ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাব কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার ফি নির্ধারণ কতদূর? : বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেন ৮৬ শতাংশ মানুষ, স্বাস্থ্য খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

পরের সংবাদ

পাবনায় বীর নিবাস বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাবনা প্রতিনিধি : জেলার বেড়া উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ‘বীর নিবাস’ বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা কমিটির সদস্য সচিবের সরকারি চাকরিজীবী ভাইয়ের জন্য নির্মিত হয়েছে বাড়ি। সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা। খতিয়ে দেখবেন জেলা প্রশাসক।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুজিববর্ষে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নামে সারাদেশে ৩০ হাজার একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে সরকার। নীতিমালা অনুসারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে বরাদ্দ কমিটি করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করবেন। কিন্তু রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ছোট ভাই শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের এই বাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন বেড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রফিকুল ইসলাম। নির্মাণ শেষে এখন তা হস্তান্তরের অপেক্ষায়।
বীর নিবাস বরাদ্দ নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি আবাসন কিংবা ভূমির সুবিধা পাননি এমন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা পরিবার বীর নিবাসের বরাদ্দ পাবেন। যুদ্ধাহত, প্রতিবন্ধী হলে অগ্রাধিকার পাবেন। আবেদনকারীকে অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হতে হবে।
কিন্তু বেড়া উপজেলার কাজীরহাটে বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তার ভাই শফিউদ্দিন ফকির অসচ্ছল নন। সরকারি চাকরিজীবী। অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ পরিবারে বীর নিবাস বরাদ্দ দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।
সরজমিন কাজীরহাটে গিয়ে দেখা যায় শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের বাড়ি নির্মাণ শেষ হয়েছে। সে বাড়ির পাশেই তিনতলা বাড়িতে থাকেন তার বড় ভাই বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
শফিউদ্দিন জানান, তাদের বাবা মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ফকিরের নামে পরিবারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ কমিটির কাছে বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ চান তারা। মৃত বাবার পৈতৃক জমিতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তারা মাসুমদিয়া ইউনিয়নে জায়গা কেনেন। সেখানেই বীর নিবাসের বাড়ি বন্দোবস্ত দিয়েছে বরাদ্দ কমিটি। সরকারি ভালো বেতনে চাকরি করেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার ঘর কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইউএনও সাহেব বলতে পারবেন।
বরাদ্দপ্রাপ্তির পর বাড়ি ভোগদখলে শফিউদ্দিনকে ক্ষমতা দিয়ে হলফনামা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ সময় আবুল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা খাতুন বরাদ্দ দাবি করলে ইউএনও, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে প্রভাব খাটিয়ে বীর নিবাসের স্বত্ব ছাড়তে লিখিত দলিল করে নেন প্রথম পক্ষের সন্তানরা, অভিযোগ হালিমা খাতুনের।
হালিমা খাতুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী হিসেবে বাড়ি প্রাপ্তিতে আমার অগ্রাধিকার রয়েছে। আমার নাবালিকা মেয়েও আছে। প্রথম পক্ষের ছেলেরা সরকারি চাকরি করে। তাদের অবস্থা ভালো। কিন্তু বাড়ি বরাদ্দের কথা শুনে আমি ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা আমাকে বরাদ্দ দেয়নি, শফির নামে বাড়ি বরাদ্দ হবে বলে জানায়। পরে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক করে আমার মেয়ের নামে এক লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে দলিলে সই করিয়ে নেয়। বাধ্য হয়েই তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে মেনে নিতে হয়েছে।
রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম মোহন বলেন, উপজেলা কমিটির কাছ থেকে বীর নিবাসের বরাদ্দ নেয়ার পর মৃত আবুল হোসেন ফকিরের প্রথম পক্ষের ছেলেদের সঙ্গে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বিরোধ শুরু হয়। পরে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আমার পরিষদে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নাবালিকা মেয়ের জন্য এক লাখ টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত ও বিয়ের সময় সহযোগিতার শর্তে বীর নিবাসের মালিকানা প্রথম পক্ষের মেজো ছেলে শফিউদ্দিনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
শফিউদ্দিন বীর নিবাসের বরাদ্দ নেয়ায় অনিয়ম হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়াই অনিয়মের মধ্য দিয়ে গেছে। কারণ আবুল হোসেন ফকির মুক্তিযোদ্ধাই নন। তিনি ভারতেও প্রশিক্ষণে যাননি, কোনোদিন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেও শুনিনি। অথচ এসব পরিবারের লোকজন মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা ভোগ করছেন। প্রকৃত অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত হচ্ছে। আমি এর বিপক্ষে।
বীর নিবাস নিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুলের পারিবারিক সালিশ শেষে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নিকট থেকে বীর নিবাসের দাবি না করার অঙ্গীকারনামা দলিল করে নেয়া হয়। সে দলিলে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর দেন বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন ফকিরের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম পক্ষের সন্তানদের বীর নিবাস নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়। পরে উভয়পক্ষ বসে বিষয়টি সমঝোতা করে নিয়েছে। বৈঠকে আমি অসচ্ছল বিধবা স্ত্রীর অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু উভয়পক্ষ সমঝোতা করে স্ট্যাম্প করে। সেখানে সবার অনুরোধে আমি সাক্ষী হিসেবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আমার স্বাক্ষর দেয়া ঠিক হয়নি। আমি আসলে বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করিনি, সরল মনে স্বাক্ষর করেছি। সমাজসেবা কর্মকর্তার ক্ষমতা ব্যবহার করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি কেন নিতে হবে, আমার বোধগম্য হয় না। এটি লজ্জারও বিষয়।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বীর নিবাসের আবেদন যারা করেছিলেন, তাতে আবেদন কম ছিল। আবার যারা আবেদন করেছিল অনেকেরই প্রয়োজনীয় জমি নেই। আমার পরিবারে বীর নিবাস বরাদ্দ আমি একা দেইনি। কমিটি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অনিয়ম হয়নি দাবি বরাদ্দ কমিটির সভাপতি, বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলীর। তিনি বলেন, কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শফিউদ্দিনের কোনো নিজের বাড়ি নেই। অসচ্ছল হিসেবেই তাকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা পরিবারের বীর নিবাস বরাদ্দ প্রাপ্তির সুযোগ নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়