ইন্ডিয়ান হায়ার এডুকেশন মিট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ভোরের কাগজ, এনজিও ফোরাম ও বাউইনের সেমিনারে বক্তারা : এসডিজি ৬ অর্জনে কার্যক্রম বেগবান করার তাগিদ

পরের সংবাদ

ছিনতাইকারী থেকে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আরাভ খানের আলোচনা বর্তমানে সবার মুখে মুখে। কিন্তু কে এই আরাভ খান। তদন্তে উঠে এসেছে দুবাইয়ের এ আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রথমদিকে ছিলেন একজন ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে ৯টি মামলা। নানা নামে দেশে নানা অপরাধে যুক্ত ছিলেন তিনি। কখনো আপন, কখনো সোহাগ, কখনো রবিউল ইসলাম, কখনো হৃদয় ও হৃদি নাম ব্যবহার করে জড়িয়েছেন অপরাধে। এসব ঘটনায় জেলে গেলেও আয়নাবাজি সিনেমার মতো তার হয়ে আরেকজনের সাজা খাটার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। করেছেন একাধিক বিয়েও। শ্বশুরকে অস্ত্রের মুখে রেখে হাতিয়ে নিতেন টাকা। এছাড়া ধর্ষণ থেকে শুরু করে পুলিশ হত্যা মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দেশ থেকে পালিয়ে এখন দুবাইয়ে স্বর্ণের বড় ব্যবসায়ী বনে গেছেন তিনি।
জীবনের প্রথমে ছোট ছিনতাইকারী : ২০১৭ সালের ২৩ জুন বনানী থানার বাসিন্দা মো. শুক্কুর আলী নামের এক ব্যক্তি বন্ধু মো. হাসানকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে যান। পুলিশ কনকর্ড প্লাজার সামনে ব্রিজের ওপর অবস্থান করছিলেন তারা। এ সময় আরাভ খান একটি মোটরসাইকেলে এসে শুক্কুরের হাতে থাকা ডিএসএলআর ক্যামেরা ও একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে মগবাজারের দিকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মো. শুক্কুর আলী ২০১৭ সালের ২৫ জুনে গুলশান থানায় মামলা করেন। পরে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আরাভের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে বলা হয়েছে, আরাভ খান একজন পেশাদার অপরাধী। সে মোটরসাইকেলের ভুয়া নিবন্ধন ব্যবহার করে শুক্কুর আলীর হাতে থাকা ক্যামেরা ও মোবাইল সেট ছিনতাই করে চলে যায়। আরো বলা হয়, ২০১৭ সালের ২৫ জুন গুলশান-১ এ নাভানা টাওয়ারের সামনে থেকে আরাভ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে বাদীর মোবাইল সেট, ক্যামেরা ও ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় আদালত ২০১৮ সালের ৭ মে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বর্তমানে মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন আগামী ১২ জুন ধার্য করেছেন আদালত।
আয়নাবাজির মতো আরাভের সাজা খাটেন ইউসুফ : আরাভের অপরাধকাণ্ড আয়নাবাজি সিনেমার মতো। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় উলুখোলা এলাকার একটি জঙ্গল থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরানের হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যার ঘটনায় তার ভাই বনানী থানায় মামলা করলে আরাভকে আসামি করে পুলিশ। তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতাও পায় পুলিশ। বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় তার বিরুদ্ধে। এরপর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর মো. আবু ইউসুফ নিজেকে মামলার আসামি মো. রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় দাবি করে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। পরে ইউসুফের বাবা মো. নুরুজ্জামান ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ছেলে ইউসুফ এই মামলার আসামি নয় দাবি করে জামিনের আবেদন করেন। পরে তদন্তে বিষয়টি বের হয়ে আসে। আরাভ ও ইউসুফ দুইজনকেই ফৌজদারি আইনে মামলা করার কথা বলা হয় তদন্তে। এদিকে পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলায় আরাভ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বিচার চলমান। মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম খানের আংশিক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। পরে আর কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। মামলাটিতে আরাভ খান ছাড়াও বাকি ৯ অভিযুক্তরা হলেন- আরাভের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া, রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেন এবং দুই কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণ ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফী ও ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা।
একাধিক বিয়ে আরাভের : এদিকে আরাভ খান একাধিক বিয়ে করেছেন বলে তথ্যে উঠে এসেছে। শ্বশুরদের অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে আদায় করতেন টাকা। এমন একজন তার শ্বশুর সেকেন্দার আলী। তাকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করার চেষ্টা করেন আরাভ। টাকা না পেয়ে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলিভর্তি একটি রিভলবারসহ সে শ্বশুরের বাসার সামনে যায়। এ সময় সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আরাভের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করে ডিবি পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরাভ তখন স্বীকার করে, সে একাধিক মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং ভয়ভীতি ও প্রভাব খাটিয়ে শ্বশুরদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ার জানান, মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মদের আদালতে বিচারাধীন। এখন পর্যন্ত ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। বাকি সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আগামী ২৮ মার্চ সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এদিকে এসব মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আশা করি, শিগগিরই সব মামলার নিষ্পত্তি হবে। মামলাগুলোয় আরাভ এখন পলাতক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। যেসব মামলা সাক্ষ্যের জন্য আটকে আছে, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সেসব মামলার সাক্ষী হাজির করার উদ্যোগ নিয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়