ভারত মিয়ানমার থাইল্যান্ড : কানেক্টিভিটি প্রকল্পে যুক্ত হতে আগ্রহী বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

শুভ জন্মদিন পিতা

পরের সংবাদ

আইএমএফের ঋণ ও বাংলাদেশের করণীয়

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটিয়ে উঠতে গত ৩১ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে পিছিয়ে পড়া ও ঝুঁঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেয়া, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ পরিবেশসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করার জন্যই মূলত এই ঋণ কর্মসূচি প্রদান করা হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, একই সঙ্গে এই কর্মসূচিগুলো সেগুলো বাস্তবায়নেও সহায়তা করবে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, দুই দশমিক দুই শতাংশ সুদে ৪২ মাস ধরে মোট সাতটি কিস্তিতে এই ঋণ পাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলারের যে ক্ষণ চেয়েছে, তার মধ্যে তিন ধরনের ঋণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেভিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)। ইসিএফ এবং ইএফএফ থেকে পাওয়া যাবে ৩.৩ বিলিয়ন ও ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার। আইএমএফের নবগঠিত রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পাবে ১৪০ কোটি ডলার। এর আগে বৈদেশিক লেনদেনের খাটতি মেটাতে আইএমএফের কাছে গত বছরের ২৪ জুলাই ঋণ সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সময় ঋণের পরিমাণ জানানো হয়নি। তবে গত ১২ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার কথা উল্লেখ করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
ঋণ প্রদানকারী সংস্থা আইএমএফ ও বাংলাদেশ সরকার ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার কথা বললেও তা মঞ্জুর হয়েছে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে। অর্থাৎ চাহিদার থেকেও ২০ কোটি ডলার বেশি ঋণ সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। আইএমএফ ও আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মজুতকৃত সম্পদের একক হচ্ছে এসডিআর। আর আইএমএফ মূলত ঋণ প্রদান করে এই স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসে (এসিডিআর)। এসডিআরের বিপরীতে ডলারের মান কমে যাওয়ায় ঋণের পরিমাণ ৪৫০ থেকে বেড়ে ৪৭০ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
এদিকে ঋণ সহায়তা অনুমোদনের তিনদিনের মাথায় গত ২ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটি বাংলাদেশকে ঋণের প্রথম কিস্তি প্রদান করেছে। এদিকে আইএমএফের ঋণ শর্তে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ঋণের বদলে বাংলাদেশকে যে ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছে বর্তমান সময়ে সেগুলো পূরণের খেসারত দিতে হতে পারে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য এখন মানুষের ক্রমক্ষমতার বাইরে যাওয়া শুরু হয়েছে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের ভর্তুকি কমিয়ে ইতোমধ্যে সরকার দাম বাড়িয়েছে কয়েক দফায়, যার প্রভাব অন্যান্য জিনিসপত্রের দামের ওপরেও পড়েছে। এগুলোতে সরকার আর ভর্তুকি দিতে রাজি নয়। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারদরের কাছাকাছিই রাখা হয়েছে। আইএমএফের ঋণ সহায়তার বাকি কিস্তিগুলো পেতে সংস্থাটির দেয়া শর্তগুলো না মানলে ঋণ সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ঋণ সহায়তা যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য সরকারকে শর্তগুলো মানার পাশাপাশি দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ওপর যাতে চাপ না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সমন্বয় করতে হবে।
আইএমএফের শর্তের মধ্যে ঘুরে-ফিরে ব্যাংক, রাজস্ব ও জ্বালানি মূলত এই তিনটি খাতের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। সরকারের করণীয় হলো এই তিনটি খাতে নজর দেয়া ও শর্ত অনুযায়ী ধাপে ধাপে কাজগুলো করা। ইতোমধ্যে ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে বেশ কিছু কাজ শুরু করেছে সরকার। তবে এক্ষেত্রে বেশি পিছিয়ে আছে রাজস্ব খাত। জিডিপির তুলনায় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি করা সংস্কারের বড় কাজ। এ নিয়ে সময়বদ্ধ পরিকল্পনা থাকছে আইএমএফের শর্তে। শর্ত অনুযায়ী ঋণ খেলাপির সংজ্ঞায় পরিবর্তন চায় আইএমএফ। সরকার এটি নিয়েও ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ঋণ ইস্যুতে বাংলাদেশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে যাতে কোনোভাবেই এটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে নিচের দিকে না নিয়ে যায়।
ঋণ কার্যক্রম চলাকালে সরকারকে ঋণের সুদহারের সীমা তুলে নিতে হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ২০ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণা থেকে চারবার ঘোষণা করার প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। সঞ্চয়পত্র ও পেনশনের সুদের হিসাব বাদ দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বরাদ্দের হিসাব করতে হবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে প্রতি বছর অভ্যন্তরীণ ঋণের যতটুকু সংগ্রহ করে সরকার, তা এক-চতুর্থাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এনবিআরের অংশে কর ছাড় বাতিল করার পাশাপাশি এনবিআরের বর্তমানের আদায় প্রবণতা অনুযায়ী আগামী কয়েক বছর শুদ্ধ কর আদায় করতে হবে বাড়তি ২০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কত, তা চলতি বছরের জুনের মধ্যে হিসাব শুরু করতে হবে। ঋণ শর্তে চলতি বছরের জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা শুরু করতে হবে। এছাড়াও সরকারকে ব্যাংক খাতের বিভিন্ন আইনে হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতি বছর ব্যাংকগুলোর খারাপ ঋণের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তিন মাস পরপর জিডিপির তথ্য প্রকাশ করতে হবে। দ্রুততম সময়ে আয়কর আইন ও শুল্ক আইন প্রণয়ন করা, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন করা, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের সংশোধন এবং দেউলিয়া আইন প্রণয়ন করাসহ আইএমএফের আনুষঙ্গিক যত শর্ত রয়েছে সেটা দেশের চলমান অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।

মো. রাফিউজ্জামান লাবীব : শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ (৩য় বর্ষ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়