গ্রিন ভয়েস : প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি

আগের সংবাদ

বাজেটে কেউ খুশি নয় : সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে, পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি

পরের সংবাদ

প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল সংকটে ব্যাহত সেবা

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অতুল পাল, বাউফল (পটুয়াখালী) থেকে : দক্ষিণাঞ্চলের বড় উপজেলা বাউফল। ৪৮৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় রয়েছে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। জনসংখ্যা ৩ লক্ষাধিক। এখানকার অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি। প্রায় প্রতি বাড়িতেই রয়েছে হাঁস-মুরগিসহ গৃহপালিত পশু। এ কারণে বাউফলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের রয়েছে ব্যাপক গুরুত্ব। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এই উপজেলায় কাক্সিক্ষত প্রাণিসেবা দিতে পারছে না প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সরকারি সেবা না পেয়ে হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা নিয়ে পশুর মৃত্যুসহ নানাভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২৬৪টি গরুর খামার, ৯৭টি মহিষের খামার, ১৪২টি ছাগলের খামার এবং ২৩টি ভেড়ার খামার রয়েছে। এছাড়াও হাঁস-মুরগি ও কবুতরের খামার রয়েছে ৪ শতাধিক। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের প্রায় সব বাড়িতেই রয়েছে গৃহপালিত প্রাণি। উপজেলার নদীতীরবর্তী চর কালাইয়া, চর শৌলা, চন্দ্রদ্বীপ, চর ফেডারেশন, চর মমিনপুর, মাঠবাড়িয়া ও চরবাসুদেবপাশাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের উন্মুক্ত চারণভূমিতে হাজার হাজার গরু-মহিষ পালন করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য খেয়ে বেড়ে ওঠা এসব পশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে এ বিভাগের প্রাণি চিকিৎসকসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদ শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে প্রাণিসেবা। কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে গবাদিপশু পালনকারীরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এর ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১১টি পদের বিপরীতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, দুই জন উপসহকারী কর্মকর্তা ও একজন পিয়নসহ মাত্র ৪ জন কর্মরত রয়েছেন। অতি গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাটেরিনারি সার্জনের পদটি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে শূন্য। এছাড়া দুটি কৃত্রিম প্রজনন কর্মী, দুটি উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, একটি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং একটি ড্রেসার কর্মীর পদ শূন্য রয়েছে। জনবল না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাণিসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ সেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পশু হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্থানীয় হাতুড়ে পশু চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে তাদের। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে গবাদিপশু। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের গবাদিপশু পালনকারীরা।
উপজেলার চর কালাইয়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ জিয়া (২৮) পড়াশুনা শেষ করে বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলেছেন ছাগলের খামার। তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ৩০টি। বিভিন্ন সময় তার খামারের ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়লে সরকারি সেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাকে। হচ্ছেন। জিয়া বলেন, ২ বছর ধরে ছাগল পালন করছি। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সেবা পাইনি। মাঠে তো তারা আসেনই না। পশু হাসপাতালে গেলেও তাদের পাওয়া যায় না। দুই একজন যারা থাকেন তারা ব্যস্ত থাকে অফিসের কাজ নিয়ে। উপজেলার পূর্ব কালাইয়া গ্রামের মো. জহির খান। চর ফেডারেশনে তার মহিষের খামার রয়েছে। চরের উন্মুক্ত চারণভূমিতে মহিষ পালন করা হয়। জহির খান বলেন, ১০ বছর ধরে মহিষ পালন করছি। খামারে ৭০টি মহিষ রয়েছে। ভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগে মহিষ আক্রান্ত হলে সরকারি কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। স্থানীয় চিকিৎসক দিয়েই মহিষের চিকিৎসা করানো হয়। এতে ভুল চিকিৎসায় মহিষ মারাও যায়।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের অলি উল্লাহ ব্যাপারী বলেন, সম্প্রতি লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে তার ২০টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। এ ভাইরাসে তার ৩টি গরু মারাও গেছে। তিনি পশু হাসপাতাল থেকে কোনো সরকারি সেবা বা পরামর্শ পাননি। ওষুধের দোকানদার ও স্থানীয় এক হাতুড়ে পশু চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি গরুর চিকিৎসা দিচ্ছেন।
উপজেলা ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে যে ধরনের সেবা পাওয়ার কথা সেটা আমরা পাচ্ছি না। যার কারণে বাইরে থেকে সেবা নিতে হয়। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যায়। ভোগান্তিও পোহাতে হয়। সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পার্থ সারথী দত্ত বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে বড় উপজেলা বাউফল। এ উপজেলায় গবাদিপশুর সংখ্যাও বেশি। এত বিশাল সংখ্যক প্রাণির সেবা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত লোকের চেয়েও বেশি জনবল দরকার ছিল। দুঃখের বিষয় সেখানে ১১ জন লোকের ৭ জনই নেই। যার জন্য আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাধ্যমতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
পটুয়াখালী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, শুধু বাউফল নয়, জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও জনবল সংকট রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চাহিদা পাঠিয়েছি। জুনের পরে কিছু নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হতে পারে। তখন সংকট কিছুটা কমবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়