্ষেত্রে] সংবিধানের ৮৭ থেকে ৯০ অনুচ্ছেদগুলো প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে ৯০ অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (২) অনুযায়ী, কোন মঞ্জুরি-দাবিতে সম্মতি দানের বা সম্মতিদানে অস্বীকৃতির কিংবা মঞ্জুরি দাবিতে নির্ধারিত অর্থ হ্রাস-সাপেক্ষে তাহাতে সম্মতি দানের ক্ষমতা সংসদের থাকিবে।
জাতীয় সংসদেও কার্যপ্রণালি বিধির ১২৩ ও ১২৪ ধারায় সম্পূরক ও অতিরিক্ত এবং ঋণের ওপর নিম্নরূপে আলোচনা ও ভোট নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বিধৃত রয়েছে-
১২৩। সম্পূরক ও অতিরিক্ত মঞ্জুরি এবং ঋণের ওপর ভোট-
মঞ্জুরি-দাবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য পদ্ধতিতে স্পিকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় বা সুবিধাজনক বলিয়া বিবেচিত পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিবর্জনপূর্বক গৃহীত পদ্ধতি দ্বারাই সম্পূরক, অতিরিক্ত ও অসাধারণ মঞ্জুরি এবং ঋণের উপর ভোট নিয়ন্ত্রিত হইবে।
২২৪। সম্পূরক মঞ্জুরি সম্পর্কিত আলোচনার সীমা-
সম্পূরক মঞ্জুরি সম্পর্কিত বিতর্ক যে সকল দফার সমন্বয় উক্ত মঞ্জুরি গঠিত, তাহার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিবে এবং মূল মঞ্জুরি সম্পর্কে কোন আলোচনা উত্থাপন করা যাইবে না, কিংবা আলোচ্য বিশেষ দফাকে স্পষ্ট করিয়া তুলিবার জন্য প্রয়োজন না হইলে উহাতে নিহিত নীতি সম্পর্কেও আলোচনা উত্থাপন করা যাইবে না।
জাতীয় সংসদে সম্পূরক বাজেট সহসা সচকিত পাসের প্রথা পরিলক্ষিত হয়। এমনকি সম্পূরক বাজেট বিবৃতিটি নিয়েও আলোচনার অবকাশ থাকলেও নিকট অতীতে তার কোনো প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয় না। সুশাসন, জবাবদিহিতা, উপর্যুপরি নির্বাহী কর্ম বিভাগের আর্থিক কার্যাবলির ওপর আইন প্রণেতা সংসদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, জনস্বার্থে দায়িত্ব পালনের, জন প্রতিনিধিগণের কাছে প্রত্যাশিত থেকেই যায়।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তত্ত্ব এবং অনুশীলনে, বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়নে আইন পরিষদের ভূমিকা সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়। বাংলাদেশে আরোপিত ও প্রাক্কলিত দুই উপায়েই বাজেট প্রণীত হয়ে থাকে। আরোপিত বাজেটগুলো ওপরের নির্দেশনায় নিচের দিক থেকে প্রস্তুত করা হয়, অর্থাৎ সম্পদ কমিটি বাজেট বাস্তবায়নকারীদের কাছ থেকে বিস্তারিত প্রাক্কলন তথ্য সংগ্রহ না করেই উচ্চ-স্তরের বাজেট (প্রায়শই শুধু মৌলিক সংখ্যা) নির্ধারণ করে। এই মোট সাধারণ লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে, তারপর খাতওয়ারি বাজেট বিভাজন করা হয়। অন্যদিকে প্রাক্কলিত বা অনুমিত বাজেটগুলো নিচে থেকে তৈরি করা হয়, অর্থাৎ অপারেটিং কর্মীরা বিভিন্ন বিভাগ, কার্যাবলি এবং অন্যান্য উৎস থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। বটম-আপ বাজেটের যুক্তি এবং সুবিধা বহুগুণ : (১) নিচের কর্মীরা বাজেট প্রণয়নে অংশ নিলে তারা আরো অনুপ্রাণিত হতে পারে। (২) নিচের কর্মীরা বাজেট করা বস্তুর সঙ্গে নিয়মিত এবং বিস্তারিত যোগাযোগে থাকে। (৩) সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের তুলনায় তাদের কাছে আরো ভালো তথ্য রয়েছে। এবং (৪) তারা বাস্তবায়নের জন্য আরো দায়বদ্ধ। যাই হোক, বটম-আপ বাজেটিংয়ের অসুবিধাগুলোও উপেক্ষা করা উচিত নয়। বটম-আপ বাজেটিংয়ে বাজেটের ওপর কম নিয়ন্ত্রণ থাকে প্রধানত কারণ অপারেটিং কর্মীদের প্রায়ই জটিল দৃষ্টিভঙ্গির অভাব থাকে এবং শুধু বিভাগীয় বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করে, তাই জাতীয় উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। অপারেটিং