অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদিকে জমির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

আগের সংবাদ

চিকিৎসা গবেষণায় আগ্রহ কম : বরাদ্দ, অবকাঠামো সীমিত > প্রণোদনা স্বল্পতা > প্রাইভেট প্র্যাকটিসে মনোযোগ বেশি

পরের সংবাদ

জামালগঞ্জ কৃষি বিভাগের উদাসীনতার অভিযোগ

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অঞ্জন পুরকায়স্থ, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম হালির হাওড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে মাজরা পোকা। ফসলে পোকার আক্রমণ প্রতিহত করতে স্প্রে দিয়ে বিষ ছিটাচ্ছেন কৃষক। অসংখ্য কৃষক অবিরাম এই কার্যক্রম চালু রাখতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হচ্ছেন হাওড়ে। প্রতি বছরই এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর এর প্রভাব আরো বেশি। হাওড়ে ৬০ বিঘা জমির মালিক মুমিনপুর গ্রামের আ. জব্বারের ছেলে মো. আছান মিয়া বলেন, ১৬ হাজার টাকার ওষুধ ছিটিয়েছি ৫ জন শ্রমিক দিয়ে, তবুও নিরাশ হচ্ছি, পোকা মরছে কিনা। একই গ্রামের কবির হোসেন বলেন, ২০ বিঘা জমির ফসল রক্ষা করতে গিয়ে ৭ হাজার টাকার ওষুধ দিচ্ছি, কাজ হচ্ছে না। মফিজ আলীও ১৫ বিঘায় ৬ হাজার টাকার ওষুধ দিনমজুর দিয়ে ছিটিয়েছেন। এমরান হোসেন ও ছিদ্দিকুর রহমানের ৩৫ বিঘায় ১৮ হাজার টাকার ওষুধ দিয়ে এবং দক্ষিণ কামলাবাজ গ্রামের আমজাদ আলী (৮০) বর্গা জমি চাষ করতে এসে পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হতে দেখে ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় ধান ক্ষেতে মাথা ঠুকছেন।
কামিনীপুরের লিয়াকত আলী, হাবিবুর রহমান ও কাজল মিয়া বলেন, মাজরা পোকার আক্রমণের কথা উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে জানিয়েছি, তারা ওষুধ ছিটাইবার কথা কইছে। জামালগঞ্জের অফিসার একটা কাগজে ওষুধ লেইখা দেয়, অফিস থাইকা নগদ টাকায় কিইনা আনি। একজন সচেতন শিক্ষিত কৃষক বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার ওষুধ অফিস বিক্রি করছে, কিন্তু হাওড়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে না। কৃষকরা এখন দিশাহারা।
পাগনার হাওড়ের দক্ষিণ প্রান্তের আলীপুর গ্রামের কৃষক আসাদ আলী বলেন, এ বছর পাগনার হাওড়েও মাজরা পোকার আক্রমণ মোকাবিলায় কৃষকরা মাঠে আছেন। মহালিয়া হাওড়ের সহদেবপুর গ্রামের কৃষক দেবাশীষ তালুকদার বলেন, আমাদের হাওড়েও পোকা নিধনে মেশিন নিয়ে আছি। এই আক্রমণে এ বছর ফসল অর্ধেকের চেয়ে বেশি বিনষ্ট হবে। জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের জমি রয়েছে। ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণের। মাজরা পোকার আক্রমণের শিকার হয়েছে হালি, পাগনা ও মহালিয়া হাওড়ের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল। কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ চাইছেন কৃষকরা।
এ বিষয়ে হাওড় বাঁচাও আন্দোলন, জামালগঞ্জ উপজেলা শাখার সহসভাপতি মুমীনপুরের আ. মতলিব মিয়া বলেন, হালির হাওড়ে প্রতি বছরই মাজরা পোকার আক্রমণ হয়, এবার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কোনো কৃষি অফিসার পরামর্শ ও সান্ত¡না দিতে কৃষকের পাশে নেই, কাগজের টুকরায় ওষুধ লিখে দেন, তা আবার অফিস থেকেই গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে বেশি রাখেন। তিনি বলেন, পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কৃষকের সঙ্গে ফসলের মাঠে কৃষি অফিসারদের পরামর্শ চাই। এটা এক ফসলি ও এক মৌসুমের বোরো ফসলের এলাকা। এখন সরকারি সহযোগিতায় পোকা নিধনে স্প্রে মেশিন চাই।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. কাওসার আহম্মেদ বলেন, যারা ওষুধের দাম বেশি রাখছে তাদের বিরুদ্ধে এখনই কড়া নজরদারি রাখব। এবং মাঠ পর্যায়ে প্রত্যেক ব্লকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা যেন সার্বক্ষণিক ফসল ও কৃষকের ওপর দৃষ্টি রাখেন সেই নির্দেশনাই থাকবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে পোকার আক্রমণ বাড়ছে। উপজেলায় এই মুহূর্তে স্প্রে মেশিনের অভাব রয়েছে। স্প্রে মেশিন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহসহ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সহযোগিতা করতে কৃষি অফিসারদের অবস্থান থাকবে। বৃষ্টি না হওয়ায় ও নদী-নালা, খাল-বিল শুকানোর কারণে খরা লাগানো ফসলে পানি দিতে না পারায় এর প্রভাব বাড়ছে। একটু বৃষ্টি হলেই পোকা আক্রমণের সমস্যা কেটে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়