কনস্টেবল বাদল হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

দুর্ভোগের অবসান চান নগরবাসী : সুপেয় জলের তীব্র সংকট জলজটের খুলনায়

পরের সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ১৭ সুপারিশ : বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মতবিনিময় সভা

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে ১৭ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। গতকাল বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে নারী-বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন: বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। সভার মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন- জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জেবুননেসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি ড. ইয়াসমিন হকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ আমরা পুরো সমাজেই দেখে থাকি। নারীর ক্ষমতায়ন কতটুকু হয়েছে তা এখন দেখার সময় এসেছে। এখানে কাঠামোগত কিছু বাধা আছে, যা আমরা অতিক্রম করতে পারছি না।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জেবুননেসা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে হবে। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ করতে হবে, আইনের শাসন থাকতে হবে এবং নেতৃত্ব পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদের মধ্যে নিজস্ব দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানির ঘটনায় অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।
অধ্যাপক ড. জেবুননেসা বলেন, অপরাধীকে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের ব্যাপারে কমিটির সদস্যদের ও রাজনীতিসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রভাবমুক্ত হতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষার্থীরা নন বরং যারা সমাজ গড়ার কারিগর, নতুন প্রজন্ম গড়ার কারিগর, সেই শিক্ষক সমাজের কিছুসংখ্যক শিক্ষকও এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। শুধু নারী শিক্ষার্থীরা নন, নারী শিক্ষকরাও যৌন নিপীড়ন, যৌন হয়রানির শিকার হন।
সা¤প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়, অন্যায়-অনাচার-নির্যাতনের ঘটনার বিচার না হওয়ার

সংস্কৃতি ক্রমেই আধিপত্য বিস্তার করছে এবং আরো বর্বরতর ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী, নারী শিক্ষকসহ সকল স্তরের, সকল পেশার, সকল বয়সের নারীরা নিপীড়ন-নির্যাতন-অন্যায়-অনাচারের প্রধানতম শিকার। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করে মহিলা পরিষদ।
সভায় সুপারিশগুলো হলো: সন্তানের বেড়ে উঠা এবং সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের যথাযথ ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেয়া। উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের সচেতন করা। উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ- সেটা ব্যাপকভাবে প্রচার করা। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে অভিযোগ কমিটি গঠন, কার্যক্রম পরিচালনা এবং কমিটির কাজ মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার আলোকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ করা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর বাতিলকৃত ধারা ১০(২) পুনর্বহাল করা। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং এই নীতিমালা সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন দেয়া।? প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে পৃথক আইন পাসসহ আইনের বাস্তবায়ন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে সমন্বিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও প্রতিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমে নারীদের ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা। গণমাধ্যমে উত্ত্যক্তকরণ তথা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ইতিবাচক প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে যৌথভাবে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধে সক্রিয় হওয়া। শিক্ষা ব্যবস্থাকে জেন্ডার সংবেদনশীল করার লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলামে জেন্ডার সমতা, মানবাধিকার, নারীর অধিকারের বিষয় যুক্ত করা। সমাজের প্রচলিত, গৎবাঁধা নারী-বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা। সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণসহ নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শক্তিশালী করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়