শিক্ষকদের দাবি ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা

আগের সংবাদ

এসডিজির পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ : করোনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, লক্ষ্য অর্জনে কৌশলী সরকার

পরের সংবাদ

নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ সিএস অফিসের বিরুদ্ধে : নোয়াখালীতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল!

প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আবার কিছু প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিভিল সার্জন অফিস অনুমোদন দিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানা হয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম-নীতি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) অফিসকে ম্যানেজ করে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান- এমন অভিযোগ জেলার সচেতন মহলের। সিভিল সার্জন অফিসের অভিযানে কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ফের চালু হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, একটি ১০ শয্যা হাসপাতাল চালু করতে তিনজন এমবিবিএস মেডিকেল অফিসার, চারজন ডিপ্লোমা চিকিৎসক, ছয়জন স্টাফ নার্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকার নিয়ম থাকলেও নোয়াখালীতে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ হাসপাতাল দালালের মাধ্যমে জোরপূর্বক রোগী ভর্তি করে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিচ্ছে। চার-পাঁচটি ব্যতীত অধিকাংশই মানছে না সরকারি নিয়ম। নেই কোনো বৈধ কাগজপত্রও। কিছু হাসপাতালের লাইন্সেস থাকলেও মিলছে না কোনো হালনাগাদ তথ্য।
এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, হাসপাতাগুলোতে নোংরা পরিবেশ, অব্যবস্থাপনা, ভুল চিকিৎসা, রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায় ও স্বজনদের লাঞ্ছিত করে থাকে।
সম্প্রতি জেলা শহরের হাসপাতাল রোডে একটি প্রাইভেট আইসিইউ হসপিটাল উদ্বোধন করেন সিভিল সার্জন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নোয়াখালী সভাপতি। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ওই হাসপাতালটি জেলা সদর হাসপাতালের একশ গজের মধ্যে অবস্থিত। হাসপাতালটিতে কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। খবর নিয়ে জানা গেছে, আইসিইউ হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যেসব ডাক্তার, ডিপ্লোমা চিকিৎসক, স্টাফ নার্স ও টেকনিশিয়ান প্রয়োজন তার কোনোটাই পরিপূর্ণ নেই ওই হাসপাতালে। শুধু ওই হাসপতালই নয়, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে ৫০ থেকে ১০০ গজের মধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
শহরের বেশির ভাগ হাসপাতালে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়তই হাসপাতাল রোডে যানজট লেগে থাকে। এই যানজট নিরসনে হাসপাতাল রোডকে বৃদ্ধি করে সংস্কার করা হলেও সড়কের উপর হাসপাতালের গাড়ি পার্কিং করায় এখনো যানজট নিরসন হয়নি।
একটি প্রাইভেট হাসপাতালের এক ল্যাব সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশির ভাগ প্রাইভেট হাসপাতালেই অনিয়মিত ডাক্তার দিয়ে চালানো হচ্ছে। ডিপ্লোমা চিকিৎসকও রয়েছেন দু-একজন আবার কোথাও একজনও নেই। জেনারেল লাইনে লেখাপড়া করা ছেলে-মেয়েদের দিয়ে ৪-৫ হাজার টাকা বেতনে ল্যাব টেকনিশিয়ানের কাজ করানো হয়। ফলে বেশির ভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভুল রিপোর্ট সরবরাহ করা হয়।
তবে হাসপাতাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন এক ব্যক্তি বলেন, দালাল ছাড়া এখন হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক ব্যবসা চালানো কষ্টসাধ্য। দালালরা হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসলে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই তাদের চাহিত টাকা নিয়ে যায়। যার কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুটা এদিক-ওদিক করতে হয়। আর এজন্য সিভিল সার্জন অফিসকে ম্যানেজ করে চলতে হয়।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মাহমুদুর নবী, আলাউদ্দিন ও নার্গিস আক্তার বলেন, প্রাইভেট হাসপাতালের এসব অনিয়মের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরাও জড়িত রয়েছেন। বেশির ভাগ হাসপাতাল-ক্লিনিকের

মালিকানায় রয়েছেন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা। যার কারণে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা লেখার পর নির্দিষ্ট হাসপাতাল-ক্লিনিকের নাম উল্লেখ করে সেখানে মূল্য কম রাখার ঘোষণা দেন। অপরদিকে হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীরা নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে রোগীদের পাঠান অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকে। তাদের মনভোলানো পরামর্শে আমরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হয়ে যাচ্ছি।
দালালের মাধ্যমে জোরপূর্বক রোগী ভর্তি করে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার বিষয়ে জেলার প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম ভট্ট গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো প্রকার দালাল চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়ার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারের নিয়ম না মানলে বিষয়টি সরকার দেখবে।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি নিয়ম না মানায় অনেক হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী এমপি গণমাধ্যমকে বলেন, নোয়াখালীতে সারাদেশের ন্যায় ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার। এটা বন্ধ করতে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় ৪১৬ প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক রয়েছে। এর বেশির ভাগই জেলা সদর মাইজদীতে অবস্থিত। ২০২২-২৩ সালে নবায়ন রয়েছে ৩৯টি, ২০২১-২২ সালে ৯৩টি, ২০২০-২১ সালে ১১৪টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করলেও ডাক্তার ও নার্সের কাগজপত্র ভুয়া, ডাক্তার ও নার্সের মোবাইল নম্বরের স্থলে হাসপাতালের মালিক, কর্মচারী ও আয়াদের নাম্বার দেয়া আছে। স¤প্রতি স্ব্যাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অভিযানে ২২টি বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হলেও সবগুলো একে একে চালু হয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়