চট্টগ্রামে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার স্বামী পলাতক

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সংস্কার জরুরি : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ দেখছে আইএমএফ

পরের সংবাদ

প্রসঙ্গ : দেবোত্তর সম্পত্তি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বোর্ড

প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হিন্দু সমাজে প্রচলিত স্থায়ীভাবে সম্পত্তি উৎসর্গের নাম দেবোত্তর প্রথা। এটি অন্যতম সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান এবং মানবকল্যাণে গুরুত্ব অপরিসীম। দেবোত্তর শব্দের আভিধানিক অর্থ দেবতা বা ঈশ্বরের সম্পত্তি। হিন্দুধর্মের কোনো অনুসারী সম্পত্তি উৎসর্গ করলে সে সম্পত্তিকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে। আর হিন্দু ধর্মানুসারী পাপমোচন, ক্ষমা লাভ, পুণ্যার্জন ও সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দেবতার অনুকূলে স্থায়ীভাবে সম্পত্তি (আংশিক বা সম্পূর্ণ) উৎসর্গ করার প্রথাকে দেবোত্তর বলে। এ প্রথার লক্ষ্য হচ্ছে দেবতার সন্তুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু সমাজের কল্যাণ এবং ধর্মীয় ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা। নিম্নোক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য ধর্মীয় উদ্দেশ্যে দেবোত্তর সম্পত্তি দান করা যেতে পারে- (ক) কোনো দেবমূর্তি প্রতিষ্ঠা ও পূজার্চনা, (খ) দরিদ্র ও ব্রাহ্মণ ভোজন, (গ) হিন্দু শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রদান, (ঘ) হাসপাতাল স্থাপন। হিন্দু ধর্মানুযায়ী দেবোত্তর দুধরনের। যথা- (১) আংশিক দেবোত্তর যখন কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে সম্পত্তি উৎসর্গ করা হয় তখন তাকে আংশিক দেবোত্তর বলে। এ ধরনের দেবোত্তর ব্যক্তির পরিবার পরিজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। (২) সার্বিক দেবোত্তর : ধর্মীয় ও জনকল্যাণমূলক কাজে স্থায়ীভাবে সম্পত্তি উৎসর্গের প্রথাই সার্বিক দেবোত্তর। এক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়। দেবোত্তরের গুরুত্ব সমাজকল্যাণ ও আর্তমানবতার সেবা ও হিন্দুধর্মের প্রসারে দেবোত্তরের বহু গুরুত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বহু মন্দির, আশ্রম, পূজামণ্ডপ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছিল এবং হিন্দুধর্মের অনুষ্ঠানাদি, পূজা-পার্বণ ইত্যাদি সম্পন্ন হয়েছে। দেবতাকে সন্তুষ্ট করার মধ্য দিয়ে পাপমোচন ও মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হওয়ার উপায় হিসেবে মূলত দেবোত্তর প্রথার উদ্ভব। এসব সম্পত্তি ব্যক্তি বা সরকার কর্তৃক কারো কাছে হস্তান্তর যোগ্য নহে।
দেশের ৮০ ভাগেরও বেশি দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। এসব সম্পত্তি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ করা হচ্ছে ভবন ও রাস্তা। প্রভাবশালী মহল দখল করে নিয়েছে কয়েক লাখ একর দেবোত্তর সম্পত্তি। দখল হওয়া ওই সম্পত্তির মধ্যে পারিবারিক মন্দির থেকে জাতীয় মন্দির ও প্রতœতত্ত্ব নিদর্শনও রয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হলেও এসব সম্পদ রক্ষায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সারাদেশে প্রায় কয়েক লাখ একর দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। ইজারা নেয়ার নাম করে নকল দলিল তৈরি ও ক্রয়-বিক্রয় করার মতো জটিল আইনি প্রক্রিয়ায় কয়েক লাখ একর দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সব জেলা প্রশাসকের দেবোত্তর সম্পত্তি কাদের নামে লিজ দেয়া আছে, তাদের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনে এসব সম্পত্তির বরাদ্দ বাতিল করে ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করেছে। আমরা অনেকেই দেবোত্তর সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি অথবা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১৩ (খসড়া) ২৮ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে- ‘দেবোত্তর হস্তান্তর সংক্রান্ত বিষয়ে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রয়, দান, বন্ধক, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না।’ তাই বেদখল হওয়া দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করে দেবোত্তর সম্পত্তি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বোর্ডের অধীনে নিয়ে এসে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের মাধ্যমে সব মন্দিরের পুরোহিত ও সেবাইতদের মধ্যে জাতীয় স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদান, হিন্দুদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য সংস্কৃত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমি প্রদান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি প্রদান, মন্দিরগুলো সংস্কার, ধর্মীয় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদান করা প্রয়োজন।

রিপন কুমার দাস
ট্রেড ইনস্ট্রাকটর
ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়