তুরাগ : মাদক কারবারির হাতে ছুরিকাহত এসআই

আগের সংবাদ

বাজারে ক্রেতার নাভিশ্বাস

পরের সংবাদ

রোজাদারের প্রশিক্ষণ : অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রমজান মাস মহান আল্লাহ প্রদত্ত এক শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত। রমজান মানে জ¦ালিয়ে দেয়া, পুড়িয়ে ফেলা,
তাপাধিক্যতায়
ভস্মীভূত করা। রোজাদার রোজা পালনের মাধ্যমে স্বীয় পাপাচার ও যাবতীয় গুনাহকে পরম ধৈর্য, সংযম ও আত্মশুদ্ধির অনলকুণ্ডে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করেন বলে ধর্মীয় ইবাদতের এ পদ্ধতিকে রমজান নামে অভিহিত করা হয়েছে। একইভাবে রোজা পালনের পবিত্র এ মাসটিকেও রমজান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে; যা পরম ¯্রষ্টার একত্ববাদে বিশ্বাসী সত্যনিষ্ঠ মানুষজনের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, মানবিক ও আদর্শিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের এক প্রকৃষ্ট সময়সীমা। রমজানে প্রকৃত মানুষ ও তার উদার-মানস গঠনের ক্ষেত্রে রোজাদার ব্যক্তি যে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান তা অনন্য ও বৈচিত্র্যময়। মানুষকে নির্লোভ, নিঃস্বার্থ, অমায়িক, সহনশীল, দয়াবান, ধৈর্যশীল, পরিশ্রমী, অধ্যাবসায়ী, মনোবলসম্পন্ন, দৃঢ়চিত্ত, সহিষ্ণু ও সংযমী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রমজানের প্রশিক্ষণ অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। পার্থিব সব কাজের বেলায় কর্ম-সাফল্যের তাগিদে প্রশিক্ষণ এক অবধারিত বিষয়। সত্যনিষ্ঠ রোজাদারের জন্য মাহে রমজান এক অভিনব প্রশিক্ষণের নাম।
প্রচণ্ড খরতাপে অতিষ্ঠ ব্যক্তি তার পিপাসার্ত চিত্তকে ঠাণ্ডাকরণে লোকচক্ষুর অগোচরে যে কোনো সময়ে পানি পান করে নিতে পারে। কিন্তু অদৃশ্য সত্ত্বায় বিশ্বাসী রোজাদার শুধু ¯্রষ্টার ভয়ে এ ধরনের যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকেন; যার মধ্য দিয়ে রোজাদারের অস্তিত্বজুড়ে যে প্রবল বিশ্বাসের শক্তি রয়েছে সেটিকে আরো মজবুত করার প্রশিক্ষণ লাভ করেন। বাকস্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও রোজাদার কম কথা বলার মধ্য দিয়ে অহেতুক প্রলাপ বকার পথে লাগাম টেনে ধরার প্রশিক্ষণ লাভ করেন। মিথ্যা, পরচর্চা ও অশ্লীল কর্ম সম্পাদনের অজ¯্র দ্বার উন্মোচিত থাকার পরেও রোজাদার নিজেকে নেতিবাচক সব কাজ থেকে স্বীয় দেহ-মনকে নিবৃত্ত করার অমোঘ প্রশিক্ষণ লাভ করেন। সময়মতো খাদ্য গ্রহণ-বর্জন ও ধর্মীয় আচারসমূহ সঠিক পদ্ধতিতে পালনের মাধ্যমে রোজাদার কর্তব্যনিষ্ঠা আর নিয়মানুবর্তিতার এক বিরল প্রশিক্ষণ নেন। ক্ষুধা-তৃষ্ণার অসহ্য যাতনা সইবার মধ্য দিয়ে সমাজের অভাবী, পরমুখাপেক্ষী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কষ্ট আর দুর্ভোগ অনুধাবনের বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সৎ চিন্তা, কল্যাণকামীতা, পরোপকারিতা, পরের দুঃখ মোছন, দরিদ্রকে ভুলে না যাওয়া- এসব বিষয়ে রোজাদার জীবনঘনিষ্ঠ প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন। রমজানের বিশেষত্ব এমনই- যার সঙ্গে অন্য কোনো ইবাদতের তুলনা করতে স্বয়ং আল্লাহই নিষেধ করেছেন। অতুলনীয় ধর্মাচার এই রমজান হাজারো পঙ্কিলতার ঘোরে নিমজ্জমান ব্যক্তিমানসকে পরিশুদ্ধ করে এক উন্নত, মার্জিত, মহানুভব ও মানবিক মানসচিত্তে রূপান্তরিত করে। এটি সত্য যে, রোজাদার রমজানের খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য নিয়ে আসেন; অন্য সময়ের চাইতে উন্নতমানের এবং হরেক রকমের খাদ্য গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু এর মধ্য দিয়েও অন্যকে খাওয়ানোর যে মানসিকতা সেই প্রশিক্ষণও অর্জিত হতে পারে। কেননা, রাসূল (সা.)-এর হাদিসে রয়েছে, নিজের জন্য যা পছন্দ করবে অন্যের জন্যেও তা পছন্দ করবে। নিজে খাবো আর অন্যজনরা অন্নাভাবে কষ্টভোগ করবে- এটি ইসলামের শিক্ষা হতে পারে না। সুতরাং রমজান আমাদের অন্যের মুখে খাবার তুলে দেয়ার মহান শিক্ষা দেয়। এভাবে মাহে রমজান ও এর সিয়াম সাধনা আমাদের সর্বপ্রকার মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন গুণার্জনের মাধ্যমে সর্বোন্নত চরিত্রের প্রশিক্ষণ প্রদান করে; আমরা যার বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটাতে পারি বাকি এগার মাসের পথচলায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়