কর্মীদের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকলে দুর্বল বাজেটের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাজেট তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ এবং নিচের কর্মীরা খুব সহজ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। সুতরাং বিভাগ এবং বিভাগীয় বাজেটের মধ্যে সমন্বয়ের সমস্যাগুলো আন্তঃসম্পর্কিত হওয়া দরকার। যদিও সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট প্রায়শই চূড়ান্ত সমষ্টিগত পরিসংখ্যানগুলোকে যেভাবেই সামঞ্জস্য করে, ভবিষ্যতে এ ধরনের বাজেটের কোনো বৈচিত্র্যকে বাস্তবের সঙ্গে ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন যদি এই সমন্বয়গুলো বড় পরিচালন বিশদে পরিকল্পিত না হয়। বাংলাদেশে জাতীয় বাজেট এমনভাবে তৈরি করা হয় যেটা টপ-ডাউন এবং বটম-আপ পদ্ধতির মাঝখানে থাকে। সম্পূরক বাজেট এবং প্রস্তাবিত বাজেট উভয়ই অর্থবছরের শেষ মাস জুনের প্রথম সপ্তাহে সংসদে পেশ করা হয়। আইন প্রণয়ন ও পদ্ধতি অনুযায়ী, সম্পূরক বাজেট পেশ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন করা হয় এবং প্রস্তাবিত বাজেট মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য ৩০ জুনের মধ্যে সংসদে পাস হয়। বিশেষ করে, সম্পূরক বাজেট প্রণয়ন এবং তা পাসের বিষয়ে পূর্বে উল্লিখিত সংবিধানের ৯১ অনুচ্ছেদ এবং বাংলাদেশ সংসদের কার্যবিধির ১২৩ এবং ১২৪ অনুচ্ছেদে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও জাতি খুব কমই সংসদে উপস্থাপন করা সম্পূরক বাজেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা বা বিতর্ক দেখে। এটি উপস্থাপনের পরের সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগই আইনসভা দ্বারা পাস করা হয়।
ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের বিশ্বের এই অংশে, বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রস্তুত করা হয়, উল্লেখযোগ্য যাচাই-বাছাই ছাড়াই সংসদ দ্বারা অনুমোদন করা হয় এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলো খুব বেশি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়িত হয় না। আবার সংসদে বাজেট বাস্তবায়নকারী দপ্তরের কাছ থেকে বাজেটবহির্ভূত আয়-ব্যয় সম্পর্কে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বা জবাবদিহিতা চাওয়া ব্যতিরেকেই মসৃণ উপায়ে সম্পূরক বাজেট গ্রহণ করা হয়। এর ফলে বাজেট বাস্তবায়নে কর্ম বিভাগ বাজেট অনুসরণ বা নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হয় না, দায়িত্বশীল হয় না। সংসদই ক্ষমতাপ্রাপ্ত সম্পূরক বাজেট অনুমোদনকালে বাজেট বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলতার ব্যাখ্যা চাওয়ার। বাজেট নাগরিক এবং সরকারের মধ্যে একটি মৌলিক সমঝোতা স্মারক এবং উভয়ই একে অপরের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য আইনত আবদ্ধ (দায়বদ্ধ)। বাজেটীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সাংবিধানিক দায়িত্ব। বাজেট শুধু কৌশলগত পরিকল্পনার রূপরেখা এবং উন্নয়ন এবং অ-উন্নয়ন আর্থিক ব্যবস্থার রোডম্যাপ নয়, জনগণের সম্পদ ও সেবা সৃষ্টিতে বাজেট বরাদ্দ ব্যবহারে শৃঙ্খলা সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও সংসদের দায়িত্ব। তাই যেহেতু সরকার এবং নাগরিক উভয়ই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে, তাই বাজেট প্রণয়ন, পাস এবং বাস্তবায়নে প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করা হয়।

ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ : উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়