মাদ্রাসা কর্মচারীর কাণ্ড : জাতীয় পরিচয়পত্র ও এমপিওতে ভিন্ন তারিখ!

আগের সংবাদ

যে কারণে দলে নেই মাহমুদউল্লাহ

পরের সংবাদ

পটুয়াখালীর বাউফল : অনুমোদনহীন ভাটায় পুড়ছে কাঠ, ধ্বংস হচ্ছে কৃষিজমি

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : বাউফলের আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাশ্রা০িদ্দ গ্রামের ঘনবসতি এলাকায় কৃষিজমি দখল করে অনুমোদনহীনভাবে চলছে একাধিক ইটভাটা। কৃষি জমির মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ভাটা মালিকরা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে ইট তৈরির কাজ করে গেলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
জানা গেছে, কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ এসব ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষকরা। স্থানীয় কৃষক আ. রাজ্জাক তালুকদার গত বছর ডিসেম্বরে ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ডিসি বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সরজমিন মহাশ্রাদ্দি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের পাশে ফসলের মাঠ জুড়ে গড়ে ওঠা এইচবিসি ব্রিকস নামের ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। পাশেই স্তূপ করে রাখা হয়েছে ফসলি জমি থেকে খনন করে আনা মাটি এবং গাছের গুঁড়ি। গাছ চেরাইয়ের জন্য ভাটার মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে করাতকল। ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইনানুযায়ী জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইট প্রস্তুত করিতে পারিবেন না। তবে মহাশ্রাদ্ধিতে অবস্থিত এইচবিসি ও এমবিবি নামের দুটি ইটভাটা আদৌ কোনো লাইসেন্স কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বিগত ৩ বছর ধরে ইট তৈরি করে যাচ্ছেন। এছাড়াও এইচবিসি ব্রিকসের মালিক হানিফ উল্লাহর বিরুদ্ধে অসহায় কৃষকসহ একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয় কৃষক আ.রাজ্জাক তালুকদার বলেন, হানিফ উল্লাহর ভাটার পাশে আমার ১ একর কৃষি জমি রয়েছে। ওই জমি ভাটার কাজে ব্যবহার করতে চায় হানিফ উল্লাহ। আমি জমি দিতে রাজি না হলে রাতের আঁধারে জমিতে বিষ প্রয়োগ করে ধান নষ্ট করে জমি দখল করে নেয়। এনিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আরেক বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ফোরকান বলেন, আমাদের পৈত্রিক ভিটা ও ফসলি জমি দখল করে নিয়েছে এইচবিসি ভাটার মালিক। আমরা অসহায়।
জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে হানিফ উল্লাহ বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছি। অতি সিগগিরই অনুমোদন পেয়ে যাব।
একই অবস্থা পার্শ¦বর্তী এইচবিসি ভাটাতেও। সেখানেও ফসলি জমির মাটি ও কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ওই ইট ভাটার মধ্যেও রয়েছে গাছ চেরার করাতকল। বিএমএম ব্রিকসের পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন সিকদার বলেন, কাঠ পোড়ানো বেআইনি ঠিকই, তবে করার কিছু নেই। সারাদেশেই কাঠ পুড়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ওই ইটভাটা দুটির অদুরেই অবস্থিত মোহসেনুদ্দিন ফাজিল মাদ্রসা ও ছালেহীয়া এতিমখানা (শিশু সদন) নামের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভারি যানবাহনে করে ইট ও ইটভাটার কাঁচামাল পরিবহন করায় মহাসড়কের বেহাল দশা হয়েছে। দানবী ট্রলির ধোঁয়া ও রাস্তার ধুলোবালিতে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় জমিতে ফসল ও এলাকার ফলদ গাছের উৎপাদন ব্যাপকহারে হৃাস পচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, অচিরেই অবৈধ ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালানো হবে। বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন বলেন, ভাটা মালিকদের বৈধ কাগজপত্র দেখানোর জন্য ১ সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন ইটভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়