টানা দাবদাহের পর সিলেটে স্বস্তির বৃষ্টি

আগের সংবাদ

প্রথম দিনের ঈদযাত্রায় স্বস্তি : কমলাপুরে নেই হুড়োহুড়ি, সড়ক মহাসড়কে নেই যানজট, নৌপথে বেড়েছে যাত্রীর চাপ

পরের সংবাদ

রানা প্লাজা ধস নিয়ে লেখা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) ‘রানা প্লাজা অভিজ্ঞতা : সামগ্রিক কল্যাণের নিশ্চয়তা এবং পোশাক শিল্পের রূপান্তর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার আইবিএর প্রফেসর এম শফিউল্লাহ অডিটোরিয়ামে এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বইটি সম্পাদনা করেছেন ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ এ মোমেন এবং অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। বইয়ের গবেষণা কার্যক্রমের সমন্বয় করেন আইবিএর সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ ও প্রভাষক ফাতেমাতুজ যাহরা সাকী। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় যারা নিহত হয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের উদ্দেশে এ বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে। অধ্যাপক মোমেন বইটি সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।
বইটিতে পোশাক শিল্পের ইতিহাস, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময়ের কথা এবং পরবর্তীতে পোশাক শিল্পের অনবদ্য রূপান্তরকে তুলে ধরা হয়েছে। এ গবেষণার জন্য মোট ২৭টি একান্ত সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। বইটিতে ক্রেতা, বিদেশি ব্র্যান্ড, সাংবাদিক, শ্রমিক সংগঠন, আরএমজি কর্মী, সরকারি সংস্থা, প্রেস মিডিয়া, ঘটনার সাক্ষী, ফটোসাংবাদিক এবং ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আইবিএ ৩৬ জন আহতের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যাদের আহত হওয়ার মাত্রা ৭০ ভাগ পর্যন্ত ছিল। এছাড়া দুজন নিহতের পরিবারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন ২৬ জন মহিলা এবং ১২ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে ৪ জন ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বলেননি। তাদের ছাড়া সবাই গড় ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ২ লাখ চৌষট্টি হাজার টাকা। সরকার, এনজিও, কারখানার মালিক এবং অন্যান্য সমিতি তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে যথাসম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করেছে। তারা তাদের দুঃখ-বেদনার কথা বলেছেন এই বইটিতে এবং আরো উল্লেখ করেছেন যে তাদের জন্য আরো কিছু করা যেত। এটি আরএমজি শিল্পের জন্য একটি ব্যয়বহুল শিক্ষা ছিল।
আইবিএ ১০০টি কারখানা থেকে স্যাম্পলিং কৌশল ব্যবহার করে বিভিন্ন স্তরে ৫০০ শিল্পকর্মীর ওপর জরিপ করেছে। পোশাক কারখানাগুলোকে এমআইবি (ম্যাপড ইন বাংলাদেশ) ডাটাবেস থেকে বাছাই করা হয়েছিল, যা সারাদেশে পাঁচটি প্রধান শিল্প অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল : ঢাকা, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রাম যেখান থেকে যথাক্রমে ১৮০, ১৩, ১০৮, ১৫৯ এবং ৪০ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল। পোশাক শিল্পে কমপক্ষে ৬ মাসের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের জরিপের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল।
গবেষকরা দেখেছেন, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছিল এবং ২০১৫ সালে প্রবর্তিত বিধিগুলো শ্রমিকদের জন্য আরো সুবিধাজনক হয়েছে। ২০১৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত শ্রম বিভাগে অনুচিত শ্রম বিষয়ে মোট ৪৯টি অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছিল। সমস্ত অভিযোগের মধ্যে ১০টির নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং বাকি ৩৯টির জন্য শুনানি প্রক্রিয়াধীন। একটি আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে যে, ৯০ জন মহিলা পোশাককর্মী এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন্সে বহুসংস্কৃতির বৈশ্বিক পরিবেশে উচ্চতর পড়াশোনা করছেন। তাদের বেতন নিজ নিজ উদ্যোক্তাদের দ্বারা পরিশোধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গ্রিন কারখানা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আলোচক প্যানেলে নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার পোশাক শিল্প নিয়ে একাডেমিক গবেষণা এবং নীতি বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম পোশাক শিল্পকে ওই সময়ে নেতৃত্ব নেয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) শ্রমিকদের মঙ্গল নিশ্চিত করতে এবং পোশাক শিল্পের রূপান্তরে শিল্প নেতাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের অধিকার এবং সমন্বিতভাবে দরকষাকষির গুরুত্ব তুলে ধরেন। দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত সচেতনতা বাড়ানো এবং পোশাক শিল্পে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান পোশাক শিল্পের রূপান্তর এবং শ্রমিকদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএর ভূমিকা তুলে ধরেন। এই অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম, শ্রমিক সংগঠন, ক্রেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়