প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২৩ , ১:০১ পূর্বাহ্ণ
গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রিদেশীয় সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েনের নতুন বার্তা দিচ্ছিল। অনেক কূটনীতিক বোদ্ধা এবং দৈনিক পত্রিকা বাংলাদেশ নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ছে তা-ই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিল। উদ্বেগ যখন চরমে, ঠিক তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যখন পারস্পরিক রেষারেষিতে ব্যস্ত, তখন মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে এক নিদারুণ চপেটাঘাত। রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই নতুন ভিসানীতি কে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার, অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করছেন কারা কারা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার গুজব ছড়াচ্ছেন মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের ওপর নতুন আর এক নিষেধাজ্ঞা।
গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার টুইটার পোস্টে বলেন, ‘আজ, আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রচারের জন্য একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছি। এই নীতির অধীনে যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকেবে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর নতুন ভিসানীতি আরোপ করতে পারি।’ ইতিহাস ঘাঁটলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে নিজদের পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর অহরহ নজির পাওয়া যাবে। এশিয়ার মানুষের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা কিংবা অভিজ্ঞতার কোনোটিরই কমতি নেই। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত ভূমিকার জন্য বাংলাদেশে পাকিস্তানের গণহত্যা, ১৯৭৫ সালে সিআইএর পরোক্ষ মদতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে সেনাশাসন প্রতিষ্ঠা করা, ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়ার যুদ্ধকে দীর্ঘয়িত যুদ্ধ, এবং ইন্দোনেশিয়ায় সক্রিয়ভাবে সুহার্তকে সহযোগিতা করে গণহত্যার পটভূমি রচনা করেছিল। লাতিন আমেরিকায় তাদের কুখ্যাতি সম্ভবত অতুলনীয়। জেনারেল অগাস্টো পিনোচেট সিআইএর ব্যাপক সমর্থনে ১৯৭৩ সালে চিলির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দেকে উৎখাত এবং হত্যা করে। আবার আরব বসন্তের ফুলঝুরি ছিটিয়ে আরব দেশগুলোতে নিজেদের পাপেট সরকার প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র কার্পণ্য করেনি।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, খনিজসম্পদ, জনসম্পদ, বিনিয়োগের পরিবেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতি বিশ্বের সব পরাশক্তির কাছেই আকর্ষণীয়। ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে বাংলাদেশ যে কোনো দেশের জন্যই আশীর্বাদস্বরূপ। বাংলাদেশের জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নীতি এবং সব পরাশক্তির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলে অনেকেই মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল অর্থাৎ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার এবং চীনের ইন্দো এশিয়ান ফোরামকে আটকানোর জন্যই একটি মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ এবং সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই বাংলাদেশকে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশীজন হওয়ার জন্য তদবির চালিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো মেরুকরণ কিংবা উসকানিমূলক কৌশল ঘোষণা না করে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, অনুকরণীয় অবাধ, মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা করেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের মনোক্ষুণ্নেœর অন্যতম কারণ হিসেবে ধারণা করা যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডার ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিসানীতি কেমন ভূমিকা পালন করবে, তা দেখা সময়ের ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রের যদি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে, তা হলে এই দেশের মানুষের স্বার্থেই যারা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার করে বিলাসী জীবনযাপন করছে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশ সরকারকে অতিসত্বর ফেরত দিক।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।