‘প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অন্তরায়’

আগের সংবাদ

রাজনীতির ছায়ায় ব্যবসার জাল : জামায়াতের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক দেশ জুড়ে বিস্তৃত, গোপনে চলছিল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, এবার প্রকাশ্যে মাঠে নামার হুংকার

পরের সংবাদ

দারিদ্র্য ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণ : আশঙ্কাজনকভাবে শিশুশ্রমিক বাড়ছে ভেড়ামারায়

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইসমাইল হোসেন বাবু, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) থেকে : ভেড়ামারা উপজেলায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। পৌরসভাসহ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অনেক শিশু শ্রমিক বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা। দারিদ্র্য, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বাড়ছে শিশুশ্রম।
শিশুশ্রম বন্ধে নানা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন সভা, সমাবেশ ও মানববন্ধন করলেও আজো শিশুশ্রম বন্ধ হয়নি। শিশুদের কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী ও কর্তা ব্যক্তিরা। তারা অল্প পারিশ্রমিক দিয়ে শিশু শ্রমিকের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ করাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে বেশির ভাগ শিশুই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
স¤প্রতি ভেড়ামারা শহরে একটি দোকানের মালিক মুন্না এবং তার দুই কর্মচারী সিয়াম ও সিজান কাজের সময় ওয়ারিং গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সিয়াম (১৪) মারা যায়। সিয়াম পৌর এলাকার কাচারী পাড়া গ্রামের তাহাজ উদ্দীনের ছেলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দারিদ্র্য, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, শিক্ষা উপকরণের অধিক মূল্য, অভিভাবকের বেকারত্ব- এসব কারণে বিভিন্ন গ্রামের নি¤œ আয়ের পরিবারে শিশুরা দুবেলা দুমুঠো অন্নের জন্য এসব ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। এসব শিশু শ্রমিকের কেউ পিতৃহীন, কেউবা অভাবের কারণে ঘর ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পা বাড়াচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সরকারিভাবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এই কারণে হাটবাজারের চায়ের দোকানে, নসিমন, করিমন, আলগামন চালানো, হোটেল রেস্তোরাঁ, বেকারি, ওয়েল্ডিং কারখানা, রিকশা ভ্যান চালানো, ওয়ার্কশপ, লেদ মেশিন কারখানার মতো কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় এরা নিয়োজিত। ভেড়ামারা শহরের নওদাপাড়া এলাকার মোটর মেকানিকের দোকানের রিফাত নামে এক শিশু শ্রমিক জানায়, তারা তিন ভাইবোন। বাবা রিকশাচালক। তাই এখানে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসারে সাহায্য করে সে।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকলেও আইনকে উপেক্ষা করেই অনায়াসে চলছে শিশুশ্রম। ৭-১৪ বছরের এসব শিশু বিভিন্ন পেশায় কঠিন শ্রম দিলেও তাদের প্রতিদিনের আয় সর্বোচ্চ ৫০-৬০ টাকা। অথচ একজন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের মতো শ্রম দিলেও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
জাতিসংঘ প্রণীত শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সি সবাইকে শিশু বলা হয়েছে। বাংলাদেশের নানা আইনে ১৫ বছরের কম বয়সি সবাইকে শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের অধিকার রক্ষা ও বিকাশে রয়েছে নানা আইন। কিন্তু এর পরও বাংলাদেশে লঙ্ঘিত হচ্ছে শিশু অধিকার। সমাজ থেকে শিশু-কিশোরদের যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার কথা, তা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুনীতিকে পাশ কাটিয়েই শিশুদের ভারি গৃহশ্রমসহ বেআইনি কাজে যুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে হকারি, ডাস্টবিনের ময়লা কুড়ানো, কুলি, রিকশা শ্রমিক, যৌন ব্যবসা, ফুল বিক্রেতা, মাদক বাহক ও বিক্রেতা প্রভৃতি। আর এসব শিশু শ্রমিকের প্রায় ৫০ ভাগই তাদের পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুসারে, যে কোনো কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের বয়স ১৪ বছরের নিচে হওয়া যাবে না, কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে ২০১১ সালে এসব শিশুর সংখ্যা নিয়ে জরিপ এবং তাদের অবস্থার পরিবর্তনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যত কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ভেড়ামারার ইন্সপেক্টর রশিদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বা শিশুশ্রম বন্ধে তারা নানা শ্রমিক সংগঠন ও মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের না নেয়ার জন্যও চিঠি দিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানকে শিশুশ্রম নিয়োগ দেয়ার কারণে জরিমানাও করা হয়েছে। শিশুশ্রম বন্ধে আমরা যথেষ্ট আন্তরিক। সরকারেরও কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, যা আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়