‘প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অন্তরায়’

আগের সংবাদ

রাজনীতির ছায়ায় ব্যবসার জাল : জামায়াতের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক দেশ জুড়ে বিস্তৃত, গোপনে চলছিল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, এবার প্রকাশ্যে মাঠে নামার হুংকার

পরের সংবাদ

কক্সবাজার পৌর নির্বাচন : প্রচারণা তুঙ্গে, বাড়ছে উত্তেজনা

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার থেকে : কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে প্রচারণা এখন তুঙ্গে। পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। একই সঙ্গে বাড়ছে উত্তেজনা। সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও সর্বত্র টাকার ছড়াছড়িতে সাধারণ মানুষ বিব্রত। এরপরও সাধারণ ভোটাররা চান একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে উত্তেজনা বাড়ছে আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ এর (নারিকেল গাছ) সমর্থকদের মধ্যে। এছাড়া টাকা বিলি করার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম।
কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে প্রচারণা এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, একই দলের বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদের বিরামহীন প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও দুই মেয়র প্রার্থী নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। সাধারণ মানুষ চুলছেড়া বিশ্লেষণ করছেন কে যোগ্য, কাকে ভোট দেবেন। সম্প্রতি দুই প্রার্থীর বক্তব্যের মধ্যে ব্যক্তিগত আক্রমণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহেদুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জগদীশ বড়–য়া পার্থ।
৭নং ওয়ার্ডে বসবাসরত চাকরিজীবী আবুল কালাম বলেন, আমি ভিন্ন এলাকা থেকে এসে এখানে ভোটার হয়েছি। আমরা প্রার্থীর আচার-আচরণ দেখেশুনে ভোট দিতে চাই। ইতোমধ্যে কিছু বক্তব্য নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা যেহেতু ভিন্ন এলাকা থেকে এসে এখানে ভোটার হয়েছি, সেহেতু যিনি আমাদের সুন্দর করে বসবাসের সুযোগ করে দেবেন তাকেই আমারা ভোট দেব। উগ্র ও আধিপত্যবাদী কাউকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই না।
৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. হায়দার জানিয়েছেন গত ১২ বছর ধরে আমার এবং পরিবারের সদস্যরা এই এলাকার ভোটার। কিছু প্রার্থী টাকা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছি। সামান্য টাকা নিয়ে ভোট বিক্রি করে ৫ বছর পৌরবাসীকে বিপদে ফেলতে পারি না। তাই আমরা একজন জনবান্ধব মেয়র নির্বাচিত করতে চাই।
কক্সবাজার শহরের সৈকত পাড়ার বাসিন্দা সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, আমরা হোটেল-মোটেল জোনে ব্যবসা করে সংসার চালাই। আমরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হই সেদিকে খেয়াল রেখেই মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে ভোট দিতে চাই। বিভিন্ন সময় এই এলাকায় অসংখ্য দখলবাজি হয়েছে। আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। বিভিন্ন সময় চাঁদা দিতে হয়েছে। আমরা মেয়র নির্বাচনের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। একটি শান্তিপূর্ণ ও দালালমুক্ত একটি পৌরসভা আমরা দেখতে চাই।
এদিকে বিএনপি এবং জামায়াত কোনো প্রার্থী না দিলে ভোটের উৎসাহে কোনো কমতি নেই। সবাই ভোট দিতে উদগ্রীব। ভোটারদের ধারণা তাই আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সম্প্রতি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতা সীমাবদ্ধ থাকবে।
নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি চেষ্টা করছি দলের সবাইকে নিয়ে প্রচারণা চালাতে। আওয়ামী লীগে কোনো সন্ত্রাস ও পেশীশক্তির রাজনীতি করে না। জনগণের ও উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমি সব প্রার্থীকে সম্মান করি। কারো প্রতি আমার আপত্তি নেই। কিন্তু একটি পক্ষ টাকা দিয়ে ভোটারদের কিনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এতে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে। যোগ্যতা থাকলে ভোট কিনতে হবে কেন। মাহাবুবুর রহমান আরো বলেন, আমার জন্ম কক্সবাজারে। আমার বাবা ব্যবসায়ী হিসেবে এ অঞ্চলের পরিচিত মুখ। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সাধারণ মানুষ নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, জনগণই আমাকে ভোটে নামিয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমার বাবা মোজাম্মেল হকের দেখানো পথে পৌরবাসীর সেবায় থাকতে চাই। রাশেদের অভিযোগ, নৌকার প্রার্র্থী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রচারণা চালাচ্ছেন। আশা করি ১২ তারিখ আমার বিজয় হবে।
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮০২ জন। পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রেও ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। কক্সবাজার পৌরসভার সবশেষ নির্বাচন হয় ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। ওই নির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচনে অবৈধভাবে যারা টাকা লেনদেন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। ইতোমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম পৌর এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়