বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘সবুজ মানব প্রাচীর’ তৈরি করল জিএলটিএস

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়ায় জোটের মিশন

পরের সংবাদ

পেলে-ম্যারাডোনার পর মেসি!

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

লাতিন আমেরিকা ও ফুটবল! যেন একই সূত্রে গাঁথা। বিশ্বফুটবলে যত মহাতারকার জন্ম, তাদের অধিকাংশই এই মহাদেশের। চার বিশ্বকাপে তিনটি শিরোপা জিতে যেমন নিজেকে অমর করে রেখেছেন ফুটবল স¤্রাট পেলে, তেমনি নান্দনিক খেলা উপহার দিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ডিয়াগো ম্যারাডোনা। জিতেছেন একটি বিশ্বকাপ। গত বছর কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে হারিয়ে লাতিনদের আবারো বিশ্বকাপ এনে দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তাহলে পেলে-ম্যারাডোনার পর সর্বকালের সেরা মেসি!
বিশ্বকাপ না থাকায় এতদিন অনেকেই মেসিকে পেলে বা ম্যারাডোনার সমান মানতে নারাজ ছিলেন। তবে বিশ্বকাপ জয়ের পর পেলে-ম্যারাডোনারা সমকক্ষ হতে পেরেছেন মেসি? এই প্রশ্নের জবাবে মেসিভক্তরা বলবেন হয়েছেন। আবার অনেকেই বলবেন এখনো হতে পারেননি। বর্তমান সময়ে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের তুলনা করলে অনেকেই মেসির সঙ্গে তুলনা করেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। তবে বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেকটা চাপা পড়ে যায় এই তুলনা।
বিশ্বকাপে অংশ নেয়া প্রতিটি দলের স্বপ্ন থাকে শিরোপা জয়ের। প্রতিটি দলের খেলোয়াড়রাই চায় শিরোপা জিতে নিজেদের ইতিহাসের অংশ করে রাখতে। তবে প্রতিটি আসরে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে শুধু একটি দেশ। চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত এই ফুটবল মহাযজ্ঞে চারবার অংশ নিয়ে তিনবারই দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছে পেলে। তিনটি বিশ্বকাপ জেতা কোনো কাকতালীয় ঘটনা না। এ জন্য খেলতে হয় টানা ১২ বছর। তবে টানা তিন বিশ্বকাপে দল চ্যাম্পিয়ন হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই।
১৯৫৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় এই তারকার। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত এই কিংবদন্তি মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৫৮ সালে ব্রাজিল দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার সৌভাগ্য লাভ করেন। চার ম্যাচ খেলে ৬ গোল করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করার সুবাদে সেই আসরে সিলভার বল ও সিলভার বুট দুটোই জেতেন পেলে। ১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলে চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়ে বাকি টুর্নামেন্টে খেলতে না পারলেও দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। এরপর ১৯৬৬ সালে ব্রাজিল সেরা দল নিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলেও সবাইকে হতাশ করে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। ১৯৭০ বিশ্বকাপে শেষবারের মতো অংশ নেন পেলে। সেই আসরে শিরোপা জিতে জুলেরিমে ট্রফির চিরস্থায়ীভাবে মালিক হয়ে যায় তার দেশ ব্রাজিল। চার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে তিনটিতে শিরোপা জেতা পেলের এই রেকর্ডের আশপাশেও নেই কোনো ফুটবলার।
অন্যদিকে ১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। পরের বছর ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ছিলেন না স্কোয়াডে। বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পান ১৯৮২ সালে। কিন্তু সেবার হট ফেভারিট এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়ে আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জেতান আলবেসেলেস্তেদের। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে মাঠে অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিলেন ম্যারাডোনা। এরপর ১৯৯৪ বিশ্বকাপে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে ১৫ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা পান তিনি। তবে তার নান্দনিক ফুটবল খেলায় মুগ্ধ হতো দর্শকরা। সর্বকালের সেরা বনে যান তিনি। সেই সময় থেকেই পেলের সঙ্গে তুলনা করা হতো এই তারকাকে। পরে অবশ্য ম্যারাডোনা নিজেই স্বীকার করেন সর্বকালের সেরা পেলেই।
আর ক্লাব ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতার পরও বিশ্বকাপ না থাকায় মেসিকে সর্বকালের সেরা বলতে নারাজ ছিলেন অনেকে। ব্যক্তিগত অর্জনের খাতায় ৭ ব্যালন ডি’অর, ৬টি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট থাকার পরও তাকে সর্বকালের সেরা মানা হতো না। কাতার বিশ্বকাপের পর সেই বিতর্কের অবসান ঘটান মেসি। কাতার বিশ্বকাপকে মেসির বিশ্বকাপ বললেও ভুল হবে না। এই এক বিশ্বকাপে যে কয়টি রেকর্ড গড়েছেন, সেগুলো আর কখনো ভাঙবে কিনা সন্দেহ। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে তিনি ছিলেন এই প্রজন্মের অনেক তরুণ তারকার চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। কাতার বিশ্বকাপে মেসি গোল করেছেন ৭টি। যার মধ্যে শেষ ষোলোর ম্যাচ থেকে ফাইনাল পর্যন্ত সব ম্যাচেই গোল আছে তার। এই কীর্তি নেই আর কারোর। ৩টি গোলে সহায়তাও করেছেন তিনি।
এছাড়া বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে ১৩ গোল করে ছাড়িয়ে গেছেন পেলে-ম্যারাডোনাকে। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে ফুটবল মনে রাখবে তার জেতা তিনটি বিশ্বকাপের জন্য। অন্যদিকে ম্যারাডোনাকে মনে রাখবে নাপোলির হয়ে দুইটি লিগ এবং একটি ইউরোপা লিগ জেতার পাশাপাশি আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই বিশ্বকাপ জেতানোর জন্য। আর মেসিকে মনে রাখবে কাতার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন বানানোর জন্য। তাই মনে করা হয় পেলে-ম্যারাডোনার পর সর্বকালের সেরা মেসি।

:: আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়