ছিনতাইকারী থেকে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান

আগের সংবাদ

বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা! : উপকূলীয় হাসপাতালগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, দেশের ২১ শতাংশ হাসপাতালে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা

পরের সংবাদ

নবীনগরে খালে দোকান বরাদ্দ : ইউপি চেয়ারম্যান হাতিয়ে নিলেন কোটি টাকা

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে খাল দখল করে দোকান বরাদ্দ দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ ঘটনায় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের নেতারা।
অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ সালে উপজেলার নাটগড় ইউনিয়নের কুড়িগড় বাজারের পাশে একটি খাল কিছু স্বার্থবাদী লোক ভরাট করে ফেলে। খালটি ভরাটের পর সরকারি ভূমি অফিসের মাধ্যমে প্যারিফেরি করে দখলে নিয়ে দোকান তৈরি করেন। পানি নিষ্কাশনের একমাত্র সরকারি খালটি ভরাট করে ফেলায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি কিছু মানুষের কাছ থেকে দোকান ভিটি বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামানের বড় ভাই ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে এরশাদুল হক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। গত বছর প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন এরশাদ। এর আগে, ২০০৯ সালে লিজকারী ও গ্রামের মানুষের সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি হয়। সেই বিবাদে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান নিহত হন। এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই জায়গা বরাদ্দকে কেন্দ্র করে আরও ৪টি খুনের ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে খালের ওপর দোকান লিজ স্থগিত করা হয়। বিগত এক মাস আগে সেই দোকানগুলো এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জমান নিজেই সেই জায়গায় দোকান বরাদ্দ দেয়া শুরু করেছেন। তিনি প্রতি দোকান থেকে ১ থেকে ২ লাখ টাকা নিচ্ছেন। ১২০টি দোকান ভিটি থেকে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব, তহশিলদার, এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের মাধ্যমে এসব বরাদ্দ দিচ্ছেন চেয়ারম্যান। যারা আগে দখলে ছিলেন এবং লিজ পেয়েছিলেন তাদের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের নিজস্ব লোকজনকে লিজ দেয়ার চেষ্টা করছেন। এর ফলে আবারো কুড়িগড় গ্রাম দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। এনিয়ে যে কোনো সময় সংঘর্ষ হতে পারে।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বলেন, এই জায়গাটি রেকর্ডে খাল ছিল। পরে এটি ভরাট করে লিজ দেয়া হয়। সেই লিজের তালিকায় আমার নাম রয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বার বার বলেছি জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেই জায়গা আমাকে দেয়া হয়নি।
নাটগড় ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল হক বলেন, এই খালটি সরাসরি তিতাস নদীতে গেছে। কোেেনা জায়গায় ১০০ ফুট কোনো জায়গায় ৫০ ফুট প্রশস্ত ছিল খালটি। স্থানীয়রা এটি ভরাট করে ফেলে। ভূমি অফিসের নায়েব কিভাবে লিজ দিয়েছেন আমরা জানি না। চেয়ারম্যান ও নায়েবের মাধ্যমে সামনের দোকান ১ লাখ ২০ হাজার ও পেছনের দোকান ১ লাখ টাকা করে নিচ্ছেন।
কুড়িগড় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য খোকন মিয়া বলেন, কিভাবে দোকানের জায়গা বরাদ্দ পাচ্ছে, তা জানি না। চেয়ারম্যান দোকানগুলো ভাগবাটোয়ারা করছেন।
জালাল উদ্দিন নামের একজন বলেন, ২০০৯ সালে টাকা নিয়ে লিজ পেয়েছি। এর কাগজপত্রও আছে। কিন্তু বিগত ১৪ বছরেও আমি কোনো জায়গা বা দোকান পাইনি। স্থানীয় আবু স্যামা, জাহের মিয়া, শিরু মিয়াসহ কয়েকজন বৃদ্ধ বলেন, আমরা বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারের প্রয়াত ভাই এরশাদকে টাকা দিয়েছি। লিজের তালিকায় আমাদের নামও আছে। কিন্তু দোকান বরাদ্দ দেয়নি। নতুন করে চেয়ারম্যান কি যেন করছে, সবার কাছ থেকে সে লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে। আর আগে যাদের দোকান ছিল তাদের দোকান বিনা নোটিসে উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু এখন আমাদের দোকান দিচ্ছে না।
অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি। আগে যারা লিজ পেয়েছেন তারাই দোকান করছেন। আমি শুধু বিষয়টি সমন্বয় করছি।
নাটগড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব ছালেক আহমেদ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু হচ্ছে। এই জায়গা খাল ছিল কিনা আমার জানা নেই।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা জাহান বলেন, আমি নতুন যোগদানের পর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেছিলাম, যেন প্রকৃত লিজধারিরা সুবিধা পায়। কোনো প্রকার অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত নই। বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের এমপি এবাদুল করিম বলেন, আমি ইতোমধ্যে বিষয়টি অবগত হয়েছি। ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